৪৭তম বিসিএস: প্রিলি পরীক্ষার আগের রাত ও পরীক্ষার দিন করণীয়
প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

প্রিলিমিনারি পরীক্ষার পড়া মাথায় গেঁথে নেওয়ার বিষয়। এটা এমন না যে অল্প সময়ে পড়ে হুটহাট করে আপনি সাফল্য পেয়ে যাবেন। পরিকল্পনা করে কিছুটা সময় নিয়ে তাই প্রস্তুতি নিতে হয়। আপনার মাথায় যা গেঁথে নিয়ে যাবেন, পরবর্তী সময়ে পরীক্ষার হলে তারই প্রতিফলন ঘটবে। তাই পরীক্ষার আগে শুধু শুধু চাপ নিলে ভালো কিছুর বদলে ফল খারাপ হওয়ার আশঙ্কাই বেশি থাকে। তাই শেষ দিনে এসে যে যে বিষয়ে খেয়াল রাখতে পারেন, তা হলো—
১.
নতুন কিছুই পড়বেন না। এমনকি সর্বশেষ তথ্যের জন্য পত্রিকা পড়ারও মানে নেই সেদিন (নিজের অভ্যাস বা শখের জন্য পত্রিকা পড়তে পারেন)। এটা আগের পড়াকে প্যাঁচ খাওয়াবে শুধু।
২.
নির্ভার থাকার চেষ্টা করুন। আগে যা পড়েছেন, তার মধ্য থেকে যা আপনার কম মনে থাকে বা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য (যা আপনি নোট করেছেন) তাতেই চোখ বুলিয়ে যান।
৩.
গণিতের সূত্র/মানসিক দক্ষতার কৌশল/সংবিধানের ধারা বা বাতিলকৃত অনুচ্ছেদগুলো/ইংরেজির কঠিন ভোকাবুলারিগুলো দেখে যেতে পারেন।
৪.
আপনার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ভালো করে ডিজিটগুলো মিলিয়ে পরীক্ষার কেন্দ্র দেখে নিন। কেন্দ্র অপরিচিত থাকলে দরকার হলে আগের দিন যেয়ে একবার কেন্দ্র দেখে আসুন।
৫.
আপনার আবাসস্থল থেকে কেন্দ্র কতটুকু দূরে, কতটুকু সময় লাগবে, সেখানে কীভাবে যাবেন (রিকশা/সিএনজিচালিত অটোরিকশা/বাস), বাসে গেলে কোনো বাসে কোন রুটে যাবেন তা আগেই পরিকল্পনা করে রাখুন।
৬.
পরীক্ষার বেশ আগেই পরীক্ষার প্রবেশপত্রের একাধিক কপি প্রিন্ট করে রাখুন। তবে সঙ্গে এক কপি নেবেন। প্রবেশপত্র শার্ট বা প্যান্টের পকেটে রাখলে ঘামে ভিজে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এ বিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
৭.
কিছুটা ব্যবহার করা বলপয়েন্ট কলম দুই তিনটি প্রস্তুত রাখুন। একদম নতুন কলমে বৃত্ত ভরাটে সমস্যা হয়। আর জেল পেন ব্যবহার করা যায় না। পেনসিল বা ইরেজার সঙ্গে নিতে পারেন, তবে না নিলেও চলে।
৮.
কোনো অতিরিক্ত কাগজ পরীক্ষার হলে প্রবেশযোগ্য নয়। তাই কিছু খুচরাসহ পর্যাপ্ত টাকা প্যান্টের পকেটে নিয়ে নিন। সঙ্গে প্রবেশপত্র, কলম ও টিস্যু থাকতে পারে। মানিব্যাগ, ওয়ালেট, মেয়েদের পার্স, ব্যাকপ্যাক, ভ্যানিটিব্যাগ—এগুলো নিতে পারবেন না।
৯.
বিসিএস পরীক্ষার কেন্দ্রগুলোতে দেয়ালঘড়ি থাকে। তাই সময় দেখা নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না। সঙ্গে মুঠোফোন, যেকোনো ধরনের ক্যালকুলেটর, রিস্ট ওয়াচ, মেয়েদের বেলায় অলংকার—এগুলো নিতে পারবেন না।
১০.
গরমের সময়, তাই পরীক্ষার কয়েক দিন আগে থেকেই পর্যাপ্ত তরল খাবার গ্রহণ করুন। পরীক্ষার দিন সকালেও পর্যাপ্ত পানি খেয়ে নিন। পরীক্ষা চলাকালেও পানি খাওয়ার ব্যবস্থা থাকে। তবে পরীক্ষা শুরুর আগেই ওয়াশরুমে যাওয়ার প্রয়োজন সেরে নিন।
১১.
পরীক্ষার আগের রাতে খেয়ে যথাসময়ে শুয়ে পড়ুন। ভালো ঘুম হলে ব্রেন ফ্রেশ থাকবে ও পরীক্ষার সময় ভালো কাজ করবে। যদিও টেনশন কাজ করে ও ঘুম আসতে চায় না। ‘আগের মডেল টেস্টের এটাও একটা পরীক্ষা’ ভেবে নির্ভার থাকার চেষ্টা করুন।
১২.
পরীক্ষার দিন একটু সকালে উঠে প্রার্থনা সেরে নিন। পরীক্ষায় যাওয়ার আগে গোসল করে নিলে একটা সতেজ ভাব কাজ করে। দুই ঘণ্টা পরীক্ষার হলে থাকা লাগবে, আসা-যাওয়াসহ দীর্ঘ সময় বাইরে থাকা লাগবে; তাই পর্যাপ্ত নাশতা সেরে ফ্রেশ হয়ে বের হবেন।
১৩.
দূরত্ব ও জ্যামের কথা মাথায় রেখে পর্যাপ্ত সময় হাতে রেখে বের হয়ে পড়ুন। যাওয়ার পথে অযথা কারও সঙ্গে তর্কে জড়াবেন না।
১৪.
পরীক্ষাকেন্দ্রের আশপাশে অনেককে অনেক কিছু পড়তে দেখবেন। শেষ সময়ে এমনটা না করাই ভালো। তাই অন্যদের পড়া বা নোটখাতা দেখে দয়া করে নিজেকে বিচলিত করবেন না।
১৫.
পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশের সময় আপনাকে ভালোভাবে চেক করা হবে। তাই এ কাজে তাঁদের সহায়তা করুন। গেটে প্রবেশের সময় চেক করার জন্য ম্যাজিস্ট্রেট থাকতে পারেন। তাই যথেষ্ট আগেই পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে রুম খুঁজে বসে পড়ুন।
১৬.
পোশাক নির্বাচন জরুরি। ছেলেরা ফর্মাল শার্ট ও প্যান্ট এবং মেয়েরা প্লেন সালোয়ার–কামিজ পরতে পারেন। অতি উজ্জ্বল ও উৎকট, ব্যতিক্রমী পোশাক ও অলংকার পরিধান এবং উগ্র প্রসাধন ও সুগন্ধি ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
১৭.
নার্ভাসনেস কাটাতে চুইংগাম কার্যকর। তাই পরীক্ষার হলে বসে এবং পরীক্ষা চলাকালে চুইংগাম চিবুতে পারেন। এতে স্বাভাবিক থাকাটা সহজ হবে।
১৮.
পরীক্ষার হলে আপনার চেহারা ও কান উন্মুক্ত রাখতে হবে। তাই মেয়েরা হিজাব পরলেও পরীক্ষা চলাকালে কান উন্মুক্ত রাখুন।
১৯.
আপনার সিট খুঁজে বসে পড়ুন ও কোনো সমস্যা আছে কি না (যেমন বেঞ্চ নড়াচড়া করা, ফ্যান নষ্ট, আলো কম জানালা দিয়ে বৃষ্টির ছিঁটা আসা ইত্যাদি) চেক করে নিন। সমস্যা চোখে পড়লে সঙ্গে সঙ্গেই তা ইনভিজিলেটরকে (পরিদর্শক) অবহিত করুন।
২০.
ওএমআর শিট বেশ কিছুক্ষণ আগেই দেওয়া হয়। ভালোভাবে নিজের রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও অন্যান্য চাহিত তথ্য লিখে বৃত্ত ভরাট করুন। শিটে সেট কোড (ক/খ/গ/ঘ) উল্লেখ করা থাকে। সে অনুযায়ী প্রশ্ন পেলেন কি না, প্রথমেই চেক করে নিন (যেমন ওএমআর শিটে সেট কোড ‘ক’ লেখা থাকলে অবশ্যই ‘ক’ সেটের প্রশ্নপত্রই আপনাকে নিয়ে উত্তর করতে হবে)। ভিন্ন সেটের প্রশ্নপত্র এলে পরীক্ষককে তৎক্ষণাৎ জানিয়ে পরিবর্তন করে নিন।
২১.
পরীক্ষক আপনার শিটে স্বাক্ষর করলেন কি না, এবং হাজিরা শিটে আপনি স্বাক্ষর করলেন কি না, গুরুত্ব সহকারে খেয়াল রাখবেন। আপনার প্রবেশপত্রের স্বাক্ষর এবং হাজিরা খাতায় ও উত্তরপত্রে প্রদত্ত স্বাক্ষর অবশ্যই যেন হুবহু হয়।
২২.
শুধু ‘ক’ সেটে প্রশ্নগুলো ক্রমানুসারে সাজানো থাকে (প্রথমে বাংলার সব প্রশ্ন, তারপর ইংরেজির সব প্রশ্ন, তারপরে বাংলাদেশ বিষয়াবলি...)। অন্য সব সেটে প্রশ্ন এলোমেলো করে সাজানো হয়। তাই ‘প্রথমে শুধু সাধারণ জ্ঞান উত্তর করব বা প্রথমে সব বাংলা উত্তর করব’—এমন চিন্তা বর্জন করুন। খ/গ/ঘ সেট পড়লে আপনার নির্দিষ্ট প্রশ্ন খুঁজে বের করতে করতেই অনেক সময় নষ্ট হবে।
২৩.
১ নম্বর প্রশ্ন থেকে শুরু করে একাধিক্রমে ২০০ নম্বর প্রশ্ন পর্যন্ত যাবেন। এর মধ্যে যেগুলো পারবেন, তৎক্ষণাৎ বৃত্ত ভরাট করে ফেলবেন। যেগুলো পারবেন না, সেগুলো প্রশ্নপত্রে দাগ দিয়ে রাখবেন যেন পরে সেগুলো নিয়ে ভেবে উত্তর করতে পারেন।
২৪.
প্রথমবার ১ থেকে ২০০ প্রশ্ন উত্তর করে শেষ করবেন ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিটের মধ্যে। পরের ২০ মিনিটে না পারা প্রশ্নগুলোর উত্তর নিয়ে চিন্তা করবেন ও উত্তর বের করতে পারলে দাগাবেন। আর দ্বিতীয় একটি পদ্ধতি হতে পারে যে গাণিতিক যুক্তি, মানসিক দক্ষতা ও ইংরেজির ৬৫ নম্বর ছাড়া বাকি ১৩৫ নম্বরের উত্তর করবেন ১ ঘণ্টা ১০ থেকে ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিটে। বাকি ৫০ বা ৪৫ মিনিটে ওই তিন বিষয় সমাধান করে উত্তর করবেন।
২৫.
পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে খসড়া করতে পারবেন। তাই অঅগে থেকেই ছোট ছোট অক্ষরে লিখে খসড়া করার চর্চা রাখুন ও শুধু প্রশ্নপত্রে খসড়া করুন।
২৬.
পরীক্ষার হলে কারও সঙ্গে উত্তরপত্র ও প্রশ্নপত্র পরিবর্তন বা সেট কোড পরিবর্তনের কোনো চেষ্টাই করবেন না। আর কারও দিকে তাকানোর প্রয়োজন নেই। পরিদর্শক বা ম্যাজিস্ট্রেট আপনার অজান্তে আপনাকে সাইলেন্ট এক্সপেলও করতে পারেন।
২৭.
প্রিলি পরীক্ষায় ২০০ নম্বরে ১৩০ নম্বরের বেশি টার্গেট রাখলেই তা যথেষ্ট। তাই শুধু শুধু চাপ নিয়ে অযথা বেশি দাগাবেন না। তাতে নেগেটিভ মার্কিংয়ের প্রভাবে খারাপ হওয়ার আশঙ্কাই বেশি। ১-২০০ প্রশ্নের প্রথমবারের সমাধানের বেলায় আপনার জানা উত্তরগুলো দাগান। যেগুলোর উত্তরে আপনি কনফিউজড, সেগুলো দাগাবেন না। দেখুন কয়টা প্রশ্ন আপনি নিশ্চিত হয়ে উত্তর করতে পারছেন। সংখ্যাটা ১২৫ থেকে ১৩০–এর মধ্যে হলে নির্ভার থাকুন। আর ১২০–এর নিচে হলে বাকি ১০-১২টা সর্বোচ্চ সম্ভাবনাময় উত্তর দাগানোর চেষ্টা করুন।
২৮.
কখনোই ১৪০+ বা ১৫০+ এমন বড় টার্গেট নির্ধারণ করে বৃত্ত ভরাট করার খেলায় মাতবেন না বা পাশের পরীক্ষার্থীকে বেশি দাগাতে দেখে বেশি দাগানোর প্রতিযোগিতা করবেন না। হিতে বিপরীত হতে পারে।
২৯.
সময় শেষ হওয়ার ঘণ্টা বাজলে পরিদর্শক লেখা থামাতে বললে তখনই লেখা থামানো উচিত। প্রয়োজনে হাত থেকে কলম রেখে দেবেন। পরিদর্শক থামতে বলার পরও আপনাকে লিখতে দেখলে তীরে এসেও তরি ডুবতে পারে।
৩০.
ধীরেসুস্থে উত্তরপত্র (ও এবার থেকে প্রশ্নপত্র) জমা দিন ও নির্দেশনা পেলে আস্তে–ধীরে হল ত্যাগ করুন। অন্যদের সঙ্গে বেশি উত্তর মিলিয়ে কাট মার্কস দুশ্চিন্তায় ভুগবেন না। কারণ, অনেকেই হল থেকে বের হয়েই প্যানিক (আতঙ্ক) ছড়ানোর খেলায় মজা পায়। বাসায় এসে বিশ্রাম করে ধীরেসুস্থে নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে উত্তর মেলান।