কান্না তো যন্ত্রণা-ক্ষোভ-অভিমানের ভাষা বটেই, অনেক সময় হৃদয়ের উচ্ছ্বাসও চোখের জল হয়ে ঝরে। আন্তোনি যেন সেটিই ফুটিয়ে তুললেন আরেকবার। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের দুঃস্বপ্ন থেকে বেরিয়ে স্বপ্নের রেয়াল বেতিসে পাড়ি দিয়ে তিনি কাঁদলেন, হাসলেন আর কান্নাভেজা চোখেই শোনালেন, এখন তিনি কতটা সুখী!
গত মৌসুমে ধারে খেলতে গিয়ে রেয়াল বেতিসের সঙ্গে যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, তা পাকাপাকি বন্ধনে রূপ দিতে মরিয়া ছিলেন আন্তোনি। কিন্তু চুক্তির নানা কিছু নিয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে চলছিল টানাপোড়েন। শেষ পর্যন্ত দলবদলের একদম শেষ সময়ে মিলেছে সমাধান। ইংলিশ ক্লাবটিতে চুক্তির দুই বছর বাকি থাকতেই ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার পাড়ি জমালেন স্প্যানিশ ক্লাবে।
আন্তোনিকে পেতে বেতিসকে সরাসরি খরচ করতে হচ্ছে ২ কোটি ২০ লাখ ইউরো। সঙ্গে বোনাস মিলিয়ে লাগতে পারে আরও ৩০ লাখ ইউরো। ভবিষ্যতে দলবদলের ক্ষেত্রেও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড পাবে ৫০ শতাংশ।
২৫ বছর বয়সী ফুটবলারের সঙ্গে বেতিসের চুক্তি পাঁচ বছরের।
হুবেন অ্যামুরির ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে দিনের পর দিন সুযোগ না পেয়ে গত মৌসুমে ধারে বেতিসে খেলতে গিয়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করেন আন্তোনি। ২৬ ম্যাচে ৯টি গোল করা ছাড়াও অসাধারণ পারফরম্যান্স উপহার দেন। বেতিসের কনফারেন্স লিগ ফাইনালে ওঠায় তার ছিল বড় অবদান। এই ক্লাব ও শহরের সঙ্গে তিনি মিশে যান দারুণভাবে। সমর্থকদের কাছেও প্রবল জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন দ্রুতই।
মৌসুম শেষে ইউনাইটেডে ফিরে আবার সেই দুঃসহ সময়ের জালে বন্দি হন তিনি। নতুন মৌসুমেও অ্যামুরির স্কোয়াডে তার জায়গা হয়নি। অনুশীলন করতে হচ্ছিল স্কোয়াড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আলাদা করে। আর অপেক্ষা করছিলেন বেতিসের সঙ্গে পাকাপাকি চুক্তির।
সেই চুক্তি হয়ে যাওয়ার পর বেতিসে ফিরে কান্নায় ভেঙে পড়ে শোনালেন অসহায় সময়টুকুর কথা। ধন্যবাদ জানালেন বেতিসকেও।
“কেবল আমার পরিবারই জানে, সেখানে (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড) থাকা ছিল কতটা কঠিন। আলাদাভাবে অনুশীলন করতে হচ্ছিল…। তবে জানতাম, দারুণ মুহূর্তটি আসছে। কিছুটা ভয় অবশ্যই ছিল যে, শেষ পর্যন্ত নাও হতে পারে। তবে অপেক্ষা করে গেছি, কারণ আমার বিশ্বাসের কমতি ছিল না।”
“খুবই কঠিন ছিল (দলবদলের প্রক্রিয়া)… তবে শেষ পর্যন্ত আজকে আমি এখানে। বেতিসের জার্সি আবার গায়ে চাপাতে তর সইছে না আমার। এটা সম্ভব করায় যারা কাজ করেছেন, তাদের প্রতি কেবল কৃতজ্ঞতাই জানাতে পারি।”
গত মৌসুমে ধারে খেলার সময়ই এই সেভিয়া শহর, এই বেতিস ক্লাবের প্রতি ভালোলাগার কথা বলেছেন তিনি বারবার। ইউনাইটেডের দুঃস্বপ্নের কথাও অকপটে বলেছেন তখন। দীর্ঘমেয়াদে বেতিসে ফিরে সেই ভালোবাসার কথাই তিনি বললেন আবার।
“কত যে পার্থক্য! ম্যানচেস্টারের চেয়ে সেভিয়া অনেক বেশি সুন্দর। অবশেষে আমি এখানে! ৪০ দিনের বেশি হোটেলে কাটাতে হয়েছে আমাকে, সময়টা কঠিন ছিল। তবে সবাই জানত, বেতিসে ফিরতে মরিয়া আমি। এখন সময়ের সঙ্গে অনেক কিছু করার ও অর্জনের আছে। বেতিসের সমর্থকদের ভালোবাসার এত জোয়ার দেখে ঘুমাতে পারছিলাম না আমি। এমনকি রাত ২টার সময়ও আমার বাড়ির বাইরে ভক্তদের অপেক্ষা করতে দেখেছি।”
২০২২ সালে সাড়ে ৯ কোটি ইউরোতে আয়াক্স থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে এসেছিলেন আন্তোনি। ইংলিশ ক্লাবটির ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দামী ফুটবলার তিনি। কিন্তু নানা কারণে সেই উচ্চমূল্যের প্রতিফলন পড়েনি তার পারফরম্যান্সে।
বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্লাবগুলোর একটি থেকে তিনি এখন পাড়ি জমালেন বেতিসে, যেটি স্পেনের শীর্ষ ক্লাবগুলোর কাতারে পড়েই না। গত ৯০ বছরে তারা লা লিগা জেতেনি, ক্লাবের ১১৮ বছরের ইতিহাসে কোপা দেল রে জিতেছে স্রেফ তিনবার। এখানে তার পারিশ্রমিকও অনেক কম হওয়ার কথা ইউনাইটেডের চেয়ে।
কিন্তু অর্থ, নামের ধার-ভার, এসবের চেয়েও তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো ভালোবাসা।
“আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো যত্ন পাওয়া। এটা টাকায় কেনা যায় না। এই ক্লাবে আমার অনুভূতিটাই ভালো লাগার, অনেক অনুরাগ অনুভব করি এখানে। এজন্যই এটা ছিল আমার প্রথম পছন্দ। এজন্যই শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি বেতিসে ফিরতে। এখন আমি খুবই খুশি যে ভালোবাসার ক্লাব ও শহরে আবার আসতে পেরেছি।”
গত মৌসুমে বেতিসের হয়ে দারুণ খেলে ব্রাজিল জাতীয় দলেও জায়গা ফিরে পান আন্তোনি।