চ্যালেঞ্জ কাপে কিংসের দ্বিতীয় শিরোপা, নাকি মোহামেডানের প্রথম
‘একটাই ফাইনাল, জিততেই হবে’, বসুন্ধরা কিংস অধিনায়ক তপু বর্মন প্রত্যয়ী কণ্ঠে জানালেন চ্যালেঞ্জ কাপের শিরোপা ধরে রাখার আকাঙ্ক্ষা। মোহামেডানের অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিঠু চান, গতবারের ব্যর্থতার মধুর প্রতিশোধ নিয়ে সাফল্যের উচ্ছ্বাসে ভাসতে। দুই দলের মরিয়া চাওয়ার মাঝে এক ম্যাচের এই শিরোপা লড়াই ঘিরে ছড়াচ্ছে রোমাঞ্চ।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে শুক্রবার বেলা ২টা ৩০ মিনিটে মাঠে গড়াবে ম্যাচটি। গতবার মোহামেডানকে ২-১ গোলে হারিয়ে প্রথম আসরের ট্রফি উঁচিয়ে ধরেছিল কিংস।
নিয়ম অনুযায়ী প্রিমিয়ার লিগ ও ফেডারেশন কাপের চ্যাম্পিয়নদের নিয়ে হচ্ছে এই ফাইনাল। এবার মোহামেডান খেলছে লিগ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে, কিংস ফেডারেশন কাপ জয়ী।
এ মাসের শুরুতে নেপালের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের প্রীতি ম্যাচ থাকায় দুই দলের অধিকাংশ খেলোয়াড় ছিলেন খেলার মধ্যে। তবে প্রাক মৌসুমের প্রস্তুতির বিচারে এগিয়ে কিংস। দলটি বরাবরই প্রস্তুতির শুরুটা করে আগেভাগে। সেখানে ব্যতীক্রম মোহামেডান; দলটির কোচ আলফাজ আহমেদ পুরো স্কোয়াড নিয়ে অনুশীলন করতে পেরেছেন মাত্র দিন চারেক!
কিংসের মতো মোহামেডানের প্রস্তুতির জন্য নিজস্ব মাঠও নেই। বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে আলফাজের কণ্ঠে তাই ভর করল অসহায়ত্ব। তবে, মাঠের লড়াইয়ে সেরাটা নিংড়ে দেওয়ার আশাবাদ তিনি জানালেন আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে।
“যেহেতু চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াই, তবে আমি টিমটা পেয়েছি অল্প কিছু দিন, তারপরও আত্মবিশ্বাস আছে যে, ফাইনালে আমরা শিরোপার জন্যই খেলব। বসুন্ধরাকে সম্মান দিতে হবে, তারা আমাদের চেয়ে ভালো দল। গত পাঁচ-ছয় মৌসুম তারা সবসময় আমাদের চেয়ে ভালো দল গড়ে। বাংলাদেশে তারা উঁচু মানের কোচ আনে। এই কোচও ভালো, হাই-প্রোফাইলের।”
“জাতীয় দলের খেলা থাকার কারণে ১০ জন খেলোয়াড় পেয়েছি মাত্র তিন দিন। একারণে ট্রেনিং করাতে পারিনি। এই জায়গাটায় আমরা পিছিয়ে। আর (মাঠের অভাব) এটা মোহামেডানের একটা ঐতিহ্য, বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা এর সাথে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। সমাধান তো নাই।”
নিজস্ব মাঠ নেই বলে মোহামেডানের স্বপ্নটা নেই হয়ে যাচ্ছে না। অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিঠুর কণ্ঠে তারই স্ফুরণ।
“আসলে আমাদের এই ম্যাচের লক্ষ্য চ্যাম্পিয়ন হওয়া। গতবার আমরা বসুন্ধরার কাছে হেরেছি। এবার আমরা চাই শিরোপা ফিরে পেতে। আসলে অধিনায়ক হিসেবে বাড়তি চাপ থাকবেই। তবে আমি অধিনায়ক হলেও সবাইকে বলেছি, শুধু আমি ক্যাপ্টেন নই, সবাই ক্যাপ্টেন। সবাই যদি দায়িত্ব নিয়ে খেলে, তাহলে ইনশাল্লাহ আমরা চ্যাম্পিয়ন হবো।”
লিগের মুকুট হারানো, এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে ব্যর্থ হওয়া, সব মিলিয়ে কিংসের সময়টা ইদানীং ভালো যাচ্ছে না। সাফল্যের স্রোতে ফিরতে অনেক ঝক্কি-ঝামেলা পেরিয়ে তারা ডাগআউটে আনতে পেরেছে আর্জেন্টাইন কোচ মারিও গোমেসকে, যার হাত ধরে মালয়েশিয়ার ক্লাব জায়ান্ট জোহর দারুল তাজিম জিতেছিল এএফসি কাপের শিরোপা।
চ্যালেঞ্জ কাপ দিয়ে প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে কিংসের ডাগআউটে যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে গোমেসের। ৬৮ বছর বয়সী এই আর্জেন্টাইন প্রথম মিশন সামনে রেখে দলকে বুঝিয়ে দিয়েছেন নিজের মনোভাব।
“প্রস্তুতি ভালো। কোনো সমস্যা নাই, কেননা, আমাদের ছেলেরা জাতীয় দলে খেলার মধ্যে ছিল। রোববার থেকে আমরা সবাইকে নিয়ে অনুশীলন করছি। শুক্রবারের ম্যাচ নিয়ে আমরা প্রস্তুত। ফুটবলে, যদি তুমি জয় পাও, তুমি সেরা, না জিতলে সেরা নও।”
কিংসের হয়ে চারটি লিগ, দুটি স্বাধীনতা কাপ ও একটি ফেডারেশন কাপ জেতা তপু বর্মনও বুঝে নিয়েছেন কোচের মানসিকতা।
“গত বছর চ্যালেঞ্জ কাপে আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। এবার সবচেয়ে বড় কথা দলে কোনো চোট নাই। সবাই ভালো আছে। কোচ আমাদের যে নির্দেশনা দিয়েছেন, আমরা সে অনুযায়ী কাজ করছি। উনি বেশ ভালো কোচ। কোচ একজন মানুষ হিসেবে…এবং তার মানসিকতা অনেক ভালো। খেলোয়াড়দের সাথে তার সম্পর্ক খুবই ঘণিষ্ঠ। ভবিষ্যতে এই সম্পর্ক আরও ভালো হবে। তার ফুটবল দর্শন অন্যরকম, সেটা আগামী শুক্রবার আপনারা দেখতে পারবেন। তার অধীনে এটি আমাদের প্রথম অফিসিয়াল ম্যাচ। আমরা চেষ্টা করব, তাকে জয় উপহার দিতে।”
“আসলে এগিয়ে আছি, তা মনে করি না। আমাদের প্রাক মৌসুমের প্রস্তুতির কথা যদি বলেন, সে দিক থেকে বলব, আমরা সেটা করেছি। এছাড়া আমাদের খেলোয়াড়রা জাতীয় দলে ছিল, অনূর্ধ্ব-২৩ দলে ছিল, এর আগে আমরা চ্যালেঞ্জ কাপ খেলেছি, ম্যাচ ফিটনেস বা কম্বিনেশের দিক থেকে যদি বলেন, আমরা এগিয়ে আছি। তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচ হবে। একটাই ফাইনাল, জিততেই হবে। আমরা সেই মানসিকতা নিয়ে খেলতে নামব।”