প্রস্তুতি নিয়ে আক্ষেপ, বিশ্বকাপে ‘কিছু’ ম্যাচ জিততে চায় বাংলাদেশ

প্রস্তুতি নিয়ে আক্ষেপ, বিশ্বকাপে ‘কিছু’ ম্যাচ জিততে চায় বাংলাদেশ

দ্বিতীয়বারের মতো ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে আগামীকাল দেশ ছাড়বে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। আগামী ২রা অক্টোবর কলম্বোয় পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে নিগার সুলতানা জ্যোতিদের বিশ্বকাপ মিশন। গতকাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিক ফটোসেশনের পর সফর-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ নারী দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানার কণ্ঠে বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টের আগে কোনো আন্তর্জাতিক সিরিজ খেলতে না পারার আক্ষেপ শোনা গেল বারবার। আর নিজেদের লক্ষ্য নিয়ে অধিনায়ক বলেন, বিশ্বকাপে কিছু ম্যাচ জিততে চায় দল।

গত ১৩ই এপ্রিল নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের মাটিতে সেই ম্যাচের পর আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা হয়নি মারুফা-নাহিদাদের। গত দুই মাস ধরে এটা নিয়েই আলোচনা ছিল ক্রিকেট পাড়ায়। তবে বিসিবি চেষ্টা করেও নারী দলের জন্য আন্তর্জাতিক সিরিজ আয়োজন করতে পারেনি। এ নিয়ে আক্ষেপ থাকলেও জ্যোতি বলেছেন, অনুশীলন ক্যাম্পের ঘাটতিটা দূর করার চেষ্টা করেছেন তারা। জ্যোতি বলেন, ‘অবশ্যই বড় দলের সঙ্গে খেলতে পারলে ভালো হতো। আদর্শ প্রস্তুতি হয়তো হয়নি। বাংলাদেশে যত ধরনের ফ্যাসিলিটি আছে, সব কটি আমরা পেয়েছি। এখন পর্যন্ত আমরা যতগুলো ক্যাম্প করেছি, সব সুযোগ-সুবিধা পেয়েছি। যেটা হয়নি, সেটা নিয়ে চিন্তা করছি না। যেভাবে প্রস্তুত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি, আমার মনে হয় ক্রিকেটাররা সর্বোচ্চ দেওয়ার চেষ্টা করেছে।’

কোচ সারোয়ার ইমরান কয়েকদিন আগে দৈনিক মানবজমিনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন মেয়েরা বিশ্বাস করে সেমিফাইনাল খেলা সম্ভব। গতকাল অবশ্য বললেন তারা কিছু ম্যাচ জেতার জন্য যাচ্ছেন। সারোয়ার ইমরান বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ম্যাচ বাই ম্যাচ খেলা ও ভালো খেলা। আমাদের দুটি ম্যাচে ভালো সুযোগ আছে, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। এ ছাড়া অন্যান্য দলের সঙ্গেও। আমরা কাউকে বড় করে দেখছি না। প্রতিটি ম্যাচই জেতার জন্য খেলবো। গত বিশ্বকাপে আমরা পাকিস্তানকে হারিয়েছি। এবার আরও কিছু ম্যাচ জেতার জন্য যাচ্ছি।’

বিশ্বকাপের প্রস্তুতি পর্বে ছেলেদের অনূর্ধ্ব-১৫ দলের বিপক্ষে সিরিজ খেলে জাতীয় দল। সব ম্যাচেই হেরেছে জ্যোতির দল। তিনি অবশ্য বলেছেন, তারা অনূর্ধ্ব-১৫ ছেলেদের দলের বিপক্ষে পূর্ণশক্তির দল নামাননি। সঙ্গে স্বীকার করেছেন, তারা নিজেরাও পারেননি প্রত্যাশা অনুযায়ী খেলতে। তবে কোচ সারোয়ার বলেন, ‘আমরা কিন্তু ওদের সঙ্গে ৪৯ রানেও অলআউট হয়েছি, বিকেএসপিতে। দিনে দিনে আমাদের উন্নতি হয়েছে। অনূর্ধ্ব-১৫ দলের যে ফিল্ডিং, সেখানে আমরা ধরা খেয়েছি বলা যায়। ওদের বোলিং, ফিল্ডিং খুব ভালো ছিল।’
জ্যোতি বলেন খুব বেশি আন্তর্জাতিক সিরিজ খেলতে না পারায় ব্যাটারদের জন্য ঘাটতি থেকেই যায়। তিনি বলেন, ‘আমরা একটি সিরিজ খেলেছি, এরপর তিন-চার মাস আর খেলিনি। একটি ব্যাটিং ইউনিটকে ভালো উইকেটে নিয়মিত প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলতে হয়। পাকিস্তানে যখন খেলেছিলাম, এক ম্যাচ বাদে আমরা সব ম্যাচে দুই শর বেশি রান করেছি, যদিও সাধারণত আমাদের গড় ১৮০।
সামনে চ্যালেঞ্জ আছে, কিন্তু আইসিসি টুর্নামেন্টে ভালো উইকেটে খেলার জন্য এটা দারুণ সুযোগ।’ এবারের নারী বিশ্বকাপ এবার হবে ভারত ও শ্রীলঙ্কায়। ২রা অক্টোবর কলম্বোয় পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশের মেয়েরা। লীগ পর্বে বাংলাদেশের বাকি ছয়টি ম্যাচই ভারতে। মূল বিশ্বকাপ শুরুর আগে শ্রীলঙ্কা আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবেন মেয়েরা। এ প্রসঙ্গে সারোয়ার বলেন, ‘সেখানে আমরা দলকে আবার পর্যালোচনা করতে পারব, ভিন্ন কম্বিনেশন চেষ্টা করতে পারব। আমরা দলের প্রতিটি দিক নিয়ে আলোচনা করছি। আমরা দুর্বলতাগুলো কাটানোর চেষ্টা করছি। অধিকাংশ ট্রেনিং সেশনে ম্যাচ সিনারিও নিয়েও কাজ করেছি।’

বিশ্বকাপ সামনে রেখে বিসিবির পাওয়ার হিটিং কোচ জুলিয়ান উডের সঙ্গেও কাজ করার সুযোগ হয়েছে মেয়েদের। জ্যোতি ইতিবাচকভাবেই নিচ্ছেন সেটাকে। তবে সঙ্গে এও বলছেন এত সময়ে খুব বেশি উপকার হয় না। তিনি বলেন, ‘এত অল্প সময়ে অত বেশি কাজ করা যায় না। তবু বলব যে ভালো অভিজ্ঞতা। উনি পাওয়ার হিটিং শেখাতে চেয়েছেন। তবে এত অল্প সময়ে আসলে মানিয়ে নেওয়াটা কঠিন। আমরা যে ফরম্যাট খেলতে যাচ্ছি, অবশ্যই সেখানেও পাওয়ার হিটিং দরকার আছে। ছোট-ছোট কিছু কাজ, যেগুলো তিনি করে গেছেন, ক্রিকেটাররা সেগুলো ব্যবহার করতে পারলে অবশ্যই ম্যাচে অনেক কাজে লাগবে।’