শুটিংয়ে ভিক্ষা চাওয়ার একটি দৃশ্যে। ছবি: পরিচালকের সৌজন্যে

চিনতে পারেনি কেউ! ফার্মগেটে ভিক্ষা করে ৫০০ টাকা পেয়েছিলেন ‘অ্যালেন স্বপন’

ক্যারিয়ারে নানা চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে একজন শিল্পীর নানা অভিজ্ঞতা হয়। কিন্তু শুটিংয়ে দর্শক যে একেবারেই চিনতে পারবেন না, চাইলেই ভিক্ষা দেবেন, সেটা কখনোই ভাবেননি অভিনেতা নাসির উদ্দিন খান। তেমন একটি ঘটনাই তাঁর সঙ্গে ঘটেছিল ফার্মগেটে ওয়েব ফিল্মের শুটিংয়ে।

কখনো গ্যাংস্টার, কখনো সিরিয়াল কিলার, কখনো স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিসহ নানা বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয় করে আলোচিত হয়েছেন নাসির উদ্দিন খান। বিশেষ করে ওটিটি জগতে তিনি ‘অ্যালেন স্বপন’ নামে পরিচিতি পেয়েছেন। তবে এবারই প্রথম তাঁকে ভিক্ষুকের চরিত্রে দেখা গেছে। চরিত্রের সাজসজ্জা এতটাই নিখুঁত ছিল যে দর্শকদের অনেকে মনে করেছিলেন তিনি সত্যিকারের ভিক্ষুক।

সম্প্রতি নাসির উদ্দিন খান এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, বাজেট কম থাকায় বড় পরিসরে আয়োজন করে কাজটি করা সম্ভব ছিল না। আবার জনসমাগম বেশি এমন জায়গায় শুটিং করতে গেলে পথচারীরা ভিড় করেন, ঘিরে ধরেন। সেই সময় শুটিং থেকে পরিকল্পনা করা হয় ফার্মগেট এলাকায় শুটিং হবে। আর ক্যামেরা থাকবে দূরে লুকানো।
ফার্মগেট ফুটওভারের ওপরে ছিল ক্যামেরার সেটআপ। এই অভিনেতাকে আগেই বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল ভিক্ষুক হিসেবে কোনো কোনো জায়গা দিয়ে হেঁটে যাবেন। অন্যদিকে ওপর থেকে তাঁকে ক্যামেরা অনুসরণ করবে।

নাসির বলেন, ‘চরিত্রটি নিয়ে কিছু প্রস্তুতি ছিল। প্রথম দিনের শুটিংয়ের ওই মুহূর্তে আমার গেটআপ চরিত্রের কাছাকাছি ছিল। ক্যামেরা নিয়ে পরিচালক টিমসহ দূরে। আমাকে বলে দেওয়া হলো, আমার মতো করে চরিত্রটি প্লে করার। আমাকে পাঠিয়ে দেওয়া হলো ভিক্ষা করতে। মানুষের কাছে গিয়ে ভিক্ষা চাইছিলাম।’

মজার ব্যাপার হচ্ছে, সেদিন এই অভিনেতা ভিক্ষা চাইতে গিয়ে লক্ষ করেন, অনেকেই অ্যাভয়েড করে গেলেও কেউ কেউ তাঁকে টাকা দিচ্ছেন। এভাবে জমে যায় বেশ কিছু টাকা। প্রথম দৃশ্যের অভিনয় করে ভিক্ষা হিসেবে কত টাকা পেয়েছিলেন?

এমন প্রশ্নে নাসির হেসে বলেন, ‘প্রথম দৃশ্যেই একবার ঘুরে এসে দেখি অনেকগুলো টাকা জমেছে। পরে প্রোডাকশনের ছেলেকে গুনতে দিই। দেখা যায় পাঁচ শর মতো টাকা পেয়েছি। তখন মনে হলো, বাহ্‌ ভালো লাভ তো। কম পরিশ্রমে, কম সময়ে ভিক্ষা করে তাহলে ভালো টাকা পাওয়া যায়, এটা ভাবছিলাম।’

তবে শুটিংয়ে মানুষের কাছে হাত পেতে বিরূপ অভিজ্ঞতাও হয়েছে। ‘এটা সহজ পদ্ধতি ঠিক। চাইলে মানুষ মূল্যবোধ বিকিয়ে করতে পারে, কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ এর সঙ্গে জড়িত না। কিছু না হলে যে কেউ এভাবে হাত পাততে পারবে না। কারণ, এখানে অসম্মানের ব্যাপার রয়েছে। এটার মধ্যে একটা অসম্মানও রয়েছে। আরেকজনের কাছে হাত পাততে হয়,’ বলেন নাসির।

‘নয়া নোট’ নামে একটি ওয়েব সিরিজের শুটিংয়ে এমন ঘটনা ঘটেছে। এটি পরিচালনা করেছেন অনন্য প্রতীক চৌধুরী। তিনি জানান, শুটিংয়ে ভিক্ষার চরিত্রে পাওয়া টাকাগুলো স্মৃতি হিসেবে রেখে দেওয়া হয়েছে। ভিক্ষার ‘নয়া নোট’ ঘিরে এগিয়ে চলে গল্প। দিন শেষে জীবনের নানা উপলব্ধির কথাই গল্পে সহজ করে বলার চেষ্টা করা হয়েছে ওয়েবে।

এ ওয়েব সিরিজে বিভিন্ন চরিত্রে আরও অভিনয় করেছেন এ কে আজাদ সেতু, সমু চৌধুরী, দীপা খন্দকার, পার্থ শেখ, নওবা তাহিয়া প্রমুখ। ওয়েব সিরিজটি আইস্ক্রিনে মুক্তি পেয়েছে।