পূর্ণবয়স্কদের হঠাৎ কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন হয় কেন, কী করবেন
একবার এক ব্যক্তি কক্সবাজারে বেড়াতে যান। সমুদ্রস্নান করার কয়েক দিন পর তাঁর গলার স্বর পরিবর্তিত হয়ে যায়। তিনি খেয়াল করেন, আগের মতো করে কথা বলতে পারছেন না। কণ্ঠস্বর কেমন শোনাচ্ছে।
এ অবস্থা দেখে ওই ব্যক্তি চিকিৎসকের কাছে যান। দেখা যায় যে তাঁর জ্বর হয়েছে। বিশেষ করে কণ্ঠনালিতে প্রদাহ আছে এবং ভেতরটা একদম লাল হয়ে গেছে। একে বলা হয় অ্যাকিউট ল্যারিনজাইটিস বা স্বরযন্ত্রে অস্থায়ী প্রদাহ।
পরিস্থিতি দেখে চিকিৎসক ওই ব্যক্তিকে কিছু ওষুধ ও ব্যবস্থাপত্র দেন। পাশাপাশি উপদেশ দেন পরবর্তী কয়েক দিন যেন তিনি কথা কম বলেন।
এর এক সপ্তাহ পর দেখা যায়, ওই ব্যক্তির কণ্ঠনালির প্রদাহ আগের চেয়ে অনেকটা কমে গেছে। তিনি আগের মতোই কথা বলতে পারছেন অর্থাৎ তাঁর কণ্ঠস্বর স্বাভাবিক হয়েছে।
তবে কারও কারও এমন কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। এটা হতে পারে জটিল কোনো রোগের উপসর্গও। কণ্ঠস্বরের কেন পরিবর্তন হয়?
ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে কণ্ঠনালির প্রদাহ হতে পারে। এর কারণে সাময়িকভাবে কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন ঘটে।
কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন হওয়ার পেছনে আরও অনেক কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে ভোকাল কর্ড পলিপ, ভোকাল কর্ড নডিউল, ভোকাল কর্ড টিউমার বা ক্যানসার, থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি (হাইপোথাইরয়েডিজম), কণ্ঠনালির নার্ভ (রিকারেন্ট ল্যারিনজিয়াল নার্ভ) প্যারালাইসিস ইত্যাদি।
অনেক দিন ধরে উচ্চস্বরে কথা বলার অভ্যাস রয়েছে বা যাঁদের সাধারণ মানুষজনের চেয়ে বেশি কথা বলতে হয় যেমন হকার, রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, কণ্ঠশিল্পী ইত্যাদি পেশার মানুষের স্বর পরিবর্তনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি মানসিক কারণেও কথা বলা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
গলার স্বর যদি বসে যায় অর্থাৎ কণ্ঠস্বরে হঠাৎ কোনো পরিবর্তন আসে এবং সেই পরিবর্তন যদি ১৫ দিনের চিকিৎসায় ভালো না হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। একজন অভিজ্ঞ নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের কাছে যাবেন। তিনি আপনার ভোকাল কর্ড পরীক্ষা করে নিশ্চিত হবেন যে খারাপ কিছু হয়নি।
কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন হয়ে গেলে ভয়ের কিছু নেই। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় করলে এবং উপযুক্ত চিকিৎসা নিলে ভোকাল কর্ড ক্যানসারও সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়।
ডা. এম আলমগীর চৌধুরী, নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ ও অধ্যাপক, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ, ধানমন্ডি, ঢাকা