লি সাং-ইল ও ক্লোয়ি ঝাও। কোলাজ

টোকিও উৎসবে আকিরা কুরোসাওয়া পুরস্কার পাচ্ছেন কারা

আগামী অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে পর্দা উঠতে যাচ্ছে ৩৮তম টোকিও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের। নানা আয়োজনে পরিপূর্ণ বৈশ্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই উৎসবের অন্যতম উদ্যোগ হচ্ছে জাপানের বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার আকিরা কুরোসাওয়ার নামে প্রবর্তিত পুরস্কার। নিজেদের কাজের মাধ্যমে চলচ্চিত্র ও সমাজের ওপর অব্যাহতভাবে প্রভাব রেখে যাওয়া নন্দিত নির্মাতাদের সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে এমন নির্মাতাদের বেছে নেওয়া হয়, যাঁরা চলচ্চিত্র পরিচালনায় সাফল্য অর্জনের পাশাপাশি এই শিল্পের ভবিষ্যৎ নির্মাণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে প্রত্যাশা করা হয়। গত বছর এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল জাপানি চলচ্চিত্র নির্মাতা মিয়াকে শো ও তাইওয়ানের নির্মাতা ফু তিয়েন-ইউকে।

২০২৫ সালের আকিরা কুরোসাওয়া পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে জাপান একাডেমি চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী পরিচালক লি সাং-ইল ও চীনের অস্কার বিজয়ী পরিচালক ক্লোয়ি ঝাওকে। বিখ্যাত জাপানি নির্মাতা ইয়ামাদা ইয়োজি অন্তর্ভুক্ত থাকা বাছাই কমিটি সম্মানসূচক এই পুরস্কারের জন্য তাঁদের নাম নির্ধারণ করেছে।
জাপান ইনস্টিটিউট অব দ্য মুভিং ইমেজে অধ্যয়নকারী কোরীয় বংশোদ্ভূত জাপানি নির্মাতা লি সাং-ইল তাঁর স্নাতক চলচ্চিত্র ‘চং’-এর জন্য সুনাম অর্জন করেন। তিনি ২০০৩ সালে ‘বর্ডার লাইন’-এর জন্য শিন্দো কানেতো পুরস্কার এবং ২০০৬ সালে ‘হুলা গার্লস’-এর জন্য একাধিক বিভাগে ৩০তম জাপান একাডেমি চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতে নেন।

এরপর ‘ভিলেন’ (২০১০) সিনেমার জন্যও ৩৪তম জাপান একাডেমি চলচ্চিত্র পুরস্কারে পাঁচটি পুরস্কার পান লি সাং-ইল। কান উৎসবের ডিরেক্টরস ফোর্টনাইটে তাঁর নির্মিত কাবুকিনির্ভর চলচ্চিত্র ‘কোকুহো’র প্রিমিয়ার হয়। আগের রেকর্ড ভেঙে এই চলচ্চিত্রের আয় জাপানের বক্স অফিসে ১০ বিলিয়ন ইয়েন ছাড়িয়ে গেছে। এদিকে, জাপানের চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতি আগামী বছরের অস্কারে সেরা আন্তর্জাতিক ফিচার ফিল্ম বিভাগের জন্য জাপানের পক্ষ থেকে একজন কাবুকিশিল্পীর জীবন ও কর্মভিত্তিক এই চলচ্চিত্রকে জমা দেওয়ার জন্য বেছে নিয়েছে।

একটি ইয়াকুজা পরিবারে জন্মগ্রহণ করার পর জীবনের এক সন্ধিক্ষণে এক কাবুকি অভিনেতার দত্তক নেওয়া এক তরুণকে নিয়ে এই কাহিনির অবতারণা। মঞ্চের জন্য নিবেদিতপ্রাণ এই ব্যক্তি শেষ পর্যন্ত একটি জীবন্ত জাতীয় সম্পদ বা ‘কোকুহো’ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। বাইরে থেকে এসে কাবুকির নিজস্ব জগতে তাঁর স্বীকৃতি এবং এ নিয়ে নানা টানাপোড়েন এই চলচ্চিত্রের মূল প্রতিপাদ্য।

পরিচালক লি সাং-ইলকে নির্বাচনের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নির্বাচক কমিটি জানায়, তিনি ধারাবাহিকভাবে সামাজিক দ্বন্দ্ব ও মানবিক ভ্রম বা ব্যর্থতার সঙ্গে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন, যা শেষ পর্যন্ত মানবতাবাদী চলচ্চিত্র হয়ে ওঠে এবং দর্শকের হৃদয়ে গভীর রেখাপাত করে।

পুরস্কারের জন্য অপর মনোনীত ব্যক্তি হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী চীনা লেখক, পরিচালক ও প্রযোজক ক্লোয়ি ঝাও। তাঁর তৃতীয় চলচ্চিত্র ‘নোম্যাডল্যান্ড’ ২০২০ সালের ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে ‘স্বর্ণ সিহ’ জেতে। পরে ৩টি অস্কার জিতে নেয়। আকিরা কুরোসাওয়া পুরস্কারের জন্য তাঁকে বেছে নেওয়ার কারণ হিসেবে নির্বাচক কমিটির ভাষ্য হচ্ছে, ঝাওয়ের কাব্যিক ও বাস্তবসম্মত নির্মাণগুলো হলিউডের অন্যান্য সাধারণ চলচ্চিত্র থেকে একেবারেই আলাদা। তাঁর নির্মিত ‘নোমাডল্যান্ড’-এর সাফল্য অন্যান্য এশীয় নারী পরিচালকদেরও অনুপ্রাণিত করেছে।

এই পুরস্কার পাওয়া সম্মানের, এমন উল্লেখ করে ক্লোয়ি ঝাও বলেন, গল্পকার বা চলচ্চিত্রকারেরা হলেন একধরনের সেতু যাঁরা সংস্কৃতি ও রাষ্ট্রের পাশাপাশি অতীত ও ভবিষ্যৎ, আলো ও অন্ধকার, আনন্দ ও বেদনা এবং প্রেম ও মৃত্যুর মধ্যে সংযোগ ঘটান। নিজেদের অভিজ্ঞতাগুলোকে অর্থপূর্ণ করার পাশাপাশি ক্যাথারসিসের অনুভূতি অর্জনের প্রত্যাশায় কাজ করেন। তাই এ ধরনের স্বীকৃতি নির্মাতাদের কাজের মূল উদ্দেশ্যকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার একটি সুযোগ।

সারা বিশ্বের নানামুখী চলচ্চিত্র নিয়ে আগামী অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে শুরু হতে যাওয়া টোকিও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব চলাকালীন ৩রা নভেম্বর টোকিওর ইম্পেরিয়াল হোটেলে পুরস্কারপ্রাপ্ত এই দুই চলচ্চিত্রকারের হাতে আকিরা কুরোসাওয়া পুরস্কার তুলে দেওয়ার কথা রয়েছে।