বাদ্যযন্ত্র বাজানোর সঙ্গে মস্তিষ্ক ভালো থাকার কি সম্পর্ক আছে
মানুষের জীবনে তারুণ্য থেকে বার্ধক্যে যাওয়া একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমে আসে। বিজ্ঞানীরা মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা ধরে রাখার এক কার্যকর উপায় জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, বাদ্যযন্ত্র বাজানোর কারণে দীর্ঘদিন মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতায় তারুণ্যের ভাব থাকে। কানাডা ও চীনের একদল বিজ্ঞানীর পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা জীবনের একটা বড় সময় ধরে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়েছেন, তাঁদের মস্তিষ্ক বয়সের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দুর্বল হয় না। বয়স হলেও মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বেশি কার্যকর ও তীক্ষ্ণ থাকে।
বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা ধরে রাখার এই কৌশলকে কগনিটিভ রিজার্ভ বলে। বাদ্যযন্ত্র বাজানোর কারণে মস্তিষ্কে একধরনের কগনিটিভ রিজার্ভ বা জ্ঞাননির্ভর দক্ষতা মনে রাখার অভ্যাস তৈরি হয়। মস্তিষ্কের একটি ব্যাকআপ সিস্টেম বলা হয় একে। এই কৌশল ভবিষ্যতে মস্তিষ্কের দক্ষতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। বয়স বাড়লে যেন মস্তিষ্ক কম শক্তি খরচ করে কাজ করতে পারে, তার জন্য এই কাঠামো কাজ করে। সপ্তাহে ১২ ঘণ্টা বাদ্যযন্ত্র বাজালে এমন কাঠামোর বিকাশ ঘটে। গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা বাদ্যযন্ত্র বাজান না, তাঁদের তুলনায় বয়স্ক বাদ্যযন্ত্রী ও শিল্পীরা কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে অনেক সহজে কথা বুঝতে পারেন। তাঁদের মস্তিষ্ক মনোযোগ ধরে রাখার জন্য কম শক্তি ব্যয় করে। তাঁদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা তরুণদের মস্তিষ্কের মতোই দেখা যায়। এ বিষয়ে চায়নিজ একাডেমি অব সায়েন্সেসের বিজ্ঞানী ই ডু বলেন, বছরের পর বছর বাদ্যযন্ত্র বাজানোর প্রশিক্ষণের কারণে একজন বয়স্ক বাদ্যযন্ত্রী বা সংগীতশিল্পীর মস্তিষ্ক সূক্ষ্মভাবে সুরযন্ত্রের মতো কাজ করে।
গবেষণায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের তিনটি ভিন্ন মাত্রার কোলাহলের মধ্যে চারটি শব্দ শোনানো হয়। এই সময় এফএমআরআই মেশিনের মাধ্যমে তাদের মস্তিষ্কের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হয়। গবেষণায় দেখা যায়, যাঁরা বয়স্ক, কিন্তু সংগীতের সঙ্গে যুক্ত নন, তাঁদের মস্তিষ্কের অডিটরি ডোরসাল স্ট্রিম অংশে অতিরিক্ত কার্যকলাপ দেখা যায়। যার অর্থ, বয়সজনিত জ্ঞানীয় ঘাটতি পূরণ করতে তাঁদের মস্তিষ্ককে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়েছে। আর বয়স্ক বাদ্যযন্ত্রী বা সংগীতশিল্পীদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, তাঁদের মস্তিষ্কের কার্যক্রম তরুণদের মস্তিষ্কের মতোই ছিল। তাঁদের মস্তিষ্কের ডান গোলার্ধে কার্যকলাপ কম দেখা গেছে। এই জায়গা কোলাহলের মধ্যে শব্দ বুঝতে পারার দক্ষতার সঙ্গে সম্পর্কিত। নিয়মিত বাদ্যযন্ত্র বাজানো বয়স্কদের মস্তিষ্কের বাঁ প্রি-সেন্ট্রাল গাইরাসও তরুণদের মস্তিষ্কের মতো। মস্তিষ্কের এই অংশ ডান হাত ও হাতের নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণ করে।
বাদ্যযন্ত্র বাজানোর মতো অভ্যাস ডিমেনশিয়ার মতো রোগ প্রতিরোধে একটি কার্যকর থেরাপি হিসেবে কাজ করতে পারে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। গবেষণায় দেখা গেছে, বয়স বাড়ার কারণে শ্রবণ ও চিন্তার দক্ষতা কমে আসে। এটি স্বাভাবিক বার্ধক্যের একটি অংশ। তবে এই প্রক্রিয়াকে ধীর করা সম্ভব। ইমেজিং নিউরোসায়েন্সে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণায় বলা হয়েছে, মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে বাদ্যযন্ত্র বাজানো শুরু করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো বয়স নেই।
সূত্র: ডেইলি মেইল
https://www.dailymail.co.uk/sciencetech/article-15054439/simple-hobby-boosts-brain-function-life.html