ভন কারমেন ঘূর্ণিছবি: নাসা

ভন কারমেন ঘূর্ণি কী

অ্যান্টার্কটিকার প্রায় ৯০০ মাইল উত্তরে দক্ষিণ ভারত মহাসাগরের বিচ্ছিন্ন আগ্নেয় দ্বীপ হার্ডের আকাশে থাকা ঘন মেঘের মধ্যে ১০টি ঘূর্ণমান শূন্যস্থানের ছবি ২০১৬ সালে মহাকাশ থেকে তোলে নাসা। ছবিতে দেখা যায়, একেকটি কালো দাগের দৈর্ঘ্য গড়ে ৮ মাইল প্রশস্ত। অস্বাভাবিক এই বায়ুমণ্ডলের গঠন পর্যালোচনা করে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের এক বায়ুঘূর্ণির খোঁজ পাওয়া গেছে, যা ভন কারমেন ঘূর্ণি নামে পরিচিত। বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, বাতাস যখন একটি লম্বা বাধার চারপাশে প্রবাহিত হয়, তখন ঘূর্ণমান বায়ুস্রোত তৈরি করে।

হার্ড দ্বীপের চরম পরিবেশ কীভাবে বিরল বায়ুমণ্ডলকে প্রভাবিত করে, তার উদাহরণ হচ্ছে মেঘের মধ্যে থাকা ১০টি বিশাল শূন্যস্থান। এই জনবসতিহীন অস্ট্রেলিয়ান ভূখণ্ডটি পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্গম ও ঝড়বিধ্বস্ত অঞ্চলের মধ্যে একটি। এখানে সব সময় শক্তিশালী পশ্চিমা বাতাস দেখা যায়। দ্বীপে অবস্থিত মাওসন পিক একটি ৯ হাজার ফুট সক্রিয় আগ্নেয়গিরি। এ কাঠামোই বায়ুপ্রবাহ ও মেঘ গঠনকে ব্যাহত করে। আগ্নেয়গিরির ভূখণ্ড, প্রবল বাতাস ও দ্বীপের বিচ্ছিন্নতার সংমিশ্রণের কারণে আশপাশে অস্বাভাবিক মেঘের ধরন দেখা যায়। নাসার স্যাটেলাইটের ছবিতে যে দৃশ্য দেখা গেছে, তা বেশ বিরল।

বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, যখন দ্রুতগতিতে চলমান বাতাস কোনো বাধার মুখোমুখি হয়, তখন ভন কারমেন ঘূর্ণি তৈরি হয়। এ ধরনের ঘূর্ণির নামকরণ করা হয়েছে পদার্থবিদ থিওডর ভন কারমেনের নামে। এমন ঘূর্ণি মাঝেমধ্যে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে, যেমন ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জ বা গুয়াদালুপ দ্বীপে দেখা যায়। হার্ড দ্বীপের ওপর ঘূর্ণির ঘন প্যাটার্নে বৃত্তাকার ফাঁকা জায়গা থাকে।

বেশির ভাগ ভন কারমেন ঘূর্ণি মসৃণ ও সারিবদ্ধভাবে সুসংগত উপায়ে একদিকে প্রবাহিত হয়। হার্ড দ্বীপের ওপর যে গঠন দেখা যায়, সেখানে ৯০ ডিগ্রি মাঝখানে তীব্রভাবে বাঁক দেখা যায়। সম্ভবত প্রতি ঘণ্টায় ৫০ মাইলের বেশি বেগে তীব্র পশ্চিমা বাতাসের কারণে এমন অবস্থা দেখা যায়। একসঙ্গে একাধিক ঘূর্ণি হয়ে থাকে। ভন কারমেন ঘূর্ণি ছোট আগ্নেয়গিরির ভূমির সঙ্গে বায়ুমণ্ডলীয় প্রবাহ কীভাবে মিথস্ক্রিয়া করে, তা বিশ্লেষণ করার একটি বিরল সুযোগ করে দিয়েছে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।

সূত্র: লাইভ সায়েন্স