Advertisement

যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক ঘাটতি কমতে পারে চার লাখ কোটি ডলার, ট্রাম্পের শুল্কের প্রভাব

প্রথম আলো

প্রকাশ: ২৩ আগস্ট, ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পফাইল ছবি: রয়টার্স
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পফাইল ছবি: রয়টার্স

ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতির কল্যাণে আগামী দশকে দেশটির আর্থিক ঘাটতি চার ট্রিলিয়ন বার চার লাখ কোটি ডলার কমতে পারে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসনাল বাজেট অফিস (সিবিও)। এই হিসাব অনুযায়ী, প্রেসিডেন্টের করছাড়–সংক্রান্ত আইনের কারণে ঘাটতি বাড়লেও তার একটি বড় অংশ শুল্ক রাজস্ব দিয়ে পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।

সিবিও শুক্রবার জানায়, বাড়তি শুল্কের কারণে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রাথমিক ঘাটতি ৩ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন বা ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার কমবে। এর পাশাপাশি সুদ প্রদানের দায় কমবে আরও ৭০০ বিলিয়ন বা ৭০ হাজার কোটি ডলার, অর্থাৎ মোট ঘাটতি কমবে চার ট্রিলিয়ন বা চার লাখ কোটি ডলার। খবর ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস

এ অঙ্ক আগের ধারণার চেয়ে এক-তৃতীয়াংশ বেশি। জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ঘোষিত শুল্কনীতির ভিত্তিতে আগের পূর্বাভাসে বলা হয়, ঘাটতি কমতে পারে তিন ট্রিলিয়ন বা তিন লাখ কোটি ডলার।

এই প্রতিবেদনের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘এ ঘটনা থেকে প্রমাণিত হয়, আমি সঠিক। শুল্ক রাজস্বের কল্যাণে ঘাটতি আমাদের ধারণার চেয়েও অনেক বেশি কমবে, এটি আগে কখনো দেখা যায়নি।’

প্রেসিডেন্টের প্রিয় আইন ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্টের কারণে ভবিষ্যতে মার্কিন সরকারি ঋণ ৪ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন বা ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি ডলার বাড়বে। সর্বশেষ হিসাব বলছে, শুল্ক রাজস্বের কল্যাণে সেই ঋণের প্রভাব কিছুটা হলেও প্রশমিত হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ঋণ বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশটির ঋণ–জিডিপির অনুপাত ইতিমধ্যে ১০০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। ফলে মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের আকর্ষণ কমেছে। যদিও সিবিওর বিশ্লেষণে শুল্ক নীতির প্রভাবে অর্থনীতির আকার ছোট হয়ে যাওয়ার বিষয়টি প্রতিফলিত হয়নি। অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন, এ ধরনের শুল্ক প্রবৃদ্ধির ওপর চাপ সৃষ্টি করবে।

বিশ্লেষকেরা সতর্ক করে বলেন, এই হিসাবে ‘বড় ধরনের অনিশ্চয়তা আছে’। সময়, সম্ভাব্য ছাড় ও নজিরবিহীন অবস্থার কারণে ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন। তবু এটি ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য ইতিবাচক বার্তা। তারা বরাবর দাবি করে আসছে, শুল্ক রাজস্বের কল্যাণে সরকারের কোষাগার ভরে উঠবে। ফলে ব্যয়ের চাপ সামাল দেওয়া সহজ হবে।

মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, চলতি বছরে শুল্ক রাজস্ব ‘আগের ধারণার চেয়ে অনেক বেশি’ আদায় হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সিএনবিসিকে তিনি বলেন, ‘আমরা ঘাটতি ও জিডিপির অনুপাত কমিয়ে আনব, ঋণ পরিশোধ শুরু করব। তখন এ রাজস্ব জনগণের জন্য কাজে লাগানো সম্ভব হবে।’

সিবিওর হিসাব অনুযায়ী, কেবল এ বছরেই শুল্ক রাজস্ব আসবে প্রায় ২০০ বিলিয়ন বা ২০ হাজার কোটি ডলার। এ অঙ্ক গত পাঁচ বছরের গড় ৮০ বিলিয়ন বা ৮ হাজার কোটি ডলারের তুলনায় অনেক বেশি।

এর আগে স্কট বেসেন্ট বলেন, বছরের শেষে শুল্ক আয়ের পরিমাণ ৩০০ বিলিয়ন বা ৩০ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। খবর রয়টার্স

কংগ্রেশনাল বাজেট অফিসের অনুমান, আগামী ১০ বছরে শুল্ক থেকে আয় হবে প্রায় ২ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন বা ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি ডলার। কিন্তু বেসেন্টের অনুমান, এই হিসাব বাস্তবতার তুলনায় অনেক কম, অর্থাৎ রক্ষণশীল।

আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল জানিয়েছে, শুল্ক রাজস্ব প্রবাহের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণের মান (রেটিং) অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। যদিও কর ছাড়ের চাপ রয়ে গেছে। সংস্থার পরিচালক লিসা শিনেলার বলেন, অনেক অনিশ্চয়তা থাকলেও তাঁরা মনে করেন, শুল্ক রাজস্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

আরেক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা ফিচও শুল্ক রাজস্ব বৃদ্ধিকে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণের মান ধরে রাখার যুক্তি হিসেবে উল্লেখ করেছে। তাঁরা সতর্ক করেছে, ‘বড় ধরনের ঘাটতি’ স্থায়ী রূপ পাবে। সেই সঙ্গে ২০২৬ ও ২০২৭ সালে ঘাটতি আবারও বাড়বে।

কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন, দীর্ঘ মেয়াদে শুল্কের প্রভাব অতিরঞ্জিত হতে পারে। মার্কিন আর্থিক প্রতিষ্ঠান মর্নিংস্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টমাস টরগারসন বলেন, এই রাজস্ব বৃদ্ধি সাময়িক প্রণোদনার মতো এটি সাময়িক প্রণোদনার মতো কাজ করবে। বছরের পর বছর একই অঙ্কের রাজস্ব পাওয়া যাবে—এমন নিশ্চয়তা নেই।

টমাসের সতর্কবার্তা, একবার শুল্কহার স্থিতিশীল হলে রপ্তানিকারকেরা অন্য বাজারের দিকে ঝুঁকবেন। তখন মধ্যমেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক রাজস্ব কমে আসবে।

Lading . . .