'ডু অর ডাই' ম্যাচে জয়ের পরেও তিনটি প্রশ্ন বাংলাদেশ দল নিয়ে
এশিয়া কাপ ২০২৫-এর 'ডু অর ডাই' ম্যাচে আফগানিস্তানকে হারিয়ে পরের রাউন্ডে খেলার আশা ভালোভাবেই টিকিয়ে রাখল বাংলাদেশ।
এবারের এশিয়া কাপে শুরু থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশ দল নিয়ে একটা কৌতুক বেশ ভাইরাল ছিল, 'বাংলাদেশের খেলা দেখে অঙ্ক শেখে সমর্থকরা'।
এর কারণ মাল্টিন্যাশনাল টুর্নামেন্টে বাংলাদেশকে প্রায়ই এমন সব সমীকরণের মুখে পড়তে হয় যেখানে গাণিতিক মারপ্যাঁচ আছে।
বাংলাদেশ গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচের দুইটিতে জয় পেলেও হিসেব নিকেশ এখনও শেষ হয়নি।
কারণ বাংলাদেশ সহজেই উঠে যেতে পারে পরের রাউন্ডে, যদি শ্রীলঙ্কা বনাম আফগানিস্তানের ম্যাচে শ্রীলঙ্কা জিতে যায়।
আর শ্রীলঙ্কা হেরে গেলেও বাংলাদেশের সুযোগ থাকবে, যদি আফগানিস্তান বড় ব্যবধানের জয় পায়, অন্তত ৭০ রানের অথবা ৫০ বল হাতে রেখে জয় পায়।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের নেট রান রেট এখনও পর্যন্ত আফগানিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার থেকে বেশ কম। যে কারণে পয়েন্টের খেলায় যদি তিন দল একই জায়গায় থাকে, সেক্ষেত্রে বিবেচ্য নেট রান রেটেই পিছিয়ে থাকছে বাংলাদেশ।

শ্রীলঙ্কার নেট রান রেট +১.৫৪৬।
বাংলাদেশের -০.২৭০।
আর আফগানিস্তানের নেট রান রেট +২.১৫০
অন্যদিকে, নিজেদের 'প্রায় ঘরের মাঠে' বাংলাদেশের বিপক্ষে হেরে হতাশ আফগানিস্তান, মাঠ ছাড়ার সময় রশিদ খানকে বেশ বিরক্ত ও রাগান্বিত দেখা গিয়েছিল।
বাংলাদেশের বাইরে এই প্রথম আফগানিস্তান বাংলাদেশের বিপক্ষে কোনও টি-টোয়েন্টি ম্যাচে হারের মুখ দেখল।
মঙ্গলবার রাতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে আট রানের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।
টস জিতে আগে ব্যাট করে বাংলাদেশ ২০ ওভারে ১৫৪ রান তোলে, জবাবে ১০ উইকেট হারিয়ে আফগানিস্তান ১৪৬ রান তুলতে সক্ষম হয়।
বাংলাদেশ কীভাবে ম্যাচ জিতল
বিবিসি বাংলার সর্বশেষ খবর ও বিশ্লেষণ এখন সরাসরি আপনার ফোনে।
ফলো করুন, নোটিফিকেশন অন রাখুন
বিবিসি বাংলার সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ বিবিসি বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশ সবসময়ই চাপে থাকে, বিশেষত আফগানিস্তানের স্পিনারদের বিপক্ষে বেশ ধকল সামলাতে হয় ব্যাটারদের।
বাংলাদেশের বাইরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে এই প্রথম ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ, মূলতঃ বোলারদের পারফরম্যান্স ও শুরুর দিকের আগ্রাসী ব্যাটিংয়েই বাংলাদেশ ম্যাচটিতে জয় পেয়েছে।
বিশেষতঃ ছয় ওভারে ৫৯ রান তুলে ভালো একটা লড়াইয়ের ভিত গড়ে দিয়েছেন তানজিদ তামিম ও সাইফ হাসান। যদিও সাইফ হাসান স্বতস্ফূর্তভাবে ব্যাট করতে পারেননি, তবে তিনি ৬৩ রানের উদ্বোধনী জুটিতে তানজিদকে ভালো সঙ্গ দিয়েছেন।
শেষ পর্যন্ত প্রত্যাশিত স্কোর দাঁড় না করাতে পারলেও, আবুধাবির তুলনামূলক ধীরগতির এই উইকেটে লড়াই করার মতো ১৫৪ রান তুলেছে বাংলাদেশ।
আফগানিস্তানের ইনিংসের প্রথম বলেই সেদিকুল্লাহ অটলের উইকেট নিয়ে নেন নাসুম আহমেদ, বড় টুর্নামেন্টে নাসুমের প্রত্যাবর্তন ছিল স্মরণীয়।
দুই উইকেট নিয়েছেন, চার ওভারে মাত্র ১১ রান দিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
নাসুমের আঁটসাঁট বোলিং-এ আফগানিস্তান পাওয়ারপ্লের ছয় ওভারে মাত্র ২৭ রান তোলে।
এখানেই বাংলাদেশের সাথে আফগানিস্তানের পার্থক্য তৈরি হয়ে যায় এই ম্যাচে।
ক্রিকবাজের ম্যাচ পরবর্তী বিশ্লেষণে সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার রোহান গাভাস্কার বলেন, "নাসুম যখন প্রথম বলেই সেদিকুল্লাহ অটলকে আউট করেন সেখানেই ম্যাচের টোন সেট হয়ে গিয়েছিল"।

তবে শেষ পর্যন্ত আফগানিস্তানের সুযোগ ছিল এই রান তাড়া করার, একটা পর্যায়ে ১৮ বলে ৩১ রান দরকার ছিল তখন নাসুম নিজের শেষ ওভারে মাত্র চার রান দিয়ে আফগানিস্তানের জন্য লক্ষ্যটা কঠিন করে তোলেন।
পরের ওভারে মুস্তাফিজ পাঁচ রান দিয়ে দুই উইকেট নেন, যার মধ্যে ১১ বলে ২০ রান করা রাশিদ খানের উইকেট ছিল।
শেষ ওভারে জয়ের জন্য আফগানিস্তানের প্রয়োজন ছিল ২২ রান, তাসকিন আহমেদের বলে আফগানিস্তানের নুর আহমেদ দুটি ছক্কা হাঁকালেও আফগানিস্তানের জন্য সেটা যথেষ্ট ছিল না।
ব্যাটিং-এ শুরুর সাথে তাল মেলাতে পারেনি বাংলাদেশ
ষষ্ট ওভারে গজনফরের বলে দুটি ছক্কা হাঁকান তানজিদ তামিম, হুট করেই পাঁচ ওভারে ৪০ থেকে পাওয়ারপ্লের ছয় ওভারে বাংলাদেশের রান দাঁড়ায় ৫৯।
সেখান থেকে ১০ ওভারে ৮৭।
এই পর্যায় থেকে যেকোনো দলই চেষ্টা করবে ১৮০ এর ওপর রান তোলার, যেহেতু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে শেষ দশ ওভারে ৯০-১০০ রান খুবই সম্ভব।
তবে বাংলাদেশের ব্যাটাররা সেখান থেকেই খেই হারিয়েছে।
২২ বলে ৪৭ রান তোলা তানজিদ তামিম, ৫০ রান তুলেছেন ২৮ বলে।
শেষ পর্যন্ত ৩১ বলে ৫২ করে আউট হন তিনি, অর্থাৎ নিজের খেলা শেষ নয় বলে তিনি করেছেন পাঁচ রান।
তানজিদ তামিমের শুরুর ব্যাটিং-এর বাহবা দিলেও ৫০ করার জন্য যেভাবে ধীরে খেলেছেন এটাকে 'স্বার্থপর' বলেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেট সাংবাদিক দেবদুলাল চৌধুরী।
তানজিদ তামিমকে নিয়ে তিনি বলেন, "এই ইনিংসটি বড় টুর্নামেন্টে তার সেরা ইনিংস। কিন্তু শেষ নয় বলে যেভাবে পাঁচ রান করেছেন, এই প্রবণতা আগে অনেক সিনিয়রের মধ্যে দেখা যেত।"
মি. চৌধুরী বলেন, "জিতলেও বাংলাদেশ ওভারঅল খুব ভালো খেলেছে, সেটা বলতে পারবেন না"।

স্লগ ওভারের ফিনিশার কোথায়?
তৌহিদ হৃদয় ২০ বলে ২৬, শামীম পাটোয়ারি ১১ বলে ১১, জাকের আলী অনিক ১৩ বলে ১২- হৃদয়ের স্ট্রাইক রেট ১৩০, শামীমের ১০০, জাকেরের ১০০'ও স্পর্শ করেনি।
যাদের শেষ দিকে রান তোলার কথা দ্রুতগতিতে, তাদের ব্যাটিং প্রদর্শনী ছিল এমন।
দেবদুলাল চৌধুরী বলেন, যে উইকেটে আজমতুল্লাহ ওমরজাই ১৬ বলে ৩০ করেন, সেই উইকেটে জাকের আলী ফিনিশিং রোলে ১৯তম ওভারে তিনটি ডট বল দিয়েছেন।
"যে দল প্রথম ১০ ওভারে ৮৭ রান তোলে, সেই দল পরের দশ ওভারে রান তুলেছে ৬৭," নিজের বিশ্লেষণে এটা নিয়েই হতাশা প্রকাশ করেছেন দেবদুলাল চৌধুরী।
শেষ পাঁচ ওভারের ৩০ বলে বাংলাদেশ মাত্র ৩৫ রান তুলেছে।
একজন বোলার কম নিয়ে খেলা
বাংলাদেশ ভালো বল করলেও অধিনায়ক লিটন দাস ম্যাচের একটা পর্যায়ে বেশ ভুগেছেন বোলার সিলেকশন নিয়ে।
বিশেষত দুই পার্ট টাইম বোলার সাইফ হাসান ও শামিম হোসেন চার ওভার বল করে ৫৫ রান দিয়েছেন।
নাসুম, মুস্তাফিজ ও রিশাদের দুর্দান্ত বোলিং-এর কারণে পঞ্চম বোলারের অভাবটা কিছুটা লঘু হয়েছে।
তবে, বিশ্লেষকদের মতে এমন সিদ্ধান্ত আরেকটু অভিজ্ঞ দলের ক্ষেত্রে ভোগাতে পারে।