‘আদর্শ গঠনতন্ত্র’ সংশোধনের পর নির্বাচনের পথে হাঁটবে ক্রীড়াঙ্গন

‘আদর্শ গঠনতন্ত্র’ সংশোধনের পর নির্বাচনের পথে হাঁটবে ক্রীড়াঙ্গন

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে), বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ও বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ) ছাড়া বাকি সব ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশন চলছে অ্যাডহক কমিটি দিয়ে। এমনকি বিভাগীয়, জেলা, উপজেলা এবং স্থানীয় মহিলা ক্রীড়া সংস্থার বেশিরভাগেই আছে অ্যাডহক কমিটি। কয়েকটিতে এখনো কমিটিই গঠন হয়নি। এক কথায় স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের ক্রীড়াঙ্গনের সিংহভাগ কমিটিই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ঘোষিত অ্যাডহক।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর রাষ্ট্রের অন্যসব সেক্টরের মতো ক্রীড়াঙ্গন সংস্কারেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।

গত বছর ২৯ আগস্ট সার্চ কমিটি গঠন করে ক্রীড়াঙ্গনকে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। তবে সার্চ কমিটির নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাদের প্রস্তাবনা দিতে না পারার কারণে এক বছরের অধিক সময় অতিক্রম হওয়ার পরও শতভাগ সংস্কার হয়নি ক্রীড়াঙ্গনে। সার্চ কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আরেকটি কমিটি গঠন করেছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। গত ২৪ জুন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে (ক্রীড়া-১) প্রধান করে গঠন করা এই কমিটি এরই মধ্যে চারটি সভা করে তাদের কাজ কিছুটা গুছিয়ে এনেছে।

ক্রীড়াঙ্গন সংস্কারের জন্য এই কমিটিকে কি দায়িত্ব দিয়েছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়? প্রথম গঠন করা সার্চ কমিটি শুধু ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনগুলোর অ্যাডহক কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিল মন্ত্রণালয়কে। মন্ত্রণালয় অনুমোন দিলে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সেটা বাস্তবায়ন করেছে। অ্যাডহক কমিটির প্রস্তাবনা দিতেই ১০ মাসের বেশি কাটিয়ে দিয়েছিল সার্চ কমিটি। যে কারণে ৩০ কার্যদিবস সময় আর ৫টি করণীয় নির্ধারণ করে আরেকটি কমিটি গঠন করে সরকার।

এই কমিটিকে যে পাঁচটি দায়িত্ব দিয়েছে মন্ত্রণালয় সেগুলো হচ্ছে- ১. জাতীয় ক্রীড়া সংস্থাসমূহের জন্য আদর্শ গঠনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য সুপারিশ প্রদান, ২. ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েন প্রাপ্তির বিদ্যমান নীতিমালা যুগপোযোগীকরণ, ৩. আইসি চার্টার অনুসরণে জাতীয় ক্রীড়া সংস্থার অ্যাফিলিয়েশন সংখ্যা যৌক্তিকতার সাথে নির্ধারণ করা, ৪. আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের নীতিমালা প্রণয়ন এবং ৫. সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়াদি।

অর্থাৎ ক্রীড়াঙ্গন সংস্কারের জন্য গঠন করা বর্তমান কমিটিকে কাজ করতে হচ্ছে সমস্যার গভীরে গিয়ে। সার্চ কমিটি শুধু ফেডারেশন ও অ্যাসেসিয়েশনে অ্যাডহক কমিটি গঠণের সুপারিশ করেছে। তারা জাতীয় ও স্থানীয় সংস্থার গঠনতন্ত্র তৈরি বা সংশোধনে হাত দিতে পারেনি। একটা টেকসই সংস্কারের জন্যই বর্তমান কমিটি কাজ করছে যাতে সেই আলোকে আগামীতে ক্রীড়াঙ্গনে গনতন্ত্রের ধারা ফিরতে পারে।

দেশে জাতীয় নির্বাচনের একটা বাতাস বইতে শুরু করেছে গত ৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে ভোট আয়োজনের আভাস দেওয়ায় পর থেকে। অনেকের প্রশ্ন, ক্রীড়াঙ্গনের গণতন্ত্র ফিরবে কবে?

নির্বাচিত কমিটি বিলুপ্ত করে প্রথম ফায় যে ৯ ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনে অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়েছিল সেগুলোর বয়স হয়ে গেছে ৯ মাস। সাধারণত জাতীয় ক্রীড়া পরিষ কোনো ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনের অ্যাডহক কমিটি গঠন করলে সেই কমিটির মেয়াদ সম্পর্কে একটা নির্দেশনা দিয়ে থাকে। যদিও কোনো অ্যাডহক কমিটিরই মেয়াদ বেঁধে দেয়নি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নির্বাহী পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমরা প্রজ্ঞাপনে অ্যাডহক কমিটিকে সময় বেধে দেয়নি ঠিক। তবে ফেডারেশন চলে গঠনতন্ত্রের মাধ্যমে। সেখানেই গাইডলাইন দেওয়া আছে। আরেকটি বিষয় হলো গত বছর ৫ আগস্টের পর প্রেক্ষাপটটা পুরোপুরি ভিন্ন। ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটি দায়িত্ব দুটি। এক. রুটিন কাজ করা এবং নির্বাচন আয়োজন করা। তার সাথে তৃতীয়টা যোগ হয়েছে গঠনতন্ত্র বিষয়ে মতামত দেওয়া।’

‘যে কারণে তাদের সময় যদি বেশি লাগে সে ক্ষেত্রে দেওয়া হচ্ছে। আগামী সপ্তাহেই ফেডারেশনগুলোকে আদর্শ গঠনতন্ত্র পাঠানো হবে। ফেডারেশনগুলোর মতামতের ভিত্তিতে আদর্শ গঠনতন্ত্র সংশোধন হবে এবং সেটি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে অনুমোদনের পর তার ভিত্তিতে নির্বাচনের দিকে হাটতে হবে। না হলে তো ক্রীড়াঙ্গনের অবস্থা আগের মতোই থেকে যাবে।’

ক্রীড়াঙ্গন কেবল ফেডারেশনকেন্দ্রিক নয়। উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা, জেলা ক্রীড়া সংস্থা, বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার ধারাবাহিকতায় পরিচালিত হয়ে থাকে। তাহলে তো সব সংস্থার গঠনতন্ত্রই সংশোধ করে নতুন করে প্রণয়ন করতে হবে। তবে আপাতত স্থানীয় ক্রীড়া সংস্থা নয়, আদর্শ গঠনতন্ত্র তৈরির কাজ চলছে জাতীয় ক্রীড়া সংস্থার।

গত বছর অক্টোবরে হয়েছে বাফুফের নির্বাচন। এ বছর নভেম্বরে হওয়ার কথা বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচন। ডিসেম্বরে শেষ হবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের বর্তমান কমিটির মেয়াদ। অনেকে মনে করছেন, এখন ক্রীড়াঙ্গন চলছে অ্যাডহক কমিটি দিয়ে। এই অনির্বাচিত কাউন্সিলরদের মাধ্যমে বিওএর নির্বাহী কমিটির নির্বাচন হলে সেটা আইওসি’র কাছে গ্রহণযোগ্য হবে কিনা সে প্রশ্নও করছেন অনেকে।

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নির্বাহী পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেছেন,‘আইওসি চার্টারে উল্লেখ আছে কার্যকর প্রতিনিধির কথা। বিওএর নির্বাহী কমিটির কেউ ‘কার্যকর প্রতিনিধি’ না থাকলে তাকে সরে যেতে হয়। তাই এখন ফেডারেশনগুলোতে অ্যাডহক কমিটি থাকলেও বিওএ’র নির্বাচন হতে কোনো বাধা নেই। বিওএর নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাহী কমিটিতে আসা কোনো ব্যক্তি যদি পরবর্তীতে তার সংস্থার কাউন্সিলরশিপ হারান তাহলে তাকে সরে যেতে হবে এবং সেই শূন্য জায়গায় একজন কার্যকর প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে আসবেন।’

বিদ্যমান আদর্শ গঠনতন্ত্র সংশোধন করে যুগোপোযোগী করতে কাজ করছে কমিটি। সংশোধিত ‘আদর্শ গঠনতন্ত্র’ অনুমোদন হওয়ার পরই নির্বাচনের দিকে হাঁটবে ক্রীড়াঙ্গন।