ব্রাজিলের হয়ে নিজের লক্ষ্যের কথা শোনালেন জোয়াও পেদ্রো। ছবি: ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশন

‘স্পেশাল’ মারাকানায় এবার ব্রাজিলের জার্সিতে গোলের অপেক্ষায় পেদ্রো

পেশাদার ফুটবলে অভিষেক, প্রথম গোল, প্রথম হ্যাটট্রিক- জোয়াও পেদ্রোর এই সবকিছুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে রিও দে জেনেইরোর মারাকানা স্টেডিয়ামের নাম। তার হৃদয়ে বিশেষ জায়গা নিয়ে আছে ফুটবলের অনেক ইতিহাসের সাক্ষী এই মাঠ। এখানেই এবার প্রথমবার জাতীয় দলের জার্সিতে মাঠে নামার দুয়ারে তিনি। উপলক্ষটা গোল করে রাঙিয়ে রাখতে চান ২৩ বছর বয়সী ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড।

১০ বছর বয়সে ফ্লুমিনেসির একাডেমিতে পা রেখে, বয়স ১৮ হওয়ার আগে এই ক্লাবের হয়েই পেশাদার ফুটবলে অভিষেক হয় পেদ্রোর। বিখ্যাত মারাকানা স্টেডিয়াম এই ক্লাবের ঘরের মাঠ।

এখানেই বিশ্বকাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশ সময় আগামী শুক্রবার ভোরে চিলির মুখোমুখি হবে ব্রাজিল। তার আগে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে একটি লক্ষ্যের কথা শোনালেন পেদ্রো।

“আমার জন্য খুব বিশেষ স্টেডিয়াম এটি, এখানে আমার অভিষেক, প্রথম গোল, প্রথম হ্যাটট্রিক। তাই (এখানেই) আবার জাতীয় দলের জার্সি পরা এবং খেলতে পারা আমার ও আমার পরিবারের জন্য খুব বিশেষ মুহূর্ত হবে। আশা করি, (ব্রাজিলের হয়ে) আমার প্রথম গোল করতে পারব, এই মুহূর্তের জন্য আমি অপেক্ষা করে আছি এবং জানি তা আরও কাছে চলে এসেছে।”

ব্রাজিলের হয়ে পেদ্রোর অভিষেক হয় ২০২৩ সালে। জাতীয় দলের হয়ে এখন পর্যন্ত তিন ম্যাচ খেলে জালের দেখা তিনি পাননি।

বর্তমানে দারুণ ছন্দে আছেন পেদ্রো। গত জুলাইয়ের শুরুতে ব্রাইটন থেকে তিনি যোগ দেন চেলসিতে। যুক্তরাষ্ট্রে দলটির ক্লাব বিশ্বকাপ জয়ে তার ছিল বড় অবদান। নতুন ক্লাবের হয়ে প্রথমবার শুরুর একাদশে নেমেই চোখধাঁধানো দুটি গোল করেন তার শৈশবের ক্লাব ফ্লুমিনেসির বিপক্ষে। ওই আসরে তিন ম্যাচ খেলে গোল করেন তিনটি। এবারের প্রিমিয়ার লিগে চেলসির প্রথম তিন ম্যাচে তার গোল দুটি।

সবশেষ যখন ব্রাজিল দলে ডাক পেয়েছিলেন পেদ্রো, তখন তিনি ছিলেন ব্রাইটনে। বিশ্বের শীর্ষ ক্লাবগুলোর একটি চেলসিতে পাড়ি জমানোর কারণেই এখন তার পারফরম্যান্সের প্রভাব বেশি বলে মনে করেন তিনি।

চেলসির হয়ে শুরুটা দারুণ হয়েছে পেদ্রোর। ছবি: রয়টার্স
চেলসির হয়ে শুরুটা দারুণ হয়েছে পেদ্রোর। ছবি: রয়টার্স

“আমি তরুণ খেলোয়াড়, সবসময় উন্নতির চেষ্টা করি। আমার মনে হয়, চেলসিতে যোগ দেওয়ার পর মানুষ আমাকে আরও ভালোভাবে অনুসরণ করছে। দুই বছর আগের জোয়াও পেদ্রো অল্প বয়সী ছেলে ছিল, যে এখানে থাকতে চেয়েছিল। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ। আমার বিশ্বাস, ইউরোপের সবচেয়ে বেশি নজরে থাকা খেলোয়াড়দের একজন এখন আমি। কিন্তু পা মাটিতে রেখে আমাকে কঠোর পরিশ্রম করে যেতে হবে।”

শুধু ক্লাবের হয়ে উজ্জ্বল পারফরম্যান্সে বুঁদ হয়ে থাকতে চান না পেদ্রো। জাতীয় দলে জায়গা পাকা করারও লক্ষ্য তার।

“আমি কাজ করার চেষ্টা করি, আমার কাজটা করার চেষ্টা করি। যখন কেউ অন্যদের ওপর খুব বেশি মনোযোগ দেবে, তখন নিজেকে ভুলে যাবে। আমি ইংল্যান্ডে, আমার ক্লাবে আমার কাজটা করার চেষ্টা করি, আমি জানি আমার ওপর সবার দৃষ্টি আছে। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্তটা কোচের। আমি বিশ্বাস করি, জাতীয় দলের জন্য সবসময় যা ভালো হবে, তিনি তাই করবেন। যদি আমি ভালো পারফর্ম করি, গোল করি, অ্যাসিস্ট করি, তাহলে আমি এখানে থাকব।”

ব্রাজিল দলের প্রাণভোমরা নেইমার অনেক দিন ধরেই জাতীয় দলে নেই দফায় দফায় চোটের কারণে। আক্রমণভাগের আরও দুই তারকা ভিনিসিউস জুনিয়র ও রদ্রিগোকেও আসছে দুই ম্যাচের স্কোয়াডে রাখেননি ব্রাজিল কোচ কার্লো আনচেলত্তি। পেদ্রোর সামনে তাই খেলার এবং দলে জায়গা মজবুত করার খুব ভালো সুযোগ।

ব্রাজিলের অন্য অনেকের মতো পেদ্রোরও ফুটবলার হয়ে ওঠার পথ সহজ ছিল না। তার জন্ম সাও পাওলোতে। বাবা জোসে জোয়াও দে জেসুসও ছিলেন ফুটবলার, খেলতেন বতাফোগোয়। ব্রাজিলের ফুটবলে তিনি পরিচিত ছিলেন চিকাও নামে। মাত্র ২৩ বছর বয়সে খুনে সহায়তায় অভিযোগে ১৬ বছরের জেল হয় তার। আট বছর পর তিনি মুক্তি পেলেও পরের বছরই আবার গ্রেপ্তার হন প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে মানুষকে হুমকি দেওয়ায়।

ব্রাজিলের জার্সিতে চতুর্থ ম্যাচ খেলার অপেক্ষায় পেদ্রো। ছবি: রয়টার্স
ব্রাজিলের জার্সিতে চতুর্থ ম্যাচ খেলার অপেক্ষায় পেদ্রো। ছবি: রয়টার্স

চিকাও প্রথমবার জেলে যাওয়ার সময়ই স্ত্রীর সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। ছেলে পেদ্রোকে নিয়ে তার মা পাড়ি জমান রিও দে জেনেইরোয়। সেখানে পেদ্রোর পা পড়ে ফ্লুমিনেসির একাডেমিতে। ক্লাবটিতে নিজেকে ফুটবলার হিসেবে গড়ে তোলার একপর্যায়ে খেলা ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভেবেছিলেন তিনি। সেখান থেকে এতদূর আসতে পারায় পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন পেদ্রো।

“আমার পরিবারের সমর্থন অপরিহার্য ছিল। যুব একাডেমিতে একটা সময় ছিল, যখন আমি ফুটবল ছেড়ে দেওয়ার কথা ভেবেছিলাম। জীবন কঠিন হয়ে পড়েছিল এবং ফ্লুমিনেসিতে আমি খুব বেশি সুযোগ পাচ্ছিলাম না। আমার মা একজন লড়াকু মানুষ; এখন তিনি টিভিতে আমাকে দেখেন, আমাকে নিয়ে খুব গর্বিত। যখন আমি জাতীয় দলের জার্সি পরি, তখন আমি তাকে প্রতিনিধিত্ব করি। অবশ্য শুধু তাকে নয়, দেশেরও।”