সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন অ্যালেক্স মার্শালশামসুল হক

ক্রিকেটের দুর্নীতিবাজদের বাংলাদেশ ছাড়া করবেন মার্শাল

সংবাদ সম্মেলন শেষ করেই আবার হোটেলের ভেতরে ঢুকলেন অ্যালেক্স মার্শাল। বাইরে থাকা সাংবাদিকদের দেখিয়ে বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম তাঁকে বললেন, ‘দেখেছ, কেমন জনপ্রিয়তা খেলাটার…!’ আইসিসিতে কাজ করার সময় থেকেই মার্শালের সঙ্গে পরিচয় আমিনুলের। বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ানকে উদ্দেশ্য করে তিনিও বললেন, ‘তুমিও তো দেখছি এখানে বেশ জনপ্রিয়…!’

বাংলাদেশে ক্রিকেটের ব্যাপক জনপ্রিয়তা ঠিক আছে, কিন্তু একই সঙ্গে ক্রিকেটকে ঘিরে এখানে ফিক্সিংয়ের বিষবাষ্পও কম ছড়াচ্ছে না। অ্যালেক্স মার্শালকে আনা সে কারণেই। এক বছরের চুক্তিতে বিসিবির দুর্নীতি দমন ইউনিটের পরামর্শক হিসেবে কাল রাতে ঢাকায় এসেছেন যুক্তরাজ্যের এই দুর্নীতি দমন বিশেষজ্ঞ।

আজ সকালে বিসিবির মানবসম্পদ পুনর্গঠনের জন্য নিয়োগ পাওয়া প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বসেছিলেন মার্শাল। পরে সভা করেন বিসিবি পরিচালক এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গেও। সেখানে নিজের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে একটি প্রেজেন্টেশন দিয়েছেন মার্শাল। তাঁর পরামর্শ মেনে নতুন করে সাজানো হবে বিসিবির দুর্নীতি দমন ইউনিট।

বিকেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ক্রিকেটের দুর্নীতিবাজদের জন্য কড়া এক হুমকিই দিয়েছেন মার্শাল, ‘আমরা একটা নৈতিকতা বিভাগ তৈরি করব, যারা সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন করবে। তারা যেন বুঝতে পারে এসবের কী বিপদ আছে। দলের ভেতরেও একটা নিরাপত্তা থাকবে। আমরা নিশ্চিত করব দুর্নীতিবাজেরা যেন ছাড় না পায়। আমরা তাদের বাংলাদেশে চাই না, তাদের দেশছাড়া করব। নৈতিকতা বিভাগ শক্ত বার্তা দিতে চায় যে বাংলাদেশে খেলাটা স্বচ্ছ থাকবে।’

৭ বছর কাজ করার পর গত বছর আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগের দায়িত্ব ছাড়েন মার্শাল। তখন এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, দুর্নীতিবাজেরা দুর্বল ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের মাধ্যমে ক্রিকেটে ঢোকার চেষ্টা করে। এদিকে বিসিবির পরামর্শক হয়ে মার্শাল যেদিন ঢাকায় এসেছেন, সেদিনই বিপিএলের দুর্নীতির বড় খবর এসেছে প্রথম আলোতে।

বিপিএলকেও কি তিনি দুর্বল ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের কাতারেই রাখতে চান, এমন প্রশ্নে মার্শালের উত্তর, ‘যেকোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগেই বড় হুমকি হচ্ছে যখন তাতে দুর্বলতা দেখা যায়। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ পেশাদারভাবে না চললে ও যথেষ্ট নিরাপত্তাবেষ্টিত না হলে এটাকে দুর্নীতিবাজেরা লক্ষ্য বানাবেই। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে বিপিএলের যেন এমন ভাবমূর্তি না থাকে। যেভাবে টুর্নামেন্ট চলে, ফ্র্যাঞ্চাইজি দেওয়া হয়—নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সবকিছুই চূড়ান্ত পেশাদারত্বের সঙ্গে সামলাতে হবে।’

অ্যালেক্স মার্শাল তাঁর কথায় বারবারই ক্রিকেট খেলাটাকে সুরক্ষিত রাখার কথা বলেছেন। বলেছেন, এটাই তাঁদের প্রধান লক্ষ্য এবং সে জন্য দেশের ক্রিকেটার, কোচ, কর্মকর্তা সবাইকেই নৈতিকতা শিক্ষা দেওয়া হবে। ‘তাঁরা যেন বাংলাদেশের আইন, ইসলামিক আইন, মূল্যবোধ সম্পর্কে জানে। সব মিলিয়ে চেষ্টা করব খেলাটাকে কীভাবে আরও সুন্দরভাবে সুরক্ষিত রাখা যায়’—বলেছেন বিসিবি দুর্নীতি দমন ইউনিটের পরামর্শক।

আইসিসিতে একসময় ডোপিং–বিরোধী কার্যক্রমের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন মার্শাল। বাংলাদেশেও তাঁর কাজের পরিধির মধ্যে সেটা থাকবে।