অনূর্ধ্ব-২৩ দলের ব্যর্থতায়ও কাঠগড়ায় কাবরেরা

অনূর্ধ্ব-২৩ দলের ব্যর্থতায়ও কাঠগড়ায় কাবরেরা

এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাই পর্বের এক ম্যাচ আগেই বিদায় নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশের। অথচ সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েই দলকে ভিয়েতনাম পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। বাহরাইনে দুই সপ্তাহের অনুশীলন ও দু’টি প্রীতি ম্যাচ; সব মিলিয়ে এক মাসের অনুশীলন। ফাহমিদুল, কিউবা মিচেল, মোরসালিন, আল আমিন, মজিবর রহমান জনিদের নিয়ে শক্তিশালী স্কোয়াড। এরপরের হতাশার মধ্যদিয়ে দলের বিদায় নিশ্চিত হওয়ায় অনেকে ক্ষুব্ধ টিম ম্যানেজমেন্টের ওপর। অনেকে আবার এর দায় দিচ্ছেন জাতীয় দলের হেড কোচ হাভিয়ের কাবরেরার ওপর। বাফুফে’র নির্বাহী কমিটির সদস্য গোলাম গাউস বিরক্ত ও হতাশ। তিনি সরাসরি কোচের খেলোয়াড় পরিবর্তন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক জাহিদ হাসান এমিলি এত প্রস্তুতির পরও এমন ব্যর্থতায় কোচিং স্টাফের পাশাপাশি সিনিয়র ফুটবলারদেরও দায়ী করেছেন। গ্রুপে প্রথম ম্যাচে ভিয়েতনামের কাছে পাত্তাই পায়নি বাংলাদেশ। হেরেছে ২-০ গোলে। পরের ম্যাচে ইমেয়েনের কাছে হার একেবারে শেষ মুহূর্তের গোলে। টানা দুই হারে বাংলাদেশ টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গেছে। কোচ হাসান আল মামুন ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে ফুটবলারদের জন্য এই টুর্নামেন্ট শিক্ষণীয় এবং ভবিষ্যতের অনুপ্রেরণা হিসেবে মন্তব্য করেছেন। এই মন্তব্যেও নাখোশ হয়েছেন ফেডারেশনের কর্তারা।

তাদের যুক্তি, অনূর্ধ্ব-২৩ প্রায় জাতীয় দলই। এখানে পারফরম্যান্স করার ক্ষেত্র ১৪-১৯ বয়সভিত্তিক পর্যায় শেখার জায়গা। কোচের এমন মন্তব্য যেন নিজের দায় এড়ানো। অনূর্ধ্ব-২৩ দলের হেড কোচ ছিলেন সাইফুল বারী টিটু। তবে নেপথ্যে দল সাজিয়েছেন জাতীয় দলের স্প্যানিশ হেড কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। জাতীয় দলে তার সহকারী হাসান আল মামুন কাবরেরার নির্দেশনা অনুযায়ী অনূর্ধ্ব-২৩ দল পরিচালনা করেছেন। বাহরাইনে প্রীতি ম্যাচে মামুনই ডাগ আউটে ছিলেন। ২৩ দলের কোচ হতে এএফসি প্রো লাইসেন্স লাগে এজন্যই টিটুর শারীরিক উপস্থিতি। ভিয়েতনামে গিয়ে টিটু অসুস্থ হয়ে পড়ায় সেই মামুনই ছিলেন ডাগ আউটে। বিভিন্ন সুত্রের দাবি, একাদশ গঠন ও খেলোয়াড় পরিবর্তনের সময়ও নাকি কাবরেরার দেওয়া। তাই ব্যর্থতার মূল দায়টা কাবরেরাকেই দিচ্ছেন এমিলি। জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক বলেন, ‘মামুন ভাই সামনে থাকলেও পেছনে কে ছিলেন সেটা সবারই জানা। মামুন ভাই তার নির্দেশনাই অনুসরণ করেছেন। কাবরেরার যোগ্যতা-সামর্থ্য এবং বিচক্ষণতা নিয়ে আগেই প্রশ্ন উঠেছে। ফলে তার সহকারী বিশেষ কিছু করবেন সেটা প্রত্যাশা করা বাস্তবিক নয়।’ এক্ষেত্রে তিনি মোহামেডানের উদাহরণ টেনে বলেন, ‘শেন লি’র সহকারী ছিলেন আলফাজ ভাই। শেন ভালো মানের কোচ ছিলেন। তাকে কাছ থেকে দেখে আলফাজ ভাই মোহামেডানকে সাফল্য এনে দিয়েছেন। যেখানে হেড কোচ কাবরেরাই প্রশ্নবিদ্ধ সেখানে তার সহকারীর কাছে কী আশা করা যায়!’ হাসান আল মামুন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক। শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবে শফিকুল ইসলাম মানিকের সহকারী হিসেবে তার কোচিং ক্যারিয়ার শুরু। এরপর সেভাবে আর কোনো ক্লাবের হয়ে কাজ করেননি। ফেডারেশনে যোগদানের পর এক পর্যায়ে জাতীয় দলে সহকারী কোচ হিসেবে কাজ করছেন। বিশেষত স্প্যানিশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরার গুড বুকে আছেন তিনি। ক্লাব পর্যায়ে হেড কোচের দায়িত্ব পালন না করায় মামুনই অনূর্ধ্ব-২৩ দলে সর্বেসবা। সাবেক জাতীয় ফুটবলার ও কোচ জুলফিকার মাহমুদ মিন্টু অনূর্ধ্ব-২৩ দলের ব্যর্থতার জন্য ফুটবলীয় সিস্টেমকে দায়ী করে বলেন, ‘আমাদের সিস্টেমেই গলদ রয়েছে। সিস্টেম পরিবর্তন না হলে আন্তর্জাতিক ফুটবলে সাফল্য আসবে না। শুধু সার্টিফিকেট ভিত্তিক কোচ নয়, সুশিক্ষিত কোচ তৈরি করতে হবে। সেই কোচরাই স্বশিক্ষিত ফুটবলার বানাবে। পাশাপাশি ক্লাব-ফেডারেশন সংস্কৃতি-কাঠামোতে পরিবর্তন এলে ইতিবাচক ও টেকসই ফলাফল প্রত্যাশা করা যায়।’