মোহন শরীফশিল্পীর সৌজন্যে

মোহন ও ৪০ নতুন গান

‘যন্ত্রণা’, ‘মোমবাতি’ আর ‘প্রজাপতি’ গানে নিজেকে চিনিয়েছেন মোহন শরীফ। কৈশোরের প্রেম, বিষাদ আর হৃদয়ভাঙা সুরে আলাদা পরিচিতি পেয়েছেন এই তরুণ সংগীতশিল্পী। মোহনের অনুরাগীদের অনুযোগ, তাঁর গানের সংখ্যা হাতে গোনা। অনুরাগীদের অনুযোগ আমলে নিয়েছেন মোহন—২টি কিংবা ৪টি নয়, ৪০টি নতুন গান নিয়ে আসছেন শিল্পী।

গত বুধবার প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মোহন জানান, ৪০টি গানের মধ্যে ‘গেট আপ’ শিরোনামে একটি গান প্রকাশ করেছেন। আরও আটটি গানের ভিডিও চিত্রের দৃশ্য ধারণ করেছেন, একে একে প্রকাশ করবেন। তিনি বলেন, ৪০টি গানের রেকর্ড শেষ করেছেন। প্রতি শুক্রবার মিউজিক ভিডিওর শুটিং করছেন। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব গান প্রকাশ করা হবে।

‘গেট আপ’ ইউটিউবে প্রকাশের পর শ্রোতারা প্রশংসা করছেন। রাহাত মোস্তাফিজের সঙ্গে যৌথভাবে গানটির কথাও লিখেছেন মোহন, ভিডিও চিত্রও পরিচালনা করেছেন তিনি। গানের ভিডিও দেখে অনেকে বলছেন, ভিডিওটি দেশের বাইরে শুট করা হয়েছে। একজন লিখেছেন, কাজটা দারুণ হয়েছে।

‘গানের ভিডিও চিত্রে রোলস রয়েস ব্যবহার করা হয়েছে। শুটিংয়ের কয়েক দিন পর সেই গাড়িটা দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। অনেকে বলছেন, ভিডিওটা বিদেশে করা। আসলে ওটা দেশেই করা হয়েছে,’ বলেন মোহন শরীফ। ছোটবেলা থেকেই গাড়ি নিয়ে আলাদা আগ্রহ। ফলে মোহনের গানের ভিডিও চিত্রে নানা রকম গাড়ির ব্যবহার দেখা যায়।

বাংলা গানের শ্রোতাদের বাইরে আন্তর্জাতিক শ্রোতাদের সামনে নিজের গানকে তুলে ধরতে চান মোহন। ছোটবেলা থেকেই আন্তর্জাতিক শ্রোতাদের কাছে পৌঁছানোর ইচ্ছা ছিল। সেই জায়গায় নিজেকে প্রমাণের জন্য ইংরেজি গান নিয়ে হাজির হয়েছেন। মোহন মূলত হিপহপ গান করেন। এসব গানও হিপহপ ঘরানার।

তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই হিপহপ শুনে বেড়ে উঠেছি। হিপহপ থেকেই মিউজিকের টেস্টটা এসেছে। পরে পড়াশোনা করতে কানাডায় গিয়ে হিপহপ আর্টিস্টদের সঙ্গে পরিচয়। হিপহপ জনরার সঙ্গে মিশে গেছি।’

মোহন জানান, ২১ বছরের পর থেকে হিপহপ গান লেখা শুরু করেন তিনি। তাঁর ভাষ্য, ‘ওই সময় থেকে আমি পুরোটা হিপহপে ঢুকে গেছি। হিপহপের ভেতরে বেশ কটি জনরা আছে। আমার একটা গান আরেকটা গানের সঙ্গে মিলবে না।’

‘যন্ত্রণা’, ‘মোমবাতি’, ‘প্রজাপতি’র বাইরে ‘জ্বলন্ত আগুন’, ‘মূর্তি’সহ বেশ কয়েকটি গান স্পটিফাইয়ে পাওয়া যায়। তবে সেগুলো মোহন প্রকাশ করেননি। বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই গানগুলো আসলে রেকর্ড করা হয়নি। গানগুলো বন্ধুদের ফোনে ফোনে আছে। কোনো গান করলে বন্ধুদের পাঠাই। আবার বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় নিয়মিত গান করেছি। সেখান থেকেই গানগুলো প্রকাশিত হয়েছে।’

‘জ্বলন্ত আগুন’, ‘মূর্তি’, ‘আমি দোষ দিব কারে’সহ বেশ কয়েকটি বাংলা গান প্রকাশের পরিকল্পনাও তাঁর রয়েছে। আগামী বছরের মে মাসের মধ্যে ইউটিউবে এসব গান আসবে। তবে অ্যালবাম প্রকাশের কোনো পরিকল্পনা নেই। ‘অ্যালবামের কোনো পরিকল্পনা করছি না। ইউটিউবে নিয়মিত গান প্রকাশ করব। আমার সব গানই ইউটিউবে পাওয়া যাবে,’ বলেন তিনি।

মৌলিক গানে নিয়মিত হলেও কনসার্টে মোহনকে খুব একটা পাওয়া যায় না। বিষয়টি জানতে চাইলে মোহন বলেন, ‘কনসার্ট কম করি; কারণ, মিউজিক বানানোর প্রতি আমার আসক্তি রয়েছে। আমি এখন যদি গিটার বাজিয়ে শো করি, তাহলে হবে না।’
শ্রোতা হিসেবে আর্টসেলের গান মোহনকে ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করে। শচীন দেববর্মন, নুসরাত ফতেহ আলী খান, রাহাত ফতেহ আলী খান, অর্ণব, জন কবিরের গান শুনে বেড়ে উঠেছেন তিনি।

মোহনের জন্ম সুইজারল্যান্ডের জুরিখে। বাবা (শরীফ সান্টু), মা (শরীফ মনিকা) ও বড় ভাইয়ের (শরীফ মিরন) সঙ্গে জুরিখে থাকতেন। ছয় বছর বয়সে ঢাকায় চলে আসেন মোহন।

ঢাকার একটি বেসরকারি স্কুল–কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। পরে ঢাকার দুটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও দু-তিন দিনের বেশি ক্লাস করেননি। ২০১৯ সালে কানাডায় পড়তে যান। ভিএফএক্স নিয়ে পড়াশোনা করেছেন, পড়াশোনা শেষ করে ঢাকায় ফিরেছেন।