বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) নির্বাচনের প্রস্তাবিত সময় আগামী নভেম্বর মাস। সে হিসেবে হাতে সময় আছে প্রায় দুই মাস। নির্বাচনে সবার দৃষ্টি মহাসচিব পদের দিকে। এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা, গুঞ্জন।
মহাসচিব পদে আসীন হওয়ার দৌড়ে জোবায়দুর রহমান রানা, ইশতিয়াক আহমেদ কারেন ও কাজী রাজিবউদ্দিন আহমেদ চপল এই তিন ক্রীড়া সংগঠকের নাম শোনা গেলেও তার কেন্দ্রে আছেন একজনই। যদিও দেশের ক্রীড়াঙ্গনে তিনজনই পরিচিত মুখ, দীর্ঘদিন ধরে ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে সম্পৃক্ত, আছে অলিম্পিক আন্দোলনে কাজ করার অভিজ্ঞতা। জোবায়দুর রহমান রানা সাবেক ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়, ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক। বিওএর সদস্য হিসেবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আসরে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। ইশতিয়াক আহমেদ কারেন অভিজ্ঞ ক্রীড়া সংগঠক, বর্তমান টেনিস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন, ছিলেন বিওএর উপমহাসচিবও। কাজী রাজিব উদ্দিন আহমেদ চপল বাংলাদেশ আরচারি ফেডারেশনকে বৈশ্বিক পরিসরে নিয়ে যাওয়ার পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন; ছিলেন বিওএর কোষাধ্যক্ষ।
বিওএ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, বর্তমান মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা আসন্ন নির্বাচনের উপযোগী কি না—এ নিয়ে যদি-কিন্তুর সমাধান না হলেও আছে বয়স এবং টানা দুই মেয়াদে দায়িত্বে থাকার বিষয়টিও। এসবের পাশাপাশি বিগত সরকারের স্বার্থে ঘনিষ্ঠতার কারণে এমনিতে সাহেদ রেজার থাকা হচ্ছে না, এটা অনেকটাই নিশ্চিত। সে কারণে মহাসচিব পদে নতুন কাউকে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই নিশ্চিত।
কিন্তু নতুন মহাসচিব হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে দুজনকে নিয়ে যদি-কিন্তু থাকায় নির্বাচনী ময়দানে আপাতত একজনই—জোবায়দুর রহমান রানা। কালবেলাকে তিনি জানিয়েছেন, শুভাকাঙ্ক্ষীদের মতামত নিয়ে অচিরেই তিনি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন। আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থিতার প্রসঙ্গে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সাবেক এ শাটলার বলছিলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে ক্রীড়াঙ্গনে আছি। অতীতে বিওএতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছি। মহাসচিব পদে নির্বাচনের ইচ্ছা আছে; কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রার্থী হওয়ার আগে আমি আমার শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে বসব, আলোচনা করব। তার পরই এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চাই।’ পাশাপাশি সার্চ কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে রানার কাজ করার কারণে বিওএ কাউন্সিলরদের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতাও চোখে পড়ার মতো।
বিওএ মহাসচিব পদে প্রার্থী হওয়ার ইস্যুতে শুরুতে জোরালোভাবে উচ্চারিত হচ্ছিল কাজী রাজিবউদ্দিন আহমেদ চপলের নাম। কিন্তু জানা গেছে, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে শেষমেশ বিওএর মহাসচিবের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাংলাদেশ খো-খো ফেডারেশন এবং বাংলাদেশ আরচারি ফেডারেশনের সাবেক এ সাধারণ সম্পাদক। তিনি কালবেলাকে বলেন, আপাতত নির্বাচন করার ইচ্ছা নেই, বড়জোর সহসভাপতি পদে প্রার্থী হলেও হতে পারি। ওদিকে নির্বাচনী মাঠে নামার ইস্যুতে ইশতিয়াক আহমেদ কারেন অবশ্য এখনই মন্তব্য করতে চাননি। বোঝা গেল, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন, নির্বাচন করা না করা নিয়ে বুঝেশুনে সিদ্ধান্ত নেবেন।
বিওএর বর্তমান নির্বাহী কমিটির মেয়াদ শেষ হবে ডিসেম্বরে। কিন্তু ৩০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত সাধারণ সভার পর নভেম্বরে নির্বাচন আয়োজনের কথা জানানো হয়েছে। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ঢেলে সাজানো হয়েছে কাউন্সিলর তালিকা। সে তালিকায় বিওএ সভাপতি মনোনীত চার ক্রীড়া ব্যক্তিত্বের একজন হিসেবে কাউন্সিলর মনোনীত হয়েছেন জোবায়দুর রহমান রানা। বিওএ প্যাট্রন মনোনীত চার ক্রীড়া ব্যক্তিত্বের একজন হিসেবে কাউন্সিলর মনোনীত হন কাজী রাজিবউদ্দিন আহমেদ চপল। অলিম্পিক গেমসভুক্ত ফেডারেশনের কোটায় বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশন থেকে কাউন্সিলর হয়েছেন ইশতিয়াক আহমেদ কারেন।
নির্বাচন আয়োজনের আগে কাউন্সিলর তালিকা অবশ্য হালনাগাদ করতে হবে। কারণ, বিওএ ওয়েবসাইটে দেওয়া কাউন্সিলর তালিকায় দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন ফেডারেশন ও সংস্থা এখনো কাউন্সিলরের নাম পাঠায়নি। অলিম্পিক গেমসভুক্ত ফেডারেশন হিসেবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) এখনো কোনো প্রতিনিধি পাঠায়নি বিওএতে। আট বিভাগের মধ্যে বরিশাল, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর থেকেও কোনো কাউন্সিলর পাঠানো হয়নি। নির্বাচন আয়োজনের আগে আরেকটি এজিএম হওয়ার কথা। গঠনতন্ত্র ঢেলে সাজানোর উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত গঠনতন্ত্র বিভিন্ন সদস্যের কাছে পাঠানো হয়েছে। সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে হালনাগাদ করা হবে গঠনতন্ত্র।