কাঁচা দুধ খাওয়া স্বাস্থ্যকর নাকি ঝুঁকিপূর্ণ
এ ঘটনার জন্য সামাজিক মাধ্যমকে কিছুটা দায় দেওয়া যায়। আজকাল সামাজিক মাধ্যমে, বিশেষ করে টিকটকে অনেকেই বলছেন, কাঁচা দুধ নাকি পাস্তুরিত দুধের চেয়ে অনেক বেশি উপকারী।
এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যসচিব রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়রও বলেছেন, তিনি কাঁচা দুধ খান। তাঁর দাবি, ‘কাঁচা দুধ মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।’
কিন্তু স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাঁদের মতে, কাঁচা দুধ স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।
সামাজিক মাধ্যমের প্রভাবে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। কাঁচা দুধ যে পাস্তুরিত দুধের চেয়ে ভালো, এর পেছনে কোনো প্রমাণ নেই। যাঁরা কাঁচা দুধ খাচ্ছেন, তাঁরা আদতে তাঁদের জীবনকেই ঝুঁকিতে ফেলছেন।ডক্টর অ্যান্থনি অগনজান, সংক্রামক রোগবিশেষজ্ঞ, যুক্তরাষ্ট্র
কাঁচা দুধ মানে যে দুধ পাস্তুরিত করা হয়নি। মানে খামার থেকে গরু দুইয়ে সরাসরি বাজারজাত করা হয়েছে। কিন্তু দুধকে অল্প সময়ের জন্য উচ্চ তাপমাত্রায় গরম করে আবার ঠান্ডা করা হলে তা হয় পাস্তুরিত।
দুধ পাস্তুরিত করা হলে গরমে রোগজীবাণু মারা যায়। এই পাস্তুরাইজেশন পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয় ১৯০০ সালের শুরুর দিকে। দোকানে যে দুধ কিনতে পাওয়া যায়, সেসব সাধারণত পাস্তুরিত থাকে। যদিও বাংলাদেশে কাঁচা দুধ বিক্রি করা অবৈধ নয়। কিন্তু তার মানে এই নয় যে কাঁচা দুধ নিরাপদ।
খামারে দুধ সংরক্ষণের নিয়মকানুন ভালো থাকলেও দুধে ক্ষতিকর জীবাণু থেকে যায়। এ ক্ষেত্রে গরু কতটা সুস্থ বা খামার কতটা পরিচ্ছন্ন, সেটা কোনো ব্যাপার নয়। সব কাঁচা দুধেই ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। তাই পাস্তুরিত দুধ খাওয়াই সবচেয়ে ভালো।
কাঁচা দুধ যেহেতু পাস্তুরাইজেশনের মধ্য দিয়ে যায় না, তাই এতে নানা ধরনের জীবাণু থাকতে পারে। যেমন ই-কোলাই, সালমোনেলা, লিস্টেরিয়া, ব্রুসেলা, ক্যাম্পাইলোব্যাকটার। এসবের পাশাপাশি কাঁচা দুধে যক্ষ্মার জীবাণুও থাকতে পারে।
আর এসব জীবাণুর কারণে পাতলা পায়খানা, পেটব্যথা, বমি, মাথাব্যথা, জ্বর ও শরীর ব্যথা হতে পারে। বেশির ভাগ সুস্থ মানুষ এসব অসুখ থেকে সেরে উঠলেও পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু, বয়স্ক মানুষ আর যাঁদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা দুর্বল, তাঁরা কাঁচা দুধ খেলে গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকির মধ্যে পড়বেন।
পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৯৮-২০১৮ সালের মধ্যে কাঁচা দুধের কারণে শুধু যুক্তরাষ্ট্রে ২০২টি রোগের প্রাদুর্ভাব হয়েছে। এতে ২ হাজার ৬০০ জনের বেশি মানুষ অসুস্থ হয়েছেন এবং ২২৮ জনকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে।
আমেরিকান ফুড ও ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তথ্য অনুযায়ী, কাঁচা দুধ শুধু যিনি খান তাঁকেই অসুস্থ করে না, বরং ই-কোলাইয়ের মতো জীবাণু একজন থেকে আরেকজনে ছড়িয়ে আরও বেশি মানুষকে অসুস্থ করতে পারে।
পাস্তুরাইজেশনের পর খাবারের গুণমান বা পুষ্টিগুণে কোনো পরিবর্তন হয় না। তাই কাঁচা দুধে যে বেশি পুষ্টিগুণ আছে, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই।
কাঁচা দুধের কোনো বিশেষ স্বাস্থ্য উপকারিতা এখনো প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি। কাঁচা দুধে যে পুষ্টিগুণ আছে, পাস্তুরিত দুধেও তা পাওয়া যায়। বরং পাস্তুরিত দুধে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি থাকে না।
একটা মজার বিষয় হলো, শুধু দুধই নয়, আরও অনেক খাবার পাস্তুরিত করা হয়। যেমন কোমল পানীয়, পনির, জুস, দই, ডিম, ক্যানড খাবার, এমনকি টমেটো সস ও মসলাও পাস্তুরিত করা হয়।
তাই সামাজিক মাধ্যমে কিছু জনপ্রিয় হলেই তা অনুসরণ করবেন না। অনেকে জনপ্রিয় হওয়ার জন্য খারাপ জিনিসকে ভালো বলতে পারে। তাই শুধু ট্রেন্ডের পেছনে না ছুটে নিজের স্বাস্থ্যের কথাটাও ভাবতে হবে।
সূত্র: এভরিডে হেলথ