বিমানে চেপেই লুডু খেলায় মজলেন জামাল, ফাহিদ ও হৃদয়। ছবি: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

লুডু খেললেন জামাল, ফাহিম দিলেন ঘুম, চারপাশ মাতিয়ে রাখলেন সোহেল

সকাল ১০টার মধ্যে টিম বাসে কাঠমাণ্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে চলে আসেন জামাল-রাকিবরা। টিম বাসেই বসে থাকেন কিছুক্ষণ। এরপর কর্তৃপক্ষের সাড়া পেয়ে ঢোকেন ভেতরে। ইমিগ্রেশন শেষে শুরু হয় আরেক অপেক্ষা, অশান্ত নেপাল ছেড়ে দেশে ফেরার বিমানে চেপে বসার।

নেপালের বাংলাদেশ দূতাবাস খেলোয়াড়দের স্বস্তিতে রাখার সব আয়োজন করে রেখেছিল। দুপুরে বিমানবন্দরেই খাওয়া দাওয়া সারেন সবাই। তখন হয়তো সবার মনে ছিল একটাই ভাবনা; কখন উড়ান দেবেন, জেন জি’র সরকার বিরোধী বিক্ষোভে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠা নেপাল ছাড়বেন।

সেই অপেক্ষার ক্ষণ গণনা শেষ হয় ২টায় ৫৫তম মিনিটে। সহিংসতার কারণে নেপালে তিন দিন ধরে আটকে থাকা কোচ, খেলোয়াড়, নেপাল-বাংলাদেশ প্রীতি ম্যাচ কাভার করতে যাওয়া গণমাধ্যমকর্মীরা ওঠেন বিমানে।

সেলফি তুলে, মোবাইল গেমে ব্যস্ত থেকে সময় কাটিয়েছেন জামাল-ফাহিমরা। ছবি: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
সেলফি তুলে, মোবাইল গেমে ব্যস্ত থেকে সময় কাটিয়েছেন জামাল-ফাহিমরা। ছবি: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

বাণিজ্যিক ফ্লাইট ছিল না বলে আরাম-আয়েশ করে বসার সুযোগ ছিল না কারো। বিমানবাহিনীর কার্গো বিমানটিতে তাই কোনোরকমে বসার আয়োজন করা হয়েছিল সবার জন্য। তবে কদিন ধরে আতঙ্ক, শঙ্কার মধ্যে সময় কাটানো জামাল-মিতুলরা বিমানে উঠে স্বস্তির শ্বাস নেওয়ার সুযোগ পেলেন।

পাশে বসে থাকা ফরোয়ার্ড ফাহামিদুল ইসলাম ব্যাগের ওপরই এলিয়ে দিলেন মাথাটা। শরীর খারাপ লাগছে কিনা জানতে চাইলে বললেন, ‘ঘুম পাচ্ছে’। এতটুকু বলেই ঘুমিয়ে পড়লেন।

তার পাশে বসে থাকা জামাল মোবাইল অ্যাপে লুডু খেলা শুরু করলেন। তাতে যোগ দিলেন এক টিম অফিসিয়াল ও মিডফিল্ডার মোহাম্মদ হৃদয়। লম্বা একটা ঘুম দিয়ে ফাহিমও উঠে চোখ-মুখ কচলে যোগ দিলেন লুডু খেলায়।

দলের মধ্যে সবচেয়ে আমুদে কয়েকজনের ছোট তালিকা করা হলে সিনিয়র সোহেল রানা থাকবেন উপরের দিকেই। যথারীতি কাঠমাণ্ডু থেকে কুর্মিটোলার বিমানবাহিনীর একে খন্দকার বেসে বিমান অবতরণ করা পর্যন্ত যে ঘণ্টা দুয়েক সময়, সারাক্ষণ সবার সাথে খুনসুঁটিতে মেতে থাকলেন সোহেল, মাতিয়ে রাখলেন চারপাশ। চারপাশ সরব রাখতে সোহেলের সঙ্গী ছিলেন তপু বর্মন।

কার্গো বিমানের ভেতরটা সবারই প্রথম দেখা মনে হয়। তবে উইঙ্গার মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে দেখা গেল আরও বেশি কৌতুহলী দৃষ্টি নিয়ে চারপাশে চোখে বোলাতে। অধিকাংশ সময় তিনি দাঁড়িয়ে, কখনও মিডিয়া ম্যানেজার সাদমান সাকিবের সাথে গল্প করে কাটালেন। এক-দুবার উঁকি-ঝুকি দিলেন গোলাকৃতির ছোট জানালা দিয়ে বাইরের আকাশ দেখতে।

কাঠমাণ্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দর ছাড়ায় আগে নেপালে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সাথে দলের সবাই। ছবি: বাফুফে
কাঠমাণ্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দর ছাড়ায় আগে নেপালে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সাথে দলের সবাই। ছবি: বাফুফে

অদূরে বসে থাকা ফরোয়ার্ড রাকিব কী যেন বললেন সোহেলের উদ্দেশ্যে। প্রচণ্ড আওয়াজের কারণে কানে পৌঁছাল না। তবে আলো-আধারি আবহে দেখা গেল হাসির রোল পড়তে। জুনিয়র সোহেল রানার সামনের সিটে বসে থাকা কাজেম শাহ কিরমানি এতক্ষণ কিছুটা গম্ভীর থাকলেও এবার যোগ দিলেন সতীর্থদের সাথে।

দুই ভাই সাদ উদ্দিন ও তাজ উদ্দিনের মধ্যে তাজ বয়সে ছোট বলে একটু বেশিই চুপচাপ থাকতে দেখা গেল। ডিফেন্ডার কাজী তারিক রায়হান বিমানে উঠে সেই যে কানে হেডফোন গুঁজলেন, অন্যদিকে তার আর যেন মনোযোগ নেই।

ভ্রমণের পুরোটা সময় এক কোণের সিটে বসে হাভিয়ের কাববেরা বরাবরের মতোই ভাবুক মনে থাকলেন বসে। টিম ম্যানেজার আমের খান কিংবা ফিটনেস ট্রেনার জোসেফ মারিয়ার সাথে মাঝেমধ্যে একটু-আধটু আলাপ সেরে আবারও চুপচাপ।

বিএএফ বেস বীরউত্তম এ কে খন্দকারে পৌঁছানোর পর এক ফ্রেমে কোচ, খেলোয়াড়, বাফুফে ও বিমানবাহিনীর কর্মকর্তারা। ছবি: বাফুফে
বিএএফ বেস বীরউত্তম এ কে খন্দকারে পৌঁছানোর পর এক ফ্রেমে কোচ, খেলোয়াড়, বাফুফে ও বিমানবাহিনীর কর্মকর্তারা। ছবি: বাফুফে

এমনি করে লুডু খেলে, সেলফি তুলে, গল্প-গুজব শেষে বেলা ৪টা ৪০ মিনিটে যখন কার্গো বিমানটি স্পর্শ করল কুর্মিটোলার বিমানবাহিনীর রানওয়ে। তখন সবাই একসাথে ফেটে পড়লেন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সময় পেরিয়ে দেশে ফেরার আনন্দ-উল্লাসে। ইব্রাহিম আগে থেকেই দাঁড়িয়ে ছিলেন, দরজা খুলতেই তিনি বাইরে ছুটলেন সবার আগে!

বাকি আনুষ্ঠানিকতা সারার পর যখন সবাই বিএএফ বেস বীরউত্তম এ কে খন্দকারের আঙিনা ছাড়ছেন তখন জামালকে জিজ্ঞেস করলাম, “পুরোটা সময় লুডু খেলে কাটালেন!”

অধিনায়ক দিলেন চমকে দেওয়ার মতো উত্তর, “সারাক্ষণ খেলেছি তুমি দেখলে কী করে? আমি তো দেখলাম তুমি হা করে ঘুমাচ্ছো!”

সত্যিই তো, আমিও ফাহিমের মতো এক ফাঁকে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম!