কল্পকাহিনী নির্ভর হলিউড, বলিউড এবং ঢালিউডের নানা সিনেমায় নায়ক বা ভিলেনদের মোটরসাইকেল নিয়ে আকাশে উড়তে দেখা গেছে। যদিও তা সবসময় ভিএফএক্স বা বিশেষ প্রযুক্তির মাধ্যমে দেখানো হয়েছে, বাস্তবতা ছিল আলাদা। কিন্তু এবার সত্যই আকাশে উড়বে মোটরসাইকেল।
পোলেন ভিত্তিক উদ্ভাবনী প্রতিষ্ঠান ভোলনট বাজারে নিয়ে আসতে যাচ্ছে এক অভিনব উড়ন্ত মোটরসাইকেল, যার নাম ভোলনট এয়ারবাইক। এটি দেখতে অনেকটা স্টার ওয়ার্স সিনেমার ‘স্পিডার বাইকের’ মতো। মোটরসাইকেলটি ইতোমধ্যেই পরীক্ষামূলকভাবে সফলভাবে আকাশে উড়েছে।
এ প্রযুক্তির কল্যাণে আগামীতে আর সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে বসে থাকা লাগবে না। এমনকি গন্তব্যে পৌঁছানো যাবে দ্রুত।
ভোলনট এয়ারবাইকের নকশা তৈরি করেছেন এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার টমাস পাটান, যিনি এর আগে ‘জেটস’ নামের একটি ফ্লাইং ভেহিকেল প্রকল্পেও যুক্ত ছিলেন।
একক যাত্রী পরিবহনের জন্য ডিজাইন করা এয়ারবাইকটি সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক শক্তিতে চলে। মোটরসাইকেলের মতো স্টাইলের এই যানে রয়েছে ছয়টি বড় ইলেকট্রিক রোটর, যা ড্রোনের মতো উপরে ওঠা ও ভারসাম্য রক্ষার কাজ করে। এটি একবারে সর্বোচ্চ ২.৫ মিটার উচ্চতায় উঠতে পারে এবং ঘণ্টায় ৭৫ কিলোমিটার গতিতে চলতে সক্ষম। নির্মাতাদের দাবি, ভবিষ্যতে এর গতি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ানো যাবে।
বর্তমানে এর একটানা ফ্লাইট টাইম ২০ থেকে ৩০ মিনিট— যা নির্ভর করে চালকের ওজন ও আবহাওয়ার অবস্থার উপর। যেহেতু এটি সম্পূর্ণ ব্যাটারি-চালিত, তাই ফুয়েল বা গ্যাসোলিনের প্রয়োজন হয় না। তবে ব্যাটারির স্পেসিফিকেশন ও চার্জিং টাইম এখনো প্রকাশ করেনি কোম্পানি।
ডিজাইন বুম ও নিউ অ্যাটলাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর নকশা ও ফ্লাইট কনসেপ্ট অনেকটা স্টার ওয়ার্স সিনেমার অনুপ্রেরণায় তৈরি হলেও প্রযুক্তি ও এরোডাইনামিক নীতিগুলো সম্পূর্ণ আধুনিক ও বাস্তব।
এটি বিশ্বের প্রথম উড়ন্ত মোটরসাইকেল নয়। এর আগে জেটসন ওয়ান, এক্স টুরিস্মো ও স্পিডার নামে আরও কিছু হোভার বাইক বাজারে এসেছে বা পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে। তবে ভোলনটের দাবি, তাদের এয়ারবাইক এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ ও ব্যবহারবান্ধব, যার নিয়ন্ত্রণ তুলনামূলকভাবে সহজ।
ভোলনট এয়ারবাইক ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ বাজারে আসতে পারে, যদিও নির্দিষ্ট তারিখ এখনও ঘোষণা হয়নি। দাম আনুমানিক ৩ লাখ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩ কোটি টাকা। তবে চূড়ান্ত মূল্য এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি কোম্পানি।
মূলত ব্যক্তিগত পরিবহন, অ্যাডভেঞ্চার এবং জরুরি সেবা প্রদানের জন্য তৈরি করা হলেও, জনসাধারণের জন্য এর ব্যবহার এখনো অনুমোদিত নয়। এর জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্স প্রয়োজন হবে।
কোম্পানিটি ইতোমধ্যেই কয়েকটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে দেখা যায় কিভাবে বাইকটি স্থিরভাবে আকাশে ভেসে থাকতে পারে এবং চালক সহজেই তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। যদিও এখনো এটি সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে, তবুও বিশেষজ্ঞরা বলছেন— ভবিষ্যতের ব্যক্তিগত পরিবহন ধীরে ধীরে আকাশে স্থান করে নিচ্ছে।
এমজে