ফরিদা পারভীনের সঙ্গে বিউটি। ছবি: সংগৃহীত

সারারাত বসে থাকতাম তার গান শোনার জন্য: বিউটি

বাংলাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন। লালনের গানকে তিনি সারা বিশ্বের কাছে তুলে ধরেছেন। একজীবন শুধু গান করেই গেছেন। একুশে পদকসহ ঘরে ‍তুলেছেন অনেক পুরস্কার।

গুণী এই শিল্পীকে নিয়ে দ্য ডেইলি স্টারের কাছে স্মৃতিচারণ করেছেন 'ক্লোজআপ ওয়ান'-খ্যাত সংগীতশিল্পী নাসরিন আক্তার বিউটি।

বিউটি বলেন, 'আমার বয়স যখন পাঁচ বছর, তখন থেকেই ফরিদা ম্যাডামকে চিনি। তার বাড়ি কুষ্টিয়ায়, আমার বাড়িও সেখানে। ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে লালন সাঁইজির মাজারে যেতাম গান শুনতে। আমার বেশি আগ্রহ ছিল ফরিদা ম্যাডামকে দেখব। সেই ছোটবেলাতেই আমার সৌভাগ্য হয়েছিল সামনে থেকে তার গান শোনার। তখন থেকেই আমি তার ভক্ত।'

'সেসময়ই বাবা আমাকে ফরিদা ম্যাডামের লালন সংগীতের একটি ক্যাসেট কিনে দিয়েছিলেন। এরপর থেকে আমি গভীরভাবে তার গানের প্রেমে পড়ি। লালনের গান ভালোবাসতে শুরু করি। তিনি এমন একজন কিংবদন্তি, এত বড় একজন সাধক, যার তুলনা তিনি নিজেই', বলেন তিনি।

বিউটি বলেন, 'তিনি প্রতিটি গান বুঝে, জেনে গাইতেন। যতদূর জানি, তিনি লালনের অনুসারী ছিলেন। এটা তো বড় ব্যাপার। এ দেশে তার মতো লালনের গানের বড় মাপের শিল্পী একজনই। শহর, গ্রাম, বন্দর সর্বত্র তার জনপ্রিয়তা। মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন ভীষণ।'

'আমার প্রজন্মের যারা লালনের গান করি, তারা মূলত ফরিদা ম্যাডামের গান শুনেই শুরু করেছি। দেশের অনেক শিল্পীই হয়তো এটা করেছেন। আমরা সবসময় তাকে শ্রদ্ধায় স্মরণ করব', বলেন এই শিল্পী।

বিউটি বলেন, 'লালনের গানকে তিনি এ দেশের সব শ্রেণির শ্রোতার কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছেন। সেই সঙ্গে পৃথিবীর বহ দেশে লালনের গানকে পৌঁছে দিয়েছেন। এটি একটি রেকর্ডও। লালন সাঁইজির মাজারে বড় বড় অনুষ্ঠানে তিনি অংশ নিতেন বলেই যেতাম। সারারাত বসে থাকতাম তার গান শোনার জন্য।'

'এই গুণী শিল্পীর সান্নিধ্য পাই অনেক পরে। ক্লোজআপ ওয়ান প্রতিযোগিতায় আসার পর। এ ছাড়া, বিটিভিতে তার পরিচালনায় গান করেছি অনেকবার। অচিন মানুষ নামে একটি অনুষ্ঠান করতেন তিনি। অচিন মানুষ নামে একটি সংগঠনও আছে। সেই অনুষ্ঠানে গান করতে গিয়ে কত স্মৃতি যে জমেছে', যোগ করেন তিনি।

বিউটি বলেন, 'সত্যি কথা বলতে তাকে খুব ভয় পেতাম। সেই সঙ্গে ভীষণ শ্রদ্ধা ও সম্মান করতাম। তার অনুষ্ঠানে গান করতে গিয়ে কত ভালোবাসা ও আদর যে পেয়েছি, সারাজীবন তা মনে রাখব। শেষ জীবনে আমাকে অনেক আদর করতেন। অনেক ভালোবাসতেন।'

'শেষ দেখা হয়েছিল প্রায় বছরখানেক আগে, অচিন মানুষ অনুষ্ঠানের শুটিংয়ে। দেখার সঙ্গে সঙ্গেই জড়িয়ে নেন, আদর করেন, আশীর্বাদ করেন। তারপর ছবি তুলি। এখন তিনি অনেক দূরে। দেশের বড় সম্পদ ছিলেন। ফরিদা পারভীনের অবদান সহজে পূরণ হওয়ার নয়। গান দিয়েই তিনি বেঁচে থাকবেন', বলেন তিনি।