সাধারণত ধর্মীয় রীতি অনুসারে মুসলিম ছেলেশিশুদের এটি করা হয়। কিছু কিছু জন্মগত রোগেও সারকামসিশন করার নির্দেশনা আছে। এর মধ্যে আছে—
যখন পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগের চামড়া ধীরে ধীরে প্রস্রাবের রাস্তায় বাধা সৃষ্টি করে।
পুরুষাঙ্গের অতিরিক্ত চামড়ার অগ্রভাগ থেকে কিছুটা পেছনে আটকে ফুলে যেতে পারে, তখন খতনা করাটা জরুরি হয়ে পড়ে।
বারবার লিঙ্গে প্রদাহ হলে, যা ওষুধের মাধ্যমে ভালো হয় না, এসব ক্ষেত্রেও খতনা করার দরকার হয়।
‘স্মেগমাল সিস্ট’ যেখানে পুরুষাঙ্গের গ্ল্যান্স ও অতিরিক্ত চামড়ার মধ্যে ময়লা জমা হয়ে সিস্ট তৈরি করে, এসব ক্ষেত্রেও খতনা করার প্রয়োজন হয়।
এ ছাড়া অনেক সময় প্রস্রাবে ঘন ঘন সংক্রমণ হলেও অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক খতনা করার পরামর্শ দেন।
খতনার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
বিভিন্ন ধরনের যৌন সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
প্রস্রাবে সংক্রমণের ঝুঁকি কমায়।
ছোট বয়সে খতনা করলে পুরুষাঙ্গে ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকাংশেই কমে যায়।
এ ছাড়া পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন থাকাও সহজ হয়।
ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের জন্য খতনা সুন্নত। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে খতনা না করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।
যদি প্রস্রাব লিঙ্গের অগ্রভাগ দিয়ে না এসে নিচ দিয়ে আসে।
যদি প্রস্রাব বের হওয়ার রাস্তা স্বাভাবিক জায়গায় না থেকে ওপরে থাকে।
যদি লিঙ্গ বাঁকা থাকে।
প্রকৃতপক্ষে খতনা করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই। জন্মের পর থেকে যেকোনো বয়সেই খতনা করা যায়। কিছু কিছু ধর্মের মানুষ জন্মের পরপরই করে ফেলেন, কেউ কেউ পছন্দ করেন স্কুলে যাওয়ার আগের বয়সটা, আবার কেউ কেউ প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরও করেন। তবে কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় রেখে প্রাক্বিদ্যালয় বয়সটি বেশি গ্রহণযোগ্য। এই বয়সে শিশুদের প্রস্রাবের নিয়ন্ত্রণ চলে আসে, ডায়াপার পরানোর প্রয়োজন হয় না। এই বয়সে শিশুরা বড়দের উপদেশ মেনে চলে, পুরুষাঙ্গের আকারও কিছুটা বড় হয় এবং প্রস্রাবের গতিবিধি স্পষ্ট হয়, স্কুলের চিন্তা থাকে না, স্কুলের বন্ধুদের সামনে লজ্জায়ও পড়তে হয় না।
বিভিন্নভাবে অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে খতনা করানো যায়। শিশুদের জন্য লোকাল অ্যানেসথেসিয়ার চেয়ে ঘুম পাড়িয়ে (জেনারেল অ্যানেসথেসিয়া) করাটাই বেশির ভাগ চিকিৎসক পছন্দ করেন। কিন্তু অনেক মা–বাবা, আত্মীয়স্বজন জেনারেল অ্যানেসথেসিয়া নিয়ে খুব চিন্তিত থাকেন। জেনারেল অ্যানেসথেসিয়ায় ঝুঁকি কিছুটা থাকে, সে জন্য জ্বর, ঠান্ডা–কাশি, হাঁপানি, হৃদ্রোগ, কিডনি সমস্যা বা মানসিক বিকাশজনিত সমস্যা হলে অবশ্যই খতনা করার আগে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।
লোকাল অ্যানেসথেসিয়া শিশুদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক। হাত–পা চেপে ধরে খতনা করতে যেমন একদিকে মানসিক আঘাত পায়, অন্যদিকে অতিরিক্ত নড়াচড়ার কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত সার্জিক্যাল সমস্যাও হতে পারে।
খতনা করানোর অনেক পদ্ধতিই আছে। লেজার পদ্ধতি, ডিভাইসের ব্যবহার বর্তমানে বেশ প্রচলিত। একেকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক একেক পদ্ধতিতে অপারেশন করেন। তবে অবশ্যই অভিজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে খতনা করানো উচিত।
ডা. ফেরদৌসী আক্তার , শিশু সার্জারি বিশেষজ্ঞ