৮৪ বছর বয়সেও যেভাবে ফিট আছেন দিলারা জামান

৮৪ বছর বয়সেও যেভাবে ফিট আছেন দিলারা জামান

শুটিং না থাকলে প্রতিদিন ফজরের সময় ঘুম থেকে ওঠেন। নামাজ পড়ে সকাল ৮টা পর্যন্ত শুয়ে থাকেন। এরপর তাঁর প্রথম কাজ দরজা খুলে পত্রিকা নেওয়া। পত্রিকা পড়তে পড়তে সকালের নাশতা করেন।

৪৩ বছর ধরে ডায়াবেটিস। ইনসুলিন নেন নিয়মিত। তাই সকালের খাবারে থাকে হাতে বানানো লাল আটার ১টি রুটি, সঙ্গে এক বাটি সবজি আর যেকোনো একটি ফল। নাশতা করার পর বিভিন্ন চ্যানেলের খবর দেখেন।

‘খালি বাসায় থাকি, ছেলেটাও অনেক সময় বাসায় থাকে না, তাই সব সময় টিভি ছেড়ে রাখি, এতে মনে হয় বাসায় অনেক লোকজন আছে।’ বলছিলেন দিলারা জামান।

তাঁর দুই মেয়ে, দুজনই দেশের বাইরে থাকেন। বাসায় থাকেন একজন পালিত ছেলে, যাকে ছোটবেলা থেকে বড় করেছেন। রান্না নিজেই করেন। খুব নিয়ম মেনে খান। দুপুরে ১ কাপ ভাত, ১ বাটি সবজি আর মাছ। ভালোবাসেন ছোট মাছ।

দুপুরে খানিকটা সময় টিভি দেখতে দেখতে বিশ্রাম নেন। কখনো আবার নাটকের স্ক্রিপ্ট মুখস্থ করেন।

দিলারা জামানের বাসার সামনেই বড় পার্ক। বিকেল চারটা বাজলেই হাঁটতে বের হন। হাঁটতে গিয়ে কিছু মানুষের সঙ্গে পরিচয়টা এখন ভালো বন্ধুত্বে পরিণত হয়েছে।

জানালেন, ‘ওরাই এখন আমার পরিবার। বাসায় ভালো কিছু রান্না হলে বাটিতে আমার জন্য নিয়ে আসে। ছাদের বাগানে ফল হলে রেখে দেয়।’ তবে শুটিং থাকলে পুরো দিনের রুটিনটাই বদলে যায়। ফিটনেসের জন্য আলাদাভাবে আর কিছু করেন না তিনি। পোশাকের ক্ষেত্রেও নিজের স্বাচ্ছন্দ্যকে প্রাধান্য দেন।

বাসায় থাকলে সুতির আরামদায়ক পোশাক পরেন। বাইরে বের হলে শাড়ি হয় তাঁর নিয়মিত পোশাক।

৮৪ বছর বয়সেও এই অভিনেত্রীর ভেতর যে প্রাণোচ্ছ্বাস, আত্মবিশ্বাস, স্বতঃস্ফূর্ততা, তা অনেক তরুণকেও হার মানাবে। একা থাকেন, একাই সব কাজ করেন। নেই কোনো ক্লান্তির ছাপ। বরং সবকিছুই উপভোগ করেন।

কীভাবে পান এই অনুপ্রেরণা—জানতে চাইলে বলেন, মনবুশো বৃত্তি নিয়ে জাপানে পড়তে গিয়েছিলেন তাঁর ছোট মেয়ে। তখন মেয়ের কাছে কিছুদিন ছিলেন।

‘জাপানে গিয়ে জানার জগৎটাই বদলে গেল। ৮০-৯০ বছর বয়সেও তাঁরা নিজের কাজ করছেন। অনেকেই একা থাকেন। আবার দোকানে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা কাজ করেন। বাড়ির গাছের যত্ন নেন, বাজার করেন। বয়স যেন তাঁদের কাছে কোনো বাধাই নয়। সেই সঙ্গে তাঁরা ভীষণ শান্ত আর বিনয়ী, যা তাঁদের দীর্ঘায়ু হতে সাহায্য করে।’

জাপানিদের জীবন যে দিলারা জামানকে ভালোই প্রভাবিত করেছে, তা বোঝা গেল যখন আমরা বাসার নিচে ছবি তুলতে নামলাম। অফিস ছুটির সময়, বাসার সামনে গাড়ির চাপ, খুব সতর্কতার সঙ্গে দ্রুতগতিতে একাই রাস্তা পার হলেন তিনি।

তাঁর হাঁটার গতির সঙ্গে আমরা তাল মেলাতে পারছিলাম না। বোঝা গেল, শুধু ঘরেই নয়, বাইরেও সমান তৎপর তিনি।

মাঠে ঢুকতেই কুশল বিনিময় করতে এগিয়ে এলেন হাঁটার বন্ধুরা। ছবি তোলার ফাঁকে ফাঁকে বন্ধুদের সঙ্গে চলল খুনসুটি। মাঝেমধ্যে তাঁদের সঙ্গে ফুচকা, ঝালমুড়ি খেতে যাওয়া হয়। এক ঘণ্টা হাঁটার পর বাসায় ফিরলেন। বসে গেলেন টিভির সামনে, হাতে এত কাপ চা আর বিস্কুট।

রাত নয়টার মধ্যেই খাওয়া শেষ করেন। রাতের খাবার দুপুরের মতোই রুটি, সবজি, শুধু মাছের পরিবর্তে যোগ হয় মুরগির মাংস। এরপর টেলিভিশনে খানিকক্ষণ টক শো দেখে ঘুমাতে যান।

‘পত্রিকা আর টিভির খবর সব সময়ই আমাকে ভীষণ টানে। পত্রিকা না পড়ে যেমন দিনটা শুরু করতে পারি না, তেমনি টক শোতে আগামীকালের পত্রিকার হেডলাইন দেখে ঘুমাতে যাই। বলতে পারো আমি খবরপাগল মানুষ।’

নাটক রেখে খবর দেখার বিষয়টি জেনে কিছুটা অবাকই হই। ১৯৬৫ সালে অভিনয় শুরু করেন দিলারা জামান। ৬০ বছরের অভিনয়জীবনে বিভিন্ন প্রজন্মের সঙ্গে কাজ করেছেন। কাজের জায়গায়ও প্রযুক্তিগত নানা পরিবর্তন দেখেছেন।

জানালেন, কোনো কিছু নিয়েই অভিযোগ করতে ভালোবাসেন না। বরং সব পরিবর্তনকেই ইতিবাচকতার সঙ্গে গ্রহণ করেন।

দিলারা জামানের বড় মেয়ে থাকেন কানাডায় আর ছোটজন যুক্তরাষ্ট্রে। মেয়েরা তাঁকে নিয়ে যেতে চাইলেও দেশের মায়া ছাড়তে পারেন না।

‘এই যে হাঁটতে গেলে বা রাস্তায় বের হলে মানুষ এত মায়া করে, ভালোবাসে, রিকশা বা গাড়ি থেকে নেমে ছবি তুলতে চায়, এর চেয়ে সুন্দর মুহূর্ত জীবনে আর কী হতে পারে।’