মেয়েদের দলবদলে সর্বোচ্চ খরচের রেকর্ড টিকেছিল ১৮ বছর। দেড় যুগের সেই রেকর্ড চলতি বছরের আট মাস না ফুরাতেই ভাঙলো তিনবার। গত জানুয়ারিতে সান ডিয়েগো ওয়েভ থেকে চেলসিতে নাম লেখান নাওমি গিরমা। এর মধ্য দিয়ে ইতিহাসের প্রথম নারী ফুটবলার হিসেবে দলবদলে ১০ লাখ ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করেন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ব্যাক। তাকে কিনতে খরচ পড়ে ১১ লাখ ডলার (১৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা)। আর্সেনাল সেই রেকর্ড ভেঙে দেয় জুলাইয়ে। লিভারপুল থেকে ১৩ লাখ ডলারে (১৫ কোটি ৮০ লাখ) কানাডার ফরোয়ার্ড অলিভিয়া স্মিথকে দলে ভেড়ায় গানাররা। সেই রেকর্ড দেড় মাসও স্থায়ী হয়নি। লিজবেথ ওভাইয়েকে তিগরেস ইউএএনএলের কাছ থেকে ১৫ লাখ ডলারে (১৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা) দলে ভেড়ায় অরল্যান্ডো প্রাইড। মেক্সিকান উইঙ্গার ওভাইয়ে এখন মেয়েদের দলবদল ইতিহাসের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়। মেয়েদের দলবদলের বাজারে এই রেকর্ডের বিবর্তন এবং সামনে কী অপেক্ষা করছে, তা নিয়ে বিশ্লেষণ করেছে বৃটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য অ্যাথলেটিক। সেটা এখানে দেওয়া হলো-
রেকর্ডের শুরু ও বিবর্তন
ব্রাজিলের সাবেক মিডফিল্ডার মিলেনে ডমিঙ্গেসকে দিয়ে ২০০২ সালে মেয়েদের ক্লাব ফুটবলে দলবদলের যাত্রা শুরু হয়। ডমিঙ্গেস সেই সময় ছিলেন ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি রোনালদো নাজারিওর স্ত্রী ‘দ্য ফেনোমেনন’ খ্যাত রোনালদো ২০০২ বিশ্বকাপ জয়ের পর ইতালিয়ান ক্লাব ইন্টার মিলান ছেড়ে যোগ দেন স্প্যানিশ পরাশক্তি রিয়াল মাদ্রিদে। স্বামীকে অনুসরণ করে দমিঙ্গেসও ইতালি ছেড়ে চলে আসেন স্পেনে; ফিয়াম্মামোনৎসাকে বিদায় বলে যোগ দেন রায়ো ভায়েকানোতে। এখনকার বিনিময় হার অনুযায়ী দলবদলের অঙ্কটা ছিল ২ লাখ ৬৮ হাজার ডলার (৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা)। তবে ভায়েকানোতে দমিঙ্গেস কোনো প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলতে পারেননি। কারণ, সেই সময় মেয়েদের স্প্যানিশ লিগে (লা লিগা ফেমেনিনো) বিদেশি খেলোয়াড়কে খেলতে দেওয়া হতো না। বিষয়টি জেনেও দমিঙ্গেসকে দলে ভেড়ায় ভায়েকানো। ক্লাবটি পরে জানায়, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে তাকে নিয়ে আসা হয়। এই রেকর্ড ১৮ বছর টিকে ছিল। ২০২০ সালে ডেনমার্কের অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার পেরনিলে হার্ডার ৩ লাখ ১৫ হাজার ৫২৫ ডলারে ভলফ্সবুর্গ থেকে চেলসিতে যোগ দিলে রেকর্ড ভেঙে যায়। হার্ডারের পর থেকে মাত্র পাঁচ বছরে ছয়বার দলবদলে সর্বোচ্চ খরচের রেকর্ড ভেঙেছে এবং খেলোয়াড়ের দাম বেড়েছে চার গুণ।
শুধু রেকর্ড ভাঙার ক্ষেত্রেই নয়, সাধারণ দলবদলেও ব্যয় ব্যাপক বেড়েছে। গত বছর জাম্বিয়ান স্ট্রাইকার বারব্রা বান্দার অরল্যান্ডো প্রাইডে নাম লেখানোর ফি-ই রেকর্ড হতে পারত, যদিুনা এর কদিন আগে তাঁর স্বদেশি র্যা চেল কুন্দানাঞ্জি বে এফসিতে যোগ দিতেন। এ বছর অ্যালাই সেন্টনরকে আনতে কানসাস সিটি কারেন্ট ৬ লাখ ডলার (৭ কোটি ২৯ লাখ টাকা) খরচ করেছে, যা দুই বছর আগে হলে মেয়েদের দলবদলে সর্বকালের সর্বোচ্চ দাম হতো।
কোন ক্লাব এত অর্থ ঢালছে
সব ক্লাবের পক্ষে খেলোয়াড় কেনার পেছনে এত খরচ করা সম্ভব নয়। মিলেনে মিঙ্গেসের পর থেকে মাত্র পাঁচটি ক্লাব এই বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে। এর মধ্যে চেলসিই তিনবার। বার্সেলোনা, অরল্যান্ডো প্রাইড, আর্সেনাল ও বে এফসি একবার করে। চেলসি ও বার্সেলোনা টানা ছয়বার ঘরোয়া লীগ জিতেছে। আর্সেনাল বর্তমানে মেয়েদের চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপাধারী আর যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব অরল্যান্ডো প্রাইড গত বছর মেয়েদের জাতীয় সকার লিগের শিল্ড ও চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে। শুধু বে এফসি ব্যতিক্রম। তারা এখনো লিগ পয়েন্ট তালিকার তলানির দিকের দল।
বিক্রেতা ক্লাব ও নতুন বাজার
ভালো খবর হলো, খেলোয়াড় বিক্রি করা ক্লাবগুলোর মধ্যে বৈচিত্র্য বাড়ছে। লা লিগা ফেমেনিনো এখন প্রতিভার চারণভূমি হয়ে উঠেছে, যেখান থেকে কুন্দানাঞ্জি ও মায়রা রামিরেজকে কেনা হয়েছে। লিজবেথ ওভায়ের বিশ্ব রেকর্ড গড়ে ক্লাব পাল্টানোয় তিগরেস প্রথম অ-ইউরোপীয় ও যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের প্রথম ক্লাব, যারা সবচেয়ে বেশি দলবদল ফি পেয়েছে।