মাত্র ৩১ বছর বয়সেই আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানালেন স্যামুয়েল উমতিতি। একটা বিশ্বকাপ জয়ের স্মৃতি নিয়ে মাঠ থেকে উধাও হলেন ফরাসি ডিফেন্ডার। বরং বলা ভালো, ফুটবল ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন উমতিতি। কারণ, লাগাতার ইনজুরি তার পথচলাকে কঠিন করে তুলেছিল। সেই দুঃখেই অবসরে গেলেন তিনি। এখন থেকে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে বেলজিয়ামের বিপক্ষে করা উমতিতির আইকনিক গোলটিই মনে থাকবে সবার। তার একমাত্র গোলেই ২০১৮ বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছিল ফ্রান্স। বিশ্বকাপও জিতেছিল। সেমিফাইনালে হেডে গোল করার পর কোমর দুলিয়ে নেচেছিলেন তিনি। পরে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর বিশ্বকাপ ট্রফিতে চুমু খেয়েছিলেন উমতিতি। এখন থেকে সেসব কিছু সুখস্মৃতি হিসেবে মনে রাখবেন তিনি।
বেলজিয়ামের বিপক্ষে গোলের পর স্যামুয়েল উমতিতি বলেছিলেন, ‘দুই বছর আগের ইউরোপিয়ান কাপের ফাইনালে হারের দুঃখটা এখনো মনের ভেতর জ্বালা ধরায়। সেই শোধটা নিতে হবে এবার। স্বপ্ন ছুঁতে আর একটা ম্যাচ জিততে হবে আমাদের। তবেই শোধটা নেওয়া যাবে। অনুভূতিটা সেদিনই সবচেয়ে মধুর হবে। এবার বিশ্বকাপ জেতার জন্য আমরা এসেছি। বেলজিয়াম খুব ভালো দল ছিল। ড্রেসিংরুমে ঠিক করেই এসেছিলাম, না জিতে ফিরব না। আমরা জেতার ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ ছিলাম।’ স্বপ্ন পূরণের পরই হারিয়ে গিয়েছিলেন। বার্সেলোনার হয়ে খেলার সময় ইনজুরি তাকে বিপন্ন করেছিল। ক্লাব ফুটবলে ১৩ বছরের ক্যারিয়ারের ৭ বছরই তিনি কাটিয়েছেন কাতালান ক্লাবটিতে। উমতিতির জন্ম ক্যামেরুনে। দুই বছর বয়সে মা-বাবার সঙ্গে চলে আসেন ফ্রান্সে। আট বছর বয়সে লিওঁর একাডেমিতে ভর্তি হন। মূল দলে অভিষেক হয়েছিল ২০১২ সালে। ২০১৬ সালে তিনি বার্সেলোনায় নাম লেখান। এরপর ভালোমন্দ মিলিয়ে কেটে যাচ্ছিল। ২০২২ সালে তার সঙ্গে চার বছরের জন্য চুক্তি নবায়ন করে বার্সেলোনা। কিন্তু চোটে পড়েন উমতিতি। তাই ২০২৩ সালে চুক্তির তিন বছর বাকি থাকতেই ক্লাব ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। এরপর লিলেতে যোগ দেন। সেখানেও থিতু হতে পারেননি। কারণ, সেই ইনজুরি। এরপর লিলে ছাড়লেন। অন্য ক্লাব খুঁজছিলেন। কিন্তু কেউ আর উমতিতিকে নেওয়ার আগ্রহ দেখাননি। হয়তো সে কারণেই অবসরের ঘোষণা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উমতিতি লিখেছেন, ‘উত্থান-পতনের তীব্রতায় ভরা ক্যারিয়ার শেষে সময় হয়েছে বিদায় জানানোর। আমি প্রচণ্ড আবেগ নিয়ে সবকিছু উজাড় করে দিয়েছি এবং কোনো আক্ষেপ নেই। লিলে ঘুরে দাঁড়ানোর সব চেষ্টাই আমি করেছি। কিছু লোক জানে, কতটা কঠোর চেষ্টা করেছি আমি, কিন্তু আমার শরীর সাড়া দেয়নি প্রত্যাশামতো।’ বার্সেলোনার হয়ে ১৩৩ ম্যাচ খেলেছেন উমতিতি। জিতেছেন দুটি লা লিগা, তিনটি কোপা দেল রে ও দুটি স্প্যানিশ সুপার কাপ। তবে ২০১৮ বিশ্বকাপ জয়ের কাছে অন্যসব তুচ্ছ। উমতিতি ৩১টি ম্যাচই খেলেছেন ফ্রান্সের হয়ে। উমতিতির বিদায়ের খবর শুনে ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ের দেশম বলেছেন, ‘স্যাম, তুমি ফ্রান্স জাতীয় দলে যোগ দিয়েছিলে ২০১৬ ইউরোতে এবং রাশিয়ায় আমাদের বিশ্বকাপ জয়ের পথে রেখেছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তোমার সেই হেডের গোলটি সবারই মনে থাকবে। ওই গোলেই বেলজিয়ামকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিলাম আমরা। তার রক্ষণাত্মক দৃঢ়তা ও লড়াকু মনোভাবও মনে পড়ে আমার। তার হাঁটু তাকে যথেষ্ট যন্ত্রণা দিচ্ছিল, তারপরও অনুকরণীয় সাহসিকতায় সে শেষ পর্যন্ত টিকে ছিল।’