জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) থেকে মনোনীত হয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক হন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। এরপর তিনি নির্বাচিত হন সভাপতি। ৭ই অক্টোবর বর্তমান বোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। তার আগেই আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে (সম্ভাব্য ৪ঠা অক্টোবর) বিসিবি’র নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন বর্তমান বোর্ড। সিলেটে কার্যনির্বাহী কমিটির সভা শেষে এমনটিই নিশ্চিত করেছেন বিসিবি’র পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম। তার পরদিনই গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে বিসিবি’র নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বর্তমান সভাপতি বুলবুল। জানা গেছে, তিনি এবার জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কোটায় পরিচালক হবেন না! তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, তিনি পরিচালক পদে নির্বাচন করবেন কোথা থেকে? বেশ কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, তিনি ঢাকা বিভাগ থেকে কাউন্সিলর হয়ে নির্বাচন করতে পারেন। তার মানে এনএসসি থেকে পরিচালক হবেন অন্য কেউ। এরমধ্যে একজন নাজমুল আবেদীন ফাহিম প্রায় নিশ্চিত। দ্বিতীয় পরিচালক হিসেবে নতুন কাউকেই দেখা যাবে। মূলত ২৩ জন পরিচালক হবেন নির্বাচিত হয়ে আর দু’জন এনএসসি থেকে। এরপরই বুলবুল করবেন সভাপতি নির্বাচন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবালের নাম শোনা যাচ্ছে। তিনি হয়তো ক্লাব থেকেই কাউন্সিলর হয়ে পরিচালক পদে নির্বাচন করবেন। সেখান থেকে পাস করে এলেই তিনি সভাপতি পদে নির্বাচন করতে পারবেন। সভাপতি হতে ১৩ পরিচালকের ভোট প্রয়োজন। দেখার বিষয় সভাপতির ভোটের বাজারে কার পাল্লা শেষপর্যন্ত ভারী হয়! যতটা জানা গেছে বুলবুলের ভোটে অংশ নেয়ার এ নয়া সমীকরণটা বিসিবি’র নির্বাচনে অন্যদের সভাপতি হওয়ার সম্ভাবনাকে বেশ কমিয়ে দিয়েছে।
দেশের ক্রিকেটের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুল, যিনি বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে নিজেকে ‘কুইক টি-টোয়েন্টি’ ব্যাটসম্যানের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন, এবার সেই স্বল্পমেয়াদের ভাবনা থেকে সরে এসেছেন। তিনি এখন ঘোষণা দিয়েছেন, ক্রিকেটের সর্বোচ্চ প্রশাসনে তিনি একটি ‘লম্বা টেস্ট ইনিংস’ খেলতে চান। বোর্ডের আগামী নির্বাচনে পরিচালক পদে লড়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘কালকে আমাদের ফাহিম ভাই (বিসিবি পরিচালক নাজমুল আবেদীন) বোর্ডের পক্ষ থেকে ঘোষণা করেছেন যে, অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে আমরা নির্বাচন (আয়োজন) করবো এবং প্রপার নির্বাচন করবো। এখানে সভাপতি নির্বাচন হয় না। এখানে পরিচালকদের নির্বাচন হয়। সেটা প্রথম লক্ষ্য এবং সেখানে থাকার চেষ্টা করবো। পরবর্তীতে যদি সুযোগ হয়, চেষ্টা করবো যেভাবেই হোক বাংলাদেশকে সার্ভ করার জন্য।’ ঢাকা বিভাগের মোট ১২ জেলা। এরমধ্যে থেকে বিসিবি’র পরিচালক হবেন ২ জন। সবশেষ এই বিভাগ থেকে পরিচালক ছিলেন তানভীর আহমেদ টিটু ও নাঈমুর রহমান দুর্জয়। বিসিবি’র গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, আটটি বিভাগ এবং ৬৪টি জেলার আঞ্চলিক ও জেলা ক্রিকেট এসোসিয়েশন থেকে মোট ১০ জন পরিচালক নির্বাচিত হন।
আরেক সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবালও বিসিবি পরিচালক পদে নির্বাচন করার এবং পরবর্তীতে সভাপতি হওয়ার ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেছেন, তখন এই দুই সাবেক তারকার সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে।
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) নিয়ম করে দেয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি হতে হবে নির্বাচিত। সেই কারণেই ২০১৩ থেকে বিসিবি’র বর্তমান গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচিত পরিচালকরা নিজেদের মধ্য থেকে সভাপতি নির্বাচন করে আসছেন। সাবেক সরকারের এমপি পাপনই প্রথম নির্বাচিত সভাপতি, যিনি ২০১৩ সালের পর ২০১৭ এবং ২০২১-এও নির্বাচিত হন। তার দীর্ঘ ১৬ বছরের বিসিবি সভাপতি হিসেবে ক্ষমতার অবসান হয় দেশের রাজনীতির পট পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে। গণআন্দোলনে সরকার পতনের পর গত বছর ২১শে আগস্ট ফারুক আহমেদ বিসিবি’র সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে তার মেয়াদ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি এবং অনাস্থা প্রস্তাবের মাধ্যমে তাকে সরিয়ে বুলবুলকে এই পদে আনা হয়। এখন বুলবুল নিজেই পরিচালক পদে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। জানা গেছে বিসিবি’র পরিচালক পদে নির্বাচন করতে পারেন ফারুক আহমেদও। গুঞ্জন ছিল তিনি হয়তো জেলা বিভাগ থেকে কাউন্সিলর হয়ে আসবেন। তবে সেই সম্ভাবনা এখন ক্ষিণ।