Advertisement

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শিক্ষার ধরন বদলে দিতে পারে

প্রথম আলো

প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

সালমান খানসালমান খানের লিংকডইন প্রোফাইল থেকে নেওয়া
সালমান খানসালমান খানের লিংকডইন প্রোফাইল থেকে নেওয়া

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) শিক্ষার ধরন বদলে দিতে পারে বলে জানিয়েছেন ই-লার্নিংয়ের পথিকৃৎ অনলাইনভিত্তিক শিক্ষামূলক প্ল্যাটফর্ম খান একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সালমান (স্যাল) আমিন খান। তাঁর মতে, এআই শিক্ষকের বিকল্প নয়। তবে সঠিকভাবে ব্যবহার করা গেলে এআই শিক্ষার সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার হতে পারে। সম্প্রতি প্রযুক্তিবিষয়ক মার্কিন ওয়েবসাইট দ্য ভার্জের ডিকোডার পডকাস্টে অংশ নিয়ে এ কথা জানান তিনি।

পডকাস্টে শিক্ষাক্ষেত্রে এআইয়ের ঝুঁকি, সম্ভাবনা ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সালমান খান জানান, এআইনির্ভর টুল প্রচলিত শিক্ষাপদ্ধতির তুলনায় শিক্ষার্থীদের শেখার ঘাটতি পূরণে কার্যকর হতে পারে। বিশেষ করে যেসব এলাকায় মানসম্পন্ন শিক্ষকের অভাব রয়েছে, সেখানে এআই শিক্ষার্থীদের বড় ধরনের সহায়তা করতে পারে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ব্যক্তিগত শিক্ষকের সুবিধা ভোগ করেছে কেবল সচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীরা। এআই সে বৈষম্য দূর করতে পারে। মানসম্পন্ন ব্যক্তিগত শিক্ষকের সহায়তা যদি সবার কাছে পৌঁছানো যায়, তাহলে দীর্ঘদিনের শিক্ষাগত বৈষম্য অনেকটাই কমে আসবে।

সালমান খান জানান, অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের সহায়তায় এরই মধ্যে বৃহৎ ভাষা মডেলনির্ভর এআই টিউটর ‘খানমিগো’ পরীক্ষামূলকভাবে চালু করেছে খান একাডেমি। এটি শিক্ষার্থীদের কাজের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানায় এবং ব্যক্তিগত শিক্ষকের মতো সহায়তা করে। শুধু অসচ্ছল শিক্ষার্থী নয়, সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীরাও যেন এ প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারে, সে জন্যই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সালমান খান বলেন, ‘আমরা এআইকে এমন এক হাতিয়ার হিসেবে দেখি, যা সবাইকে সমানভাবে সুযোগ দেবে। এটি কখনোই বিলাসপণ্য হতে পারে না। করোনা মহামারি ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ালেও এআইকে সবকিছুর সমাধান ভাবা উচিত নয়। অনলাইন ভিডিও শিক্ষায় নতুন দিক দেখিয়েছে। এআই সেই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য আরও শেখার পথ তৈরি করছে।’

সালমান খানের মতে, বিশ্বজুড়ে মানসম্পন্ন শিক্ষা সহজলভ্য করার বড় সুযোগ তৈরি করছে এআই। উদাহরণ হিসেবে তিনি খান একাডেমির প্ল্যাটফর্ম ‘স্কুলহাউস’–এর কথা উল্লেখ করেন। এটি মূলত পিয়ার টু পিয়ার লার্নিং প্ল্যাটফর্ম, যেখানে শিক্ষার্থীরা একে অপরকে শেখায়। এ প্ল্যাটফর্মে শিক্ষার্থীরা সহপাঠীদের সহায়তায় শেখার পাশাপাশি এআইয়ের সহায়তাও পাচ্ছে। ভবিষ্যতে স্কুলহাউস মডেল গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে, যেখানে সরাসরি শ্রেণিকক্ষ ও অনলাইন শিক্ষার সমন্বয়ে বৈষম্য কমানো সম্ভব হবে। এ প্রসঙ্গে সালমান খান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও স্টেটের কিছু বিদ্যালয়ে পরীক্ষামূলকভাবে এআই ল্যাব চালু হয়েছে। এসব ল্যাবে শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীর প্রয়োজন অনুযায়ী পাঠ্যক্রম সাজাচ্ছেন। উদ্যোগটি সফল করতে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। কারণ, শিক্ষকেরা এআইকে নিজেদের দক্ষতা বাড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। তবে শিক্ষায় এআই ব্যবহারের শঙ্কাও রয়েছে। অনেক শিক্ষক আশঙ্কা করছেন, এতে তাঁদের দক্ষতা হ্রাস পেতে পারে, মানবিক যোগাযোগ কমে যেতে পারে কিংবা ভালো অবকাঠামোসম্পন্ন ও পিছিয়ে থাকা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ব্যবধান আরও বেড়ে যেতে পারে।

প্রসঙ্গত, সব বয়সের শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইনে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষার উপকরণ সহজলভ্য করার লক্ষ্য নিয়ে ২০০৮ সালে যাত্রা শুরু করে খান একাডেমি। অলাভজনক শিক্ষামূলক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম খান একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সালমান খান বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পেয়েছেন। বর্তমানে বিশ্বের ১৯০টি দেশে ১৫ কোটির বেশি নিবন্ধিত ব্যবহারকারী রয়েছে খান একাডেমির। ৫০টির বেশি ভাষায় প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি।

সূত্র: দ্য ভার্জ

Lading . . .