অভিষেক নিয়ে হৃদয়পটে কেমন ছঁবি এঁকেছিলেন রিও নুমোয়া, বলতে পারবেন কেবল তিনিই। তবে মাঠে যা হলো, রূপকথার চেয়ে কম কিছু নয় তা। লিভারপুলের বিস্ময় বালক মাঠে নামলেন, দেখলেন এবং জয় করলেন।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে চমকপ্রদ অভিষেকে লিভারপুলের রোমাঞ্চকর জয়ের নায়ক নুমোয়া। ১৬ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড যখন মাঠে নামলেন, নির্ধারিত ৯০ মিনিট পেরিয়ে যোগ করা সময়ের ষষ্ঠ মিনিট চলছে তখন। ম্যাচে তখন ২-২ গোলে সমতা। মাঠে নামার মিনিট চারেক পরই নুমোয়ার সেই গোল!
নিজেদের মাঠে ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়া নিউক্যাসল ইউনাইটেড ১০ জনের দল নিয়েও দুর্দান্ত উজ্জীবিত ফুটবল উপহার দিয়ে সমতা ফিরিয়েছিল ম্যাচে। কিন্তু নুমোয়ার ওই গোল উল্লাসে ভাসায় সেন্ট জেমস পার্কে থাকা লিভারপুলের সমর্থকদের আর হৃদয় ভেঙে দেয় স্থানীয় সমর্থকদের।
৮৮তম মিনিটে দ্বিতীয় গোলে সমতা ফেরানোর পরও নিউক্যাসল বেশ চাপে রেখেছিল লিভারপুলকে। তবে জয়সূচক গোলটি ছিল বেশ গোছানো আক্রমণ থেকে। নিজেদের মধ্যে দারুণ বোঝাপড়া থেকে বক্সের কাছাকাছি গিয়ে ফেদেরিকো চিয়েসা পাস দেন ডান পাশে মোহামেদ সালাহকে। এই ফরোয়ার্ড বল বাড়ান বক্সের ভেতর। চমৎকার ডামি করে বল ছেড়ে দমিনিক সবোসলাই। পেছনে তখন নুমোয়া একদম ফাঁকা।
চোখের পলকে গতিময় নিখুঁত শটে বল জালে জড়ান কিশোর ফুটবলার।
আগামী শুক্রবার ১৭ বছর পূর্ণ হবে নুমোয়ার। জন্মদিনের দারুণ এক উপহার দিলেন তিনি নিজেকে আর ক্লাবকে।
২০০৮ সালের ২৯ অগাস্ট তার জন্ম ইংল্যান্ডের নিউহ্যামে। তবে নাইজেরিয়ান-গুয়াদেলিপিয়ান বংশোদ্ভুত তিনি। ক্যারিবিয়ানে ফ্রান্স শাসিত অঞ্চল এই গুয়াদেলিপ। নাইজেরিয়া ও ফ্রান্সের হয়েও খেলতে পারেন তিনি চাইলে। তবে বয়সভিত্তিক ফুটবলে আপাতত খেলছেন ইংল্যান্ডের হয়েই।
২০১৬ সালে চেলসির একাডেমিতে পা রাখেন তিনি। ৮ বছর বয়সে যোগ দিয়ে সেখানে ছিলেন ৮ বছর। গত বছর তাকে নিয়ে আসে লিভারপুল। প্রথম দলের সঙ্গে অনুশীলনের সুযোগও করে দেন কোচ আর্না স্লট।
নতুন ক্লাবের হয়ে প্রথমবার মাঠে নামার সুযোগ পান গত জানুয়ারিতে এফএ কাপে অ্যাক্রিংটন স্ট্যানলির বিপক্ষে ম্যাচে। ১৬ বছর ২৩৫ দিন বয়সে মাঠে নেমে লিভারপুলের সুদীর্ঘ ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার হয়ে যান তিনি।
এবার নতুন মৌসুম শুরুর আগে ক্লাবের প্রাক-মৌসুম প্রস্তুতিপর্বে তিনি ছিলেন দলের সঙ্গেই। ছিলেন হংকং ও জাপান সফরের দলে। সেখানে কোচকে মুগ্ধ করে আদায় করে নেন মূল দলে সুযোগ। এবার প্রিমিয়ার লিগ অভিষেকে তো সাড়া জাগিয়ে ফেললেন।
১৬ বছর ৩৬১ দিন বয়সে গোল করে প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে চতুর্থ সর্বকনিষ্ঠ গোলস্কোরার তিনি। ১৬ বছর ২০৭ দিন বয়সে গোলের রেকর্ড জেমস ভনের। জেমস মিলনার করেছিলেন ১৬ বছর ৩৫৬ দিন বয়সে, ওয়েইন রুনি ১৬ বছর ৩৬০ দিন বয়সে।
১০০ম মিনিটে নুমোয়ার এই গোল প্রিমিয়ার লিগে সবচেয়ে দেরিতে গোলের তালিকায় চার নম্বরে।
ম্যাচের পর দলের সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলারের প্রশংসা শোনা গেল অধিনায়ক ভার্জিল ফন ডাইকের কণ্ঠে।
“ওর জন্য এটা স্বপ্নের অভিষেক। একদম নিখুঁত টেকনিক ছিল। শেষ দিকে উত্তেজনার সময় আমরা শান্ত থেকেছি, গোল করার জন্য সঠিক পথ খোঁজার চেষ্টা করছিলাম এবং আমরা পেরেছি। রিওর জন্য আমি খুবই খুশি।”
তাকে সুযোগটি দিয়েছেন যিনি, সেই স্লট তো উচ্ছ্বসিত। এই ফরোয়ার্ডকে বয়সের তুলনায় পরিণত মনে করেন লিভারপুল কোচ।
“১৬ বছর বয়সীর জন্য এটা ছিল অসাধারণ গোল। অনেক বড় সুযোগ ছিল এটি। তার বয়সের বিবেচনায় ফিনিশিং খুবই ভালো। যতটা জোরাল ছিল তার শট… এমনটি সচরাচর দেখা যায় না।”
“সে খুবই আত্মবিশ্বাসী এবং এই গোল করাটা কোনো কাকতাল নয়। তার বয়সের তুলনায় সে খুবই ভালো ফিনিশার।”