কেবল বার্সেলোনা নয়, লা লিগার নিয়মের কড়াকড়িতে ভুগছে আরও অনেক ক্লাব
লা লিগার মাঠের লড়াই শুরু হয়ে যায়, কিন্তু বার্সেলোনার খেলোয়াড় নিবন্ধন নিয়ে জটিলতা কাটে না- কাতালান ক্লাবটিকে কেন্দ্র করে গত কয়েক মৌসুম ধরেই এটা নিয়মিত চিত্র। প্রতিবারই স্পেনের শীর্ষ প্রতিযোগিতাটির কঠোর আইন নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলে ঢের, কিন্তু পরিস্থিতির আর বদল হয় না। সমস্যাটি অবশ্য কেবল বার্সেলোনার একার নয়, কিছু ক্লাবকে তাদের চেয়েও বেশি ভুগতে হয়।
এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। তাইতো, পুরোনো একটি আলাপও নতুন করে সামনে আসছে। অনেকের অভিযোগ, বেতন কাঠামো নিয়ে লিগ কর্তৃপক্ষের এমন কঠোর অবস্থানের কারণে দিনশেষে ক্লাবগুলো দুর্বল হচ্ছে এবং যার প্রভাবে লা লিগার আবেদন কমছে।
প্রতিটি ক্লাবের আয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তাদের ওপর একটি খরচের সীমা বেঁধে দেয় লা লিগা কর্তৃপক্ষ, মূলত ওই বিধিনিষেধটা আরোপিত হয় খেলোয়াড়দের বেতন কাঠামো ঘিরে। আর এতেই তৈরি হয় যত সমস্যা।
গণমাধ্যমের খবর, এবার যেমন লা লিগা শুরুর দুদিন আগেও ১৫৮ জন খেলোয়াড় নিবন্ধন করাতে পারেনি ক্লাবগুলো। সেই সময় থেকে প্রায় দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে, বার্সেলোনা অবশ্য তাদের ‘খেলোয়াড় নিবন্ধন’ নিয়ে সমস্যা কাটিয়ে উঠেছে; কিন্তু অনেক দলই এখনও তাদের সব খেলোয়াড়কে নিবন্ধণ করাতে পারেনি।
গ্রীষ্মের দলবদলের আর মাত্র ছয় দিন বাকি আছে; কিন্তু এখনও ওই সমস্যায় জর্জরিত মাঝারি মানের বেশ কিছু ক্লাব। সত্যিকার অর্থে বার্সেলোনার চেয়ে এই দলগুলোর সমস্যাই বড় আকার নিয়েছে।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলোর সঙ্গে স্পেনের ক্লাবগুলোর পরিস্থতির তুলনা টানলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়।
ইংলিশ ফুটবলে এবার নতুন খেলোয়াড় কেনায় দ্বিতীয় স্তর থেকে প্রিমিয়ার লিগে উঠে আসা লিডস ইউনাইটেড খরচ করেছে ১১ কোটি ৪০ লাখ ইউরো, বার্নলি খরচ করেছে ১২ কোটি ৬০ লাখ ইউরো, সান্ডারল্যান্ড ১৬ কোটি ৫০ লাখ ইউরো। সেখানে স্পেনের ক্লাব গেতাফের খরচ ১৮ লাখ ইউরো আর সেভিয়া কেনো খরচ করেনি। তারপরও, এখনও এই দুই ক্লাব তাদের সব খেলোয়াড়কে নিবন্ধন করাতে পারেনি।
পুরো বিষয়টি নিয়ে বেশ ক্ষুব্ধ গেতাফের প্রেসিডেন্ট আনহেল তরেস। তিনি তার মনের ক্ষোভ চেপে রাখার চেষ্টাও করছেন না। সমস্যার সমাধানে একরকম বাধ্য হয়ে নিজের দলের সেরা খেলোয়াড় ক্রিস্টানটাস উচেকে বিক্রি করে দিতে হচ্ছে বলে জানালেন তিনি।
ডিএজেডএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেন, লা লিগার এত কড়াকড়ির কারণে টুর্নামেন্টের ক্ষতি হচ্ছে।
“আমাদের (খেলোয়াড়) বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। এভাবে বিক্রি করে আমরা লা লিগাকে ধ্বংস করছি। কিন্তু নিয়ম তো নিয়মই এবং সেটা আমাদের মানতে হচ্ছে…উচেকে বিক্রি করে দিতে আমি বাধ্য হচ্ছি।”
প্রিমিয়ার লিগের একটি ক্লাবে যোগ দিতে যাচ্ছেন উচে, জানালেন গেতাফে প্রধান। লিগ কর্তৃপক্ষের বেঁধে দেওয়া বেতন সীমার মধ্যে থাকতেই তাকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে, এবং এতে খুবই ক্ষুব্ধ তিনি।
“তাকে (উচেকে) বিক্রি করতে আমি বাধ্য হচ্ছি, আমার আর কোনো উপায় নেই। আগামীকাল (সেখানে) তার মেডিকেল হবে এবং চুক্তি সম্পন্ন হবে।”
সোমবার রাতে সেভিয়ার বিপক্ষে ২-১ গোলে জয়ের পর, সংবাদ সম্মেলনে গেতাফের কোচ হোসেই বোর্দালাসের কণ্ঠেও ফুটে উঠল একইরকম হতাশা।
“আসুন প্রার্থনা করি, সে যেন চলে না যায়। তার চলে যাওয়ার বিপক্ষে আমি; আমাদের জন্য সে খুব গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় এবং প্রতিদিন সবকিছু আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। প্রতি মৌসুমে আমরা নতুন করে শুরু করতে পারি না। আমার দল কেমন হবে, সেটা না জেনেই (মৌসুম) শুরু করতে পারি না আমরা।”
স্পোর্তের মঙ্গলবারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গেতাফে তার মূল দলের ছয়জনকে এখনও লিগে নিবন্ধন করাতে পারেনি।
প্রায় একই রকম পরিস্থিতি সেভিয়ারও। ফরাসি ডিফেন্ডার লুইক বাদেকে আড়াই কোটি ইউরোয় বায়ার লেভারকুজেনের কাছে বিক্রি করার পর, ক্লাবটি সুইস মিডফিল্ডার রুবেন ভার্গাসকে নিবন্ধন করাতে পেরেছে। আর ধারে কিংবা ফ্রি এজেন্ট হিসেবে দলে আসা নতুন কোনো খেলোয়াড়কে এখনও নিবন্ধন করাতে পারনি সেভিয়া।
এবার এই জটিলতায় বেশ ভুগতে হয়েছে লেভান্তেকেও। আসর শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগেও তাদের অনিবন্ধিত খেলোয়াড় ছিল অনেক। সময়ের সঙ্গে অবশ্য বেশ কিছু খেলোয়াড়কে নিবন্ধন করাতে পেরেছে তারা, তবে এখনও বাকি আছে কিছু।
কেবল এই ক্লাবগুলোয় নয়, লা লিগার আরও অনেক ক্লাবকেই এই সমস্যার মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে এবং প্রতি বছরই। সমস্যা এড়াতে অনেক ক্লাব আবার চাহিদার তুলনায় কম খেলোয়াড় কিনছে, এতে লক্ষ্যপূরণের জন্য নিজেদের স্কোয়াডকে শক্তিশালী করতে পারছে না তারা।
ফলে, ক্লাবগুলোর সমর্থক থেকে শুরু করে ফুটবল বিশেষজ্ঞদের অনেকের অভিমত, এভাবে এই নিয়মের কড়াকড়ি করে লা লিগা কর্তারাই অন্যান্য লিগ থেকে এই প্রতিযোগিতাকে পিছিয়ে দিচ্ছে।