এশিয়া কাপের লড়াইয়ে নামার জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এখন পুরোপুরি প্রস্তুত। গতকাল সকালে প্রথম ধাপে দলের কয়েকজন সদস্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়েন। এদের মধ্যে রয়েছেন দলের অধিনায়ক লিটন কুমার দাস, জাকের আলী অনিক, সাইফ হাসান, পারভেজ হোসেন ইমন, তানজিদ হাসান তামিম ও শামীম হোসেন পাটোয়ারী। দ্বিতীয় ধাপে দলের বাকি সদস্যরা গেছেন রাতের ফ্লাইটে। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে আবুধাবিতে টাইগাররা আজ থেকেই অনুশীলনে নামবে। আসরে বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিয়ে নানা ভবিষ্যদ্বাণী চলছে। ক্রিকেট বিশ্লেষক এবং সাবেক খেলোয়াড়দের অনেকেই মনে করছেন, বাংলাদেশ হয়তো গ্রুপ পর্ব থেকেই ছিটকে যেতে পারে। কিন্তু ক্রিকেটাররা এসব সমালোচনার তোয়াক্কা করছেন না। বিমানবন্দরে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান জাকের আলী এমনটাই জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের নিজেদের সেরা ক্রিকেটটা খেলতে হবে। আমরা সবাই বিশ্বাস করি, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়েই আমরা যাচ্ছি।’ এশিয়া কাপে বাংলাদেশের কিছু ব্যক্তিগত অর্জনও রয়েছে।
ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল এবং উইকেটকিপার মুশফিকুর রহীম এই আসরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের মধ্যে অন্যতম। বোলারদের মধ্যে সাকিব আল হাসান এবং মাশরাফি বিন মুর্তজাও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পারফরম্যান্স করেছেন। তিনবার ফাইনাল খেলেও শিরোপা জিততে না পারার আক্ষেপ রয়েছে টাইগারদের। তবে এবারের এশিয়া কাপে জাকের আলীর মতো দলের অন্য সদস্যরাও আত্মবিশ্বাসী। তারা অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এবং বর্তমানের ছন্দ ধরে রেখে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামবে। ক্রিকেটপ্রেমীরাও আশা করছেন, এবার হয়তো সেই অধরা শিরোপা বাংলাদেশের ঘরে আসবে। দেশ ছাড়ার আগে লিটন কুমার দাসের দলের প্রস্তুতি বেশ ভালো হয়েছে। ফিটনেস ক্যাম্প, স্কিল অনুশীলন এবং নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ২-০ ব্যবধানে জয় দলের আত্মবিশ্বাসকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। জাকের আলীও নিজেদের প্রস্তুতি নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি খুবই ভালো হয়েছে। ফিটনেস থেকে শুরু করে নেদারল্যান্ডস সিরিজ- সব মিলিয়ে ভালো প্রস্তুতি হয়েছে। ড্রেসিংরুমের অবস্থাও সব সময়ের মতো ভালো।’ এই টুর্নামেন্টের জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড পাওয়ার হিটিং বিশেষজ্ঞ কোচ জুলিয়ান উডকে যুক্ত করেছিল। অল্প দিনের জন্য টাইগারদের সঙ্গে কাজ করেছেন জুলিয়ান। এখন মাঠে সেটির প্রভাব কতোটা দেখা যাবে তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কম নয়। তবে জাকের বিশ্বাস করেন, উডের শেখানো আক্রমণাত্মক ক্রিকেট বড় মঞ্চে দারুণ কাজে আসবে। তিনি বলেন, ‘শুধু বেসিকে ফোকাস রেখেই আমরা আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলছি। বড় মঞ্চেও একই মানসিকতা নিয়ে খেলতে হবে।’
আসন্ন এশিয়া কাপে বাংলাদেশ ‘বি’ গ্রুপে খেলবে। এই গ্রুপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং হংকং। সেরা দুটি দল সুপার ফোরে উত্তীর্ণ হবে। ১১ই সেপ্টেম্বর হংকংয়ের বিপক্ষে ও ১৩ই সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামবে টাইগাররা। আগামী ১৫ই সেপ্টেম্বর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ। তিনটি ম্যাচই হবে আবুধাবির শেখ আবু জায়েদ স্টেডিয়ামে।
১৯৮৬ সালে প্রথম এশিয়া কাপে অংশ নেয় বাংলাদেশ। এরপর থেকে টাইগাররা নিয়মিত এই টুর্নামেন্টে খেলছে। এই আসরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাফল্য তিনবার ফাইনাল খেলা। ২০১২ সালে ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত এই টুর্নামেন্টে প্রথমবার ফাইনাল খেলে টাইগাররা। ভারত ও শ্রীলঙ্কার মতো শক্তিশালী দলকে পরাজিত করে ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে মাত্র ২ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ। এই ম্যাচটি বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে একটি অবিস্মরণীয় মুহূর্ত হয়ে আছে। এরপর ২০১৬ এশিয়া কাপ প্রথমবার টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অনুষ্ঠিত হয়।
ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দারুণ পারফর্ম করে ফাইনালে ওঠে। কিন্তু শক্তিশালী ভারতের কাছে হেরে রানার্সআপ হয়। এরপর ২০১৮ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপেও বাংলাদেশ ফাইনাল খেলে। গ্রুপ পর্বে শক্তিশালী পাকিস্তানকে হারিয়ে বাংলাদেশ ফাইনালে ওঠে। ফাইনালে ভারতের কাছে আবারও হেরে রানার্সআপ হয়। ফাইনালে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি হাঁকান এবারের অধিনায়ক লিটন দাস।