দুটি ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলতে গত ৩রা সেপ্টেম্বর নেপাল এসেছিল বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। ৬ই সেপ্টেম্বর প্রথম ম্যাচের পরেই কাঠমান্ডুতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে আটকা পড়েন ফুটবলাররা। বাতিল হয়ে যায় ৯ই সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় ম্যাচ। ওইদিনই দলকে দেশে ফিরিয়ে নিতে চেষ্টা শুরু করে বাংলাদেশ সরকার। তবে আন্দোলনের তীব্রতার কারণে বাতিল হয়ে যায় বাংলাদেশ দলের মঙ্গলবারের দেশে ফেরা। আন্দোলনকারীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় নেপালের ত্রিভুন বিমানবন্দর। বন্ধ হয়ে যায় সকল আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। যা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় সংশ্লিষ্টরা। তবে বাংলাদেশ দলকে দেশে ফিরিয়ে নেয়ার চেষ্টা থেমে নেই। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন সরকারের সহায়তায় জামালদের দেশে ফিরিয়ে নেয়ার চেষ্টা চলমান রেখেছে। জানা যায়, ড্রিমলাইনারের একটি বিশেষ ফ্লাইটে আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় কাঠমান্ডু ছাড়বে বাংলাদেশ ফুটবল দল। বাফুফে সূত্রে জানা গেছে নেপালের অনুমতি পেলেই কাঠমান্ডু আসবে বিশেষ বিমান। যে বিমানে ফুটবলারদের সঙ্গে দেশে ফিরবেন ম্যাচ কভার করতে এসে আটকে পড়া বাংলাদেশি সাংবাদিকরাও।
নেপাল পুরোপুরি শান্ত হয়নি এখনও। জামাল-মিতুল-সোহেলরা এখনও টিম হোটেলে ‘বন্দি’। জেন-জি’র আন্দোলনের মুখে নেপালের প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ এবং সেনাবাহিনী দায়িত্ব নেওয়ার পর পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো। তারপরও খেলোয়াড়েরা হোটেলের বাইরে বের হচ্ছেন না। হোটেলের ফিটনেস সেন্টারে ঘাম ঝরিয়ে, দেশে পরিবার-পরিজনের সাথে কথা বলে সময় কাটাচ্ছেন। সেখান থেকেই ভিডিও বার্তায় মিডফিল্ডার সোহেল রানা বলেন, গতকালকের থেকে আমাদের আজকের (গতকাল) অবস্থা খুবই ভালো। গতকাল নেপালে যে একটা পরিস্থিতি ছিল কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত। যেহেতু সেনাবাহিনী সব কিছুর দায়িত্ব নিয়েছে, তো আমাদের বর্তমান অবস্থা ভালো।’ পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে জানিয়ে জাতীয় দলের এই মিডফিল্ডার বলেন, ‘পরিবারের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। যেহেতু এখন নিরাপত্তার বিষয়গুলো সেনাবাহিনীর হাতে, তো এমন পরিস্থিতিতে দেশে পরিবারের সবাই এখন আর চিন্তা করছে না। হোটেলে আমরা খুব ভালো অবস্থায় রয়েছি। সব মিলিয়ে পরিবার এখন চিন্তা মুক্ত রয়েছে।’ ডিফেন্ডার তপু বর্মণ জানিয়েছেন, টিম হোটেলের ফিটনেস সেন্টারে এদিন সকালে অনুশীলন করেছেন তারা। প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ না থাকায় ফিটনেস ধরে রাখার দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আসলে গতকাল যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, হঠাৎ করেই আমরা একটা সমস্যার মুখোমুখি হই। আজকে যে অবস্থা আমরা সবাই বুঝতে পারছি এবং দেখছি, নেপাল খুবই শান্ত আছে। যে দুশ্চিন্তা আমাদের ছিল, আমাদের পরিবারের ছিল, প্রতিটি খেলোয়াড় সবার পরিবারের সাথে কথা বলেছে, তাদেরকে বুঝিয়েছে আসলে কী সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি এবং এখন কেমন আছি।
নিশ্চিতভাবেই আমার মনে হয়, আমরা এখন যেভাবে আছি, নিরাপদ আছি।’ সোহেল বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে জানতে পেরেছি, আমাদের সভাপতি তাবিথ আউয়াল ভাই এবং উপদেষ্টা (আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া) সবার সঙ্গে কথা বলছে যে, কিভাবে আমাদের নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে নেওয়া যায়। এ নিয়ে তারা কাজ
করছে। সবসময় আমাদের সঙ্গে যোগযোগ করছে এবং খোঁজখবর নিচ্ছে।’ নকশালের হোটেল ক্রাউন ইম্পিরিয়াল হোটেলে আছে বাংলাদেশ ও নেপাল জাতীয় ফুটবল। এর পাশের এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে আগুন দেয় আন্দোলনকারীরাা। এক পর্যায়ে ঢোকার চেষ্টা করে ক্রাউন ইম্পিরিয়াল হোটেলে। তাদেও ধারণা ছিল বাড়ি থেকে পালিয়ে এই হোটেলে আশ্রয় নিয়েছেন নেপাল সরকারের মন্ত্রীরা। হোটেল গেটে প্রবেশের মুখে তারা জানতে পারে এখানে অবস্থান করছে বাংলাদেশ ফুটবল দল। এটা শুনে আন্দোলনকারীররা সেখানে আর প্রবেশ করেনি। এসময় আন্দোলনকারীদের কর্মকাণ্ড ভিডিও করছিলেন বাংলাদেশ দলের দুই ফুটবলার। এটা দেখে আবারও তারা হোটেল প্রবেশ করতে চায়। পরবর্তীতে ফুটবলাররা বিক্ষোভকারীদের সামনে সেই ভিডিও ডিলিট করলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এতেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে টিম হোটেলে। তবে গতকাল তেমন কোনো পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি ফুটবলারদের। এদিকে গতকাল দুপুরে বিমানবন্দর নিয়ন্ত্রণে নেয় নেপালের সেনাবাহিনী। আজ সকাল থেকে শুরু হতে পারে ফ্লাইট উড্ডয়ন ও অবতরণ।