প্যারিসের থিয়েটার অব ক্যাসেলে ব্যালন ডি’অর ট্রফির বিজয়ীর নাম ঘোষণা করতে মঞ্চে আসেন রোনালদিনহো। ব্রাজিলের এ কিংবদন্তি ফুটবলার ট্রফিজয়ীর নাম নেয়ার আগে দর্শকসারির একাংশ চিৎকার করে ওঠেন, ‘উসমান! উসমান!’ অবশেষে সব জল্পনাকল্পনা পেরিয়ে ২০২৫ ব্যালন ডি’অর জিতলেন উসমান দেম্বেলেই। মাকে পাশে নিয়ে হাতে তুলে নেন ব্যালন ডি’অর ট্রফি। চোখের জলে ক্যারিয়ারের সেরা ট্রফিকে বরণ করে নিয়ে দেম্বেলে বললেন, ‘এটি আমার ব্যক্তিগত নয়, আমাদের সবার অর্জন।’ নানা স্মৃতিপ্রবাহের মধ্য দিয়ে গেয়ে চোখের পানি আটকে রাখতে পারেননি ২৮ বছর বয়সী দেম্বেলে। সঞ্চালক কেট স্কট তার মা ফাতিমাতা দেম্বেলেকে মঞ্চে ডেকে আনলে নিজেকে সামলে নেন তিনি। নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে দেম্বেলে বলেন, ‘আমার ক্যারিয়ারে অন্যতম সেরা অর্জন এটি। ২০২৩-এ আমাকে তাদের দলে নেয়ার কারণে পিএসজিকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।। গত বছরের মতো এ বছরও সতীর্থরা অসাধারণ (ছিল)। এটি ব্যক্তিগত ট্রফি নয়, আমাদের সবার অর্জন।’ নিজের মাকে পাশে নিয়ে এ ফরাসি ফুটবলার বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে এটা করেছি।’ এ বছরের ব্যালন ডি’অর জয়ের জন্য অনেকেই এগিয়ে রেখেছিল ফরাসি ফরোয়ার্ড দেম্বেলেকে। শেষ মৌসুমে পিএসজি’র হয়ে চ্যাম্পিয়নস লীগ, ঘরোয়া লীগ শিরোপা ও ফরাসি কাপ জয়ে বড় অবদান রাখেন তিনি। এ ছাড়া ফরাসি সুপার কাপেও জয়সূচক একমাত্র গোলটি করেন দেম্বেলেই। সেবার ৫৩ ম্যাচে ৩৫ গোল ও ১৬টি অ্যাসিস্টে পিএসজিকে জেতান ঐতিহাসিক ‘ট্রেবল’। আর মাধ্যমেই ফ্রান্সের ষষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে ব্যালন ডি’অর নিজের করে নেন দেম্বেলে। তবে সামপ্রতিক সময়ে চোটের কারণে মাঠের বাইরে আছেন তিনি। সে বিষয়ে শেষদিকে দেম্বেলে জানিয়ে রাখেন, ‘অনেকটা ভালো আছি। খুব শিগগিরই মাঠে ফিরছি।’ দেম্বেলের আগে ফরাসিদের হয়ে রাইমন্ড কোপা, মিশেল প্লাতিনি, জ্যা পিয়েরে পাপিন, জিনেদিন জিদান এবং করিম বেনজেমা ব্যালন ডিঅর জেতেন। এ ছয়জন মিলিয়ে ব্যালন ডি’অর জেতেন ৮ বার, যেখানে প্লাতিনি একাই জেতেন ৩ বার এবং বাকিরা একবার করে। আর ৮ বার এ পুরস্কার জিতে দেশ হিসেবে সর্বোচ্চ ব্যালন ডি’অর জয়ে আর্জেন্টিনাকে ছুঁয়ে ফেলেছে ফ্রান্স। যদিও ফ্রান্সের হয়ে যেখানে ছয়জন মিলে জেতেন ৮ বার, সেখানে আর্জেন্টাইনদের হয়ে লিওনেল মেসি একাই জেতেন ৮বার। এদিন নারীদের বর্ষসেরা ফুটবলারের স্বীকৃতি অয়ান বার্সেলোনার আইতানা বোনমাতি। এ নিয়ে তার তৃতীয়বার ব্যালন ডি’অর জিতলেন এ স্প্যানিশ মিডফিল্ডার। বর্ষসেরা গোলকিপারকে দেয়া হয় লেভ ইয়াসিন ট্রফি। পুরুষ বিভাগে এটি জেতেন জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মা ও নারী বিভাগে জেতেন ইংলিশ তারকা হান্না হাম্পটন। বর্ষসেরা কোচদের ইয়োহান ক্রুইফ ট্রফি পান পিএসজির লুইস এনরিকে ও ইংল্যান্ড নারী দলের কোচ সারিনা ভিগমান। অ-২১ পর্যায়ে বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার দেয়া হয় কোপা ট্রফি নামে। ছেলে, মেয়ে দুই বিভাগেই পুরস্কারটি গেছে বার্সেলোনার ঘরে। ব্যালন ডিঅর না জিতলেও এই পুরস্কারটি পান লামিন ইয়ামাল। কাতালানদের নারী দলের ভিকি লোপেজ জেতেন অন্য অন্যটি। এ ছাড়া সক্রেটিস অ্যাওয়ার্ড জেতে জানা ফাউন্ডেশন। এটি মাঠের বাইরে কোনো ফুটবল খেলোয়াড় বা প্রতিষ্ঠানের সেরা মানবিক ও সামাজিক কাজের জন্য দেয়া হয়ে থাকে।
ফাউন্ডেশনটির নামকরণ করা হয়েছে পিএসজি বস এনরিকের প্রয়াত কন্যা জানা’র নামে। ২০১৯-এ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৯ বছর বয়সেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন জানা।