বাজার দখল করা জনপ্রিয় ৫ স্মার্টফোন কোম্পানি কোনগুলো জানেন কী?

বাজার দখল করা জনপ্রিয় ৫ স্মার্টফোন কোম্পানি কোনগুলো জানেন কী?

আজকের দিনে স্মার্টফোন ছাড়া যেন কিছুই কল্পনা করা যায় না। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই ফোন হাতে নেওয়া, বাজারে ডিজিটাল পেমেন্ট, অনলাইন মুভি দেখা, সোশ্যাল মিডিয়ায় আপডেট থাকা বা প্রিয়জনদের সঙ্গে ভিডিও, চ্যাট সবই চলছে এই ছোট্ট ডিভাইসের মাধ্যমে। তবে স্মার্টফোন শুধু দরকারি কাজের জন্য নয় ,আপনার ফোনের ব্র্যান্ড অনেক সময় বলে দেয় আপনি কতটা শৌখিন, ফ্যাশন সচেতন।

কারো হাতে আইফোন দেখলে যেমন একটা আলাদা ইম্প্রেশন তৈরি হয়, তেমনি কেউ যদি নতুন কোনো ফ্ল্যাগশিপ অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহার করে, তখনো বোঝা যায় সে কতোটা প্রযুক্তিপ্রেমী।

আপনি কোন ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন ব্যবহার করছেন তা কিন্তু কিছুটা হলেও আপনার আর্থিক অবস্থার জানান দেয়। আপনার হাতের ফোনটাই কিন্তু বলে দিতে পারে আপনি কতটা স্টাইলিশ, আপনি কোন লাইফস্টাইলে বিশ্বাস করেন কিংবা আপনার পছন্দ কতটা আধুনিক।এই তালিকায় থাকা আরও ৫ ব্র্যান্ডের খুটিনাটি জেনে নেয়া যাক-

অ্যাপল

চলতি মাসেই নতুন আইফোন সিরিজ লঞ্চ করেছে অ্যাপল। এখন পর্যন্ত তাদের ৪ কোটি ৬৪ লাখ ফোন বাজারে এসেছে। অ্যাপল সবসময়ই প্রিমিয়াম স্মার্টফোনের প্রতিনিধিত্ব করেছে উচ্চ মানের নির্মাণ, সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারের মিল এবং একটি শক্তিশালী ইকোসিস্টেম। শক্তিশালী ইকোসিস্টেম এবং জনপ্রিয় আইওএস অপারেটিং সিস্টেম।

অ্যাপলের আইফোনগুলোর অন্যতম বড় শক্তি হলো এদের অপারেটিং সিস্টেম আইওএস, যা এমনভাবে ডিজাইন করা যে হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার একে অপরের কমপ্লিমেন্ট করে-প্রস্তুতকারক ও অপারেটরদের অল্প হস্তক্ষেপে আইওএস সবচেয়ে মসৃণ, রিপ্লেসমেন্ট কম, অ্যাপ ইনটিগ্রেশন ভালো হয়।

এছাড়া অ্যাপল ডিভাইসগুলোর মধ্যে আইফোন, আইপ্যাড, ম্যাক, ওয়াচ পারস্পরিক সংযোগ বা ইনটিগ্রেশন যেমন এয়ারড্রপ, কনটিনিউটি, হ্যান্ডঅফ, ইউনিভার্সাল কন্ট্রোল ইত্যাদি ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতাকে আরও উন্নত করে।অন্যদিকে গোপনীয়তা ও নিরাপত্তায় অ্যাপল অনেক ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে, ওএস আপডেট দেওয়ার গ্যারান্টি ও ডাটা‐নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর নিয়ন্ত্রণ বেশি থাকে।

স্যামসাং

অনেক বছর ধরেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্মার্টফোন নির্মাতাদের মধ্যে স্যামসাং একটি। এখন পর্যন্ত স্যামসাংয়ের ৫ কোটি ৮০ লাখ ফোন বাজারে এসেছে। তাদের জনপ্রিয়তা কেবল হার্ডওয়্যার‐স্পেস বেশি হওয়ার জন্য নয়, বরং ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা, সফটওয়্যার সাপোর্ট, নতুন প্রযুক্তির দ্রুত অন্তর্ভুক্তি ইত্যাদির কারণে।

বিশেষ করে গ্যালাক্সি এআই ও ওয়ান ইউআই-এর উন্নত ইন্টিগ্রেশন।স্যামসাংয়ের নতুন স্মার্টফোন সিরিজ (যেমন গ্যালাক্সি এস২৫ সিরিজ) এবং ফোল্ডেবল লাইন-আপে সময়ের সঙ্গে আরও বেশি করে এআই ফিচার যুক্ত করা হচ্ছে-গ্যালাক্সি এআই নামে একটি স্ট্যান্ডার্ড যা অনুশীলনাত্মক কাজ যেমন ভাষা অনুবাদ, ছবি এবং ভিডিও এডিটিং, রিয়েল টাইম আলোচনার বা স্ক্রিন‐শেয়ারিং বৈশিষ্ট্য ইত্যাদিতে কাজ করে।

অন্যদিকে ওয়ান ইউআই, যা স্যামসাংয়ের অ্যান্ড্রয়েড স্কিন, এ ধরনের এআই বৈশিষ্ট্য চলমানভাবে যুক্ত হচ্ছে এবং সফটওয়্যার‐আপডেট ও নিরাপত্তায় মোটা কথা বলা যাচ্ছে-বেশি সময়ের জন্য ওএস ও সিকিউরিটি প্যাচ পাওয়া যায় স্যামসাংয়ে।

শাওমি

চীনা এই স্মার্টফোন সংস্থা অল্পদিনেই বিশ্ববাজারে নিজের জায়গা তৈরি করতে পেরেছে। শাওমি অনেক ক্ষেত্রে ‘ভ্যালু‐ফর‐মানি’ দিক থেকে অপরাজেয়; অর্থাৎ, প্রিমিয়াম স্পেক কম দামেও পাওয়া যায় তাদের কাছ থেকে। উচ্চ পারফরমেন্স, দ্রুত চার্জিং, ক্যামেরায় প্রবল বিনিয়োগ তাদের জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে। শাওমির অনেক মডেলে দেখা যায় উচ্চ রেজোলিউশনের ডিসপ্লে, শক্তিশালী প্রসেসর, বড় ব্যাটারি এবং খুব দ্রুত চার্জিং প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।

বিভিন্ন এআই বৈশিষ্ট্য ও সফটওয়্যার ফাংশনও উন্নত হচ্ছে। শাওমির হাইপারওএস ও বিভিন্ন এআই টুল যেমন রিয়েল টাইম ট্রান্সক্রিপশন, স্মার্ট সার্চ, অডিও ও ভিডিও প্রসেসিং ইত্যাদিতে কাজ করছে।

এখন পর্যন্ত শাওমির ৪ কোটি ২৬ লাখ ফোন বাজারে এসেছে। ২০২৫ সালে এ সংখ্যা ১৫ কোটি ৫০ লাখে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ভিভো

চীনা স্মার্টফোন ব্র্যান্ড ভিভোর যাত্রা ২০০৯ সালে। তবে বিশ্ববাজারে ৯ দশমিক ২ শতাংশ অবদান রয়েছে ভিভোর। এখন পর্যন্ত ভিভোর ২ কোটি ৭২ লাখ ফোন বাজারে এসেছে। ২০২৫ সালে এ সংখ্যা ৬ কোটি ৫০ লাখে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ভিভো ব্র্যান্ডটি বিশেষভাবে চায় তাদের সংবেদনশীল ডিজাইন, ক্যামেরা পারফরমেন্স, এবং মিড-রেঞ্জ ও প্রিমিয়াম সেগমেন্টে ভালো বিকল্প প্রস্তাব করতে।

ভিভোর প্রিমিয়াম ফোনগুলোতে জেডইআইএসএস সহযোগিতায় ক্যামেরা আছে, যা প্রতিদ্বন্দ্বী‐ব্র্যান্ডগুলোর তুলনায় আলোতে ও অন্ধকারে ভালো পারফরমেন্স দেয়।

যেমন- ভিভো এক্স২০০ প্রো এর ২০০এমপি সেন্সরসহ অন্যান্য উচ্চ রেজোলিউশনের সেন্সর ব্যবহার করা হচ্ছে।তবে শুধু ক্যামেরাই নয়, দ্রুত চার্জিং প্রযুক্তি, বড় ব্যাটারি, এবং ইউজারের জন্য প্রাসঙ্গিক ইউআই ও ফিচারগুলো উৎসাহী করে তোলে। এর দাম নাগালের মধ্যে হওয়ায় ভিভো এশিয়ার বেশিরভাগ দেশেই বিশেষভাবে জনপ্রিয়।

ওয়ানপ্লাস

চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বিবিকে ইলেকট্রনিক্সের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ওয়ানপ্লাস, যারা প্রথম থেকেই ফ্ল্যাগশিপ কিলার ট্যাগলাইনে বাজার কাঁপিয়ে দিয়েছে। এখন পর্যন্ত ওয়ানপ্লাসের বাজারে এসেছে প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ স্মার্টফোন, এবং ২০২৫ সালের মধ্যে এই সংখ্যা ৩ কোটির ঘর ছাড়াতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

ওয়ানপ্লাস সবসময় তাদের হাই-এন্ড স্পেসিফিকেশন ও দুর্দান্ত সফটওয়্যার অভিজ্ঞতার জন্য পরিচিত। বিশেষ করে তাদের নিজস্ব ইউআই অক্সিজেনওএস ব্যবহারকারীদের মসৃণ ও ফ্লুইড পারফরমেন্স দেয়, যা স্টক অ্যান্ড্রয়েডের খুব কাছাকাছি।

নতুন মডেলগুলোতে যেমন ওয়ানপ্লাস ১২ সিরিজ বা ওয়ানপ্লাস ওপেন (ফোল্ডেবল) — এতে উন্নত এআই ফিচার, ৪৮-২০০ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা, ১২০ হার্জ অ্যামোলেড ডিসপ্লে, এবং দ্রুত চার্জিং প্রযুক্তি যুক্ত হয়েছে।ওয়ানপ্লাস ক্যামেরার ক্ষেত্রে হাসেলব্লাড পার্টনারশিপ করেছে, যার ফলে তাদের প্রিমিয়াম মডেলগুলোতে ফটোগ্রাফি অভিজ্ঞতা অনেক উন্নত হয়েছে—বিশেষ করে নাইট মোড, কালার টিউনিং ও প্রফেশনাল ক্যামেরা সেটিংসে।

তাছাড়া ওয়ানপ্লাস ফোনগুলোর ডিজাইন অনেকটাই মিনিমাল অথচ প্রিমিয়াম—যা ফ্যাশন সচেতনদের মধ্যে একটি বিশেষ অবস্থান তৈরি করেছে। সফটওয়্যার আপডেট, সিকিউরিটি প্যাচ, এবং গেমিং পারফরমেন্সেও ওয়ানপ্লাস একটি নির্ভরযোগ্য নাম। যারা স্টাইল, স্পিড ও স্ট্যাটাস সবকিছু একসাথে চান, তাদের জন্য ওয়ানপ্লাস হয়ে উঠতে পারে আদর্শ সঙ্গী।

ইএইচ