শিশুকে খাওয়াতে গিয়ে নিজেই হিমশিম খাচ্ছেন? প্রয়োগ করুন এই ৭ উপায়
সন্তানকে খাওয়াতে গিয়ে প্রায় সব মা-বাবাকেই উল্টো হিমশিম খেতে হয়। বিশেষত টডলার (২–৫ বছরের শিশুরা) হলে তো কথাই নেই। পছন্দের না হলে অনেক শিশু খাবার মুখেই তোলে না। কেউ কেউ আবার খাবার নিয়ে ভীষণ খুঁতখুঁতে। একটু এদিক সেদিক হলেই...ব্যস।
এটা শুধু বাংলাদেশি মা–বাবারই সমস্যা নয়; সারা বিশ্বেই মা-বাবাদের এর মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই চিন্তা আসে, ঠিকভাবে না খেলে সন্তানের পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে তো? তাই জেনে রাখুন এই সাত উপায়। প্রয়োগ করুন, উপকার মিলবে।
খেতে না চাইলে সঙ্গে সঙ্গে খাবার পরিবর্তন করেন অনেক অভিভাবক। তাঁদের জন্য একটা মজার তথ্য আছে। কোনো খাবার পছন্দ করবে কি না, এ সিদ্ধান্ত নিতে শিশুর কিছুটা সময় লাগে।
হতে পারে ১০ বারের বেশি চেষ্টার পর শিশুটি নির্দিষ্ট খাবার পছন্দ করছে। তাই খেতে না চাইলে চিন্তার কিছু নেই। বরং এটাই সাধারণ প্রতিক্রিয়া। ধীরে ধীরে নতুন পদের সঙ্গে তাকে পরিচয় করিয়ে দিন। যেটা আগে খেতে চায়নি, সেটা আবার চেষ্টা করুন।
আরেকটা কৌশল হলো, প্রিয় খাবারের সঙ্গে সামান্য পরিমাণে নতুন খাবার মিশিয়ে খাওয়ানো। আজ যেটা উপভোগ করছে না, এক মাস পর হয়তো সেটাই বারবার চাইবে।
বাসার ছোট্ট সদস্যটি আপনার দেওয়া সব খাবারই খাবে, এমনটা না–ও হতে পারে। তবে তার সামনে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর খাবার রাখাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নিজেই যেন বেছে নিতে পারে। তাকে বিভিন্ন রং, স্বাদ ও ধরনের ফল ও সবজির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ করে দিন। কিছু উদাহরণ—
শস্য, শিকড়/মূল, কন্দ এবং কলাজাতীয় খাবার। যেমন ভাত, গম, আলু, মিষ্টি
আলু, কচু ইত্যাদি
ডাল, মটরশুঁটি, বাদাম, বীজ ইত্যাদি
দুধ, দই ও পনির
মাংস, মাছ, মুরগি
ডিম
ভিটামিন এ–সমৃদ্ধ ফল ও সবজি
অন্যান্য ফল ও সবজি
আপনার সন্তান নির্দিষ্ট সবজি খেতে না চাইলে কাঁচা ও রান্না—দুভাবেই দিন। হয়তো একটি পছন্দ করবে, অন্যটি করবে না।
রান্না করার সময় আপনার ছোট্ট শিশুকেও সঙ্গে রাখুন। না পারলেও তাকে টুকটাক কাজ দিন। যেন সে মনে করে খাবার তৈরিতে তারও অবদান আছে। এতে ওই নির্দিষ্ট খাবার খাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।
সন্তানকে নিয়েই করতে পারেন দৈনন্দিন বাজার। তাকে বলুন, তার পছন্দের সবজি, ফল বা খাবারই আপনি কিনবেন। জেনে নিন, কিসে তার আগ্রহ। সেসবের নাম, ধরন, স্বাদ ও গন্ধ নিয়েও কথা বলতে পারেন।
বাসায় ফিরে তাকে যুক্ত করতে পারেন বয়স উপযোগী কাজে। যেমন ফল বা সবজি সাজিয়ে রাখা বা কাটার জন্য প্রস্তুত করা ইত্যাদি। এতে তারা নিজেকে নিয়ে গর্বিত হবে। নিজের প্রস্তুত করা খাবার চেখে দেখতে চাইবে।
খাবার শেষ না করে উঠলে অনেক অভিভাবকই সন্তানের সঙ্গে রীতিমতো যুদ্ধে নামেন। খেতে না চাইলে বা অল্প খেলে সমস্যা নেই। প্রয়োজন নেই জোর করা বা চাপ দেওয়ারও। বিকল্প হিসেবে জাঙ্ক ফুডকে আবার ‘হ্যাঁ’ বলবেন না।
শিশুর শরীরের ভাষা এবং ক্ষুধার কারণ বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি দেখেন, আপনার শিশুর ওজন স্বাস্থ্যসম্মতভাবেই বাড়ছে, সে সক্রিয় এবং সুস্থ, তাহলে চিন্তার কোনো কারণ নেই। সম্ভবত এই পরিমাণ খাবারই তার জন্য যথেষ্ট।
টডলার বা এর চেয়ে একটু বড়দের পাকস্থলী বড়দের মতো নয়। এর আকার পূর্ণবয়স্ক একজনের মুষ্টিবদ্ধ হাতের সমান প্রায়। এর ফলে সে তো মা-বাবা যতটা খায়, সে পরিমাণে খাবার খেতে পারবে না।
তাই বয়স অনুযায়ী পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার ব্যাপারে খেয়াল রাখুন। একটু খেলেও তার প্রশংসা করুন।
অনেকে ভালো কাজ বা ব্যবহারের পুরস্কার হিসেবে সন্তানকে খাবার দেন। এতে শিশুর মনে তৈরি হতে পারে জটিলতা। সে হয়তো ভাববে, মিষ্টির মতো খাবার ভালো, আর সবজির মতো খাবার খারাপ।
এ ধরনের চিন্তা ভবিষ্যতে তাকে অস্বাস্থ্যকর খাবার প্যাটার্নে অভ্যস্ত করতে পারে। এর পরিবর্তে তাদের সঙ্গে কিছু খেলার প্রতিশ্রুতি দিতে পারেন বা বাইর হাঁটতে নিয়ে যাওয়া ভালো।
শিশুরা তাদের পছন্দের মানুষের ব্যবহার দেখেই শেখে। চেষ্টা করে অনুকরণ করার। তারা আপনাকে স্বাস্থ্যকর বা নতুন খাবার খেতে দেখলে নিজেরাও খেয়ে দেখতে চাইবে। তখন একসঙ্গে বসুন, খাবার খান এবং প্লেটের খাবার নিয়ে কথা বলুন।
খাবার কতটা মজার, তা নিয়েও আলোচনা করতে পারেন। এতে সে অনুপ্রাণিত হবে।
সূত্র: ইউনিসেফ প্যারেন্টিং