Advertisement

চকলেটপ্রেমীদের জন্য খারাপ খবর, বাড়ছে দাম

প্রথম আলো

প্রকাশ: ২৫ আগস্ট, ২০২৫

চকলেটছবি: পেক্সেলস ডটকম
চকলেটছবি: পেক্সেলস ডটকম

চকলেটপ্রেমীদের সামনে আবারও বাড়তি খরচের বোঝা আসছে। কোকোয়ার মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কা এখন খুচরা দামে পড়তে শুরু করেছে। তবে আগামী ইস্টারের (৫ এপ্রিল ২০২৬) সময় কিছুটা ভালো খবর মিলতে পারে।

সম্প্রতি গত কয়েক বছরে কোকোয়ার দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। এর পেছনে আছে মূলত প্রতিকূল আবহাওয়া, পোকামাকড়ের প্রাদুর্ভাব ও সরবরাহের সংকট। বিশ্বের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কোকোয়া উৎপাদিত হয় পশ্চিম আফ্রিকায়, সেখানকার পরিস্থিতিই কোকোয়ার দামে প্রভাব ফেলেছে।

এ প্রবণতার সঙ্গে মিলে বিশ্বজুড়ে খুচরা বাজারে পণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত আছে। ফলে ভোক্তাদের খরচ বাড়ছে ও মিষ্টিজাত খাবারের চাহিদা কমছে। যুক্তরাজ্যের ভোক্তা সংগঠন হুইচের ২০২৪ সালের জরিপে দেখা গেছে, চকলেটপণ্যের দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি—গড়ে ১১ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রে হার্শিস কিসেসের মতো জনপ্রিয় চকলেটের দামও এক বছরে বেড়েছে প্রায় ১২ শতাংশ।

সুইস কোম্পানি লিন্ডট অ্যান্ড এসপিআর এনজিলের প্রধান আদালবের্ট লেকনার এপ্রিলে সিএনবিসিকে বলেন, কোকোয়ার দাম আর কখনো আগের অবস্থায় ফিরবে বলে তিনি মনে করেন না।

যদিও ২০২৫ সালে কোকোয়ার ফিউচার বা আগাম বাজারে কিছুটা স্বস্তি দেখা যাচ্ছে। জানুয়ারিতে যেখানে দাম ছিল প্রতি টন ৮ হাজার ১৭৭ ডলার, আগস্টে তা নেমেছে ৭ হাজার ৮৫৫ ডলারে। তবে তিন বছর আগে এই দাম ছিল মাত্র ২ হাজার ৩৭৪ ডলার।

কিন্তু এই সাম্প্রতিক পতনের প্রভাব এখনই চকলেটের দামে পড়বে না। জেপি মর্গানের কৃষিপণ্য কৌশলবিদ ট্রেসি অ্যালেন বলেন, ‘আমরা এখনো একধরনের জের টানছি।’ তাঁর মতে, ২০২৪ সালের শেষ প্রান্তিকে দাম যে রেকর্ড উচ্চতায় উঠেছিল, তার প্রভাব এখনো সামলাতে হচ্ছে। এই উচ্চ দাম পুরো শিল্পকে প্রভাবিত করছে, ব্যবসার বাড়তি ব্যয় ভোক্তার ওপর চাপানো হচ্ছে। বাজারে এখনো ঘাটতি, কোকোয়া বিনের প্রাপ্যতা কমে গেছে। ফলে দামের চাপ আরও কিছুদিন থাকবে বলে মনে করেন তিনি।

সুইস চকলেট নির্মাতাদের সংগঠন চকোসুইসের মুখপাত্র লিডিয়া টোথ জানান, গত দুই বছরে কোকোয়ার দাম চার গুণ বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। খুচরা দামের পরিবর্তন ধীরে হয় বলে নির্মাতাদের লাভের হারও কমে যাচ্ছে। ছোট ব্যবসা থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক রপ্তানিকারক—সবাই এতে চাপের মুখে পড়েছে। কিছু খরচ ভোক্তার ওপর চাপানো হলেও দামের ক্ষেত্রে আরও সমন্বয় আসতে পারে। আগের দামে ফেরার সম্ভাবনা নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন।

তবে ইস্টারের সময় কিছুটা স্বস্তি মিলতে পারে। জেপি মর্গানের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, শিল্প খাতের চাহিদা কিছুটা কমছে, অন্যদিকে সরবরাহ বাড়ছে। ইকুয়েডর ও ব্রাজিলে নতুন গাছের ফলন বাজারে আসছে। সেই সঙ্গে আবহাওয়া অনুকূলে আছে। যদিও দীর্ঘ মেয়াদে কোকোয়ার দাম ওপরের দিকেই থাকবে—প্রতি টন প্রায় ছয় হাজার ডলারে।

ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের জলবায়ু ও পণ্যবিষয়ক অর্থনীতিবিদ হামাদ হুসেইন বলেন, আইভরি কোস্ট ও ঘানায় বছরের পর বছর রোগব্যাধি ও বিনিয়োগের অভাবের কারণে উৎপাদন কমেছে। পশ্চিম আফ্রিকায় আবহাওয়া উন্নত হলেও বৈশ্বিক সরবরাহ সংকট পুরোপুরি কাটবে না। ফলে দাম ইতিহাসের সবচেয়ে উঁচুতে থাকবে। সেই উচ্চ দাম চকলেটের দামে প্রভাব ফেলবে বলে তিনি মনে করেন।

হামাদ হুসেইন আরও বলেন, যুক্তরাজ্যে ন্যূনতম মজুরি ও কর্মচারীদের কল্যাণে ব্যয় বৃদ্ধির কারণে ব্যবসার খরচ বাড়ছে। খাদ্যপণ্যের দামে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের প্রভাবে ভবিষ্যতে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

সব মিলিয়ে ভোক্তাদের জন্য বার্তাটা স্পষ্ট, চকলেটের দাম আরও কিছুদিন বাড়তি থাকবে।

Lading . . .