আপনি কি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিতে আছেন? বোঝার উপায় জানালেন চিকিৎসক
বয়স, ওজন, পেটে জমা হওয়া চর্বি, রক্তের চর্বি, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ধূমপানের মতো নানান বিষয়ের সঙ্গে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকির সরাসরি সম্পর্ক আছে। হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি নির্ণয় করতে হলে এসব বিষয়ই খেয়াল করতে হবে আপনার।
নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ের মাধ্যমে আপনি এ ব্যাপারে ধারণা পেতে পারেন। তবে সব পরীক্ষা সবার জন্য জরুরি নয়। বিশেষ ধরনের পরীক্ষাগুলো কার প্রয়োজন আর কার প্রয়োজন নয়, শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে একজন চিকিৎসক সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন।
সাধারণত ৪০ বছর বয়সের আগে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কম থাকে।
মেনোপজের আগপর্যন্ত নারীদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি তুলনামূলক কম।
তবে জীবনধারা ও পারিবারিক ইতিহাসের কারণে এসব হিসাব বদলে যেতে পারে।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় না রাখলে কিংবা ধূমপান করলে ঝুঁকি বাড়বে।
হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমাতে সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি ধাঁচের শরীরচর্চা করা আবশ্যক।
ভারী ব্যায়াম করলে সপ্তাহে ৭৫ মিনিট ব্যায়াম করাই যথেষ্ট।
কিংবা এ দুই ধরনের ব্যায়ামের সমন্বয়েও হতে পারে সুস্থতার চর্চা।
কেউ যদি এই নির্দেশনামাফিক শরীরচর্চা না করেন, তাঁর হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেশি থাকবে।
পরিবারে হার্ট অ্যাটাকের ইতিহাস থাকলে পরবর্তী প্রজন্মগুলোতে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে।
উচ্চতা অনুযায়ী ওজন ঠিক রাখা খুবই জরুরি।
উচ্চতার সঙ্গে ওজনের এই সম্পর্ক আপনি নির্ণয় করতে পারবেন বডি মাস ইনডেক্স বা বিএমআইয়ের সাহায্যে।
নিজেও হিসাব করে নিতে পারেন বিএমআই, সাহায্য নিতে পারেন অনলাইন বিএমআই ক্যালকুলেটরেরও।
ওজন ঠিক থাকলেই হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি থাকবে না, এমনটাও ধরে নেওয়ার সুযোগ নেই। কারণ, পেটের ভেতর বিভিন্ন স্থানে জমা হওয়া চর্বির কারণে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে।
কোমরের মাপ হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকির একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক। এশীয় দেশগুলোর পুরুষের ক্ষেত্রে কোমরের মাপ ৩৫ দশমিক ৫ ইঞ্চি বা তার বেশি হলে এবং নারীর ক্ষেত্রে ৩১ দশমিক ৫ ইঞ্চি বা তার বেশি হলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে।
কোমর ও নিতম্বের মাপের অনুপাত আরও একটি ভালো নির্দেশক। এশীয় দেশগুলোর পুরুষের ক্ষেত্রে এই মাপ দশমিক ৯৫-এর বেশি হলে, নারীর জন্য দশমিক ৮৫-এর বেশি হলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে।
অনেক সময়ই উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও রক্তের চর্বি বেড়ে যাওয়ার কোনো উপসর্গ থাকে না।
এ ধরনের রোগে আক্রান্ত হলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে। তাই যেকোনো বয়সেই মাঝেমধ্যে রক্তচাপ মাপা উচিত।
বয়স ৪০ পেরোলে প্রতিবছরই ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা প্রয়োজন। আর সেটিও কেবল আঙুলের ডগার রক্ত নিয়ে নয়। বরং শিরা থেকে রক্ত নিয়ে খালি পেটে এবং ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ খাওয়ার দুই ঘণ্টা পর রক্তের সুগার মাপা উচিত।
এ ছাড়া ৪০ পেরোনো ব্যক্তির জন্য বছরে একবার রক্তে চর্বি (লিপিড প্রোফাইল) এবং এইচবিএওয়ানসির মাত্রা দেখাও জরুরি। এটিও ডায়াবেটিস নির্ণয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
আপনি চাইলে এ ধরনের কিছু তথ্য দিয়ে আপনার হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকির মাত্রা নির্ণয় করতে পারবেন অনলাইন ক্যালকুলেটরের সাহায্যে। এমনই একটি নির্ভরযোগ্য ক্যালকুলেটরের নাম এএসসিভিডি রিস্ক এস্টিমেটর প্লাস। আমেরিকান কলেজ অব কার্ডিওলজির এ ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে পারবেন বিনা মূল্যে।
২০-৭৯ বছর বয়সী যেকোনো ব্যক্তিই এখান থেকে নিজের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি নির্ণয় করতে পারবেন। স্কোর কত হলে কী বোঝায়, সেটিরও উল্লেখ আছে সেখানে।
যেকোনো ব্যক্তির স্বাস্থ্যের নানান দিক বিবেচনা করে একজন চিকিৎসক বিশেষ কিছু পরীক্ষার নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। ইসিজি, ইকোকার্ডিওগ্রাম, এক্সারসাইজ টলারেন্স টেস্ট (ইটিটি) এমন কিছু পরীক্ষা।
এ ছাড়া দেহের অভ্যন্তরে জমা হওয়া মেদের পরিমাণ জানা যায় ডেক্সা স্ক্যানের মাধ্যমে। ভিওটু ম্যাক্স পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা যায়, ব্যায়ামের সময় আপনার দেহ কতটা অক্সিজেন ব্যবহার করতে পারছে। তবে এ ধরনের পরীক্ষা সচরাচর করানোর প্রয়োজন পড়ে না।