Advertisement

স্টারবাকসকে পরাজিত করল করাচির সাত্তার বকশ

ডেইলি স্টার

প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

স্টারবাকস ও সাত্তার বকশের লোগো। কোলাজ ছবি: সংগৃহীত
স্টারবাকস ও সাত্তার বকশের লোগো। কোলাজ ছবি: সংগৃহীত

বিখ্যাত বা সুপরিচিত ব্র্যান্ডের আদলে নতুন ব্র্যান্ড তৈরির ইতিহাস নতুন নয়। কেউ এই ধারাকে নকল বলেন, কেউ দাবি করেন এটি সৃজনশীলতার উদাহরণ। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এ ধরনের 'ক্লোন' ব্র্যান্ডকে মূল ব্র্যান্ডের সঙ্গে আইনি লড়াইয়ে জড়াতে হয়, এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জয় হয় অপেক্ষাকৃত পুরনো ও বড় ব্র্যান্ডটির।

তবে পাকিস্তানে এক ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটেছে। কপিরাইটের আইনি লড়াইয়ে বিশ্বখ্যাত কফির ব্র্যান্ড স্টারবাকস হেরে গেছে দেশটির স্থানীয় ব্র্যান্ড সাত্তার বকশ-এর কাছে।

চলতি সপ্তাহে গালফ নিউজ, নিউজ ১৮ ও এনডিটিভির প্রতিবেদনে এই অভিনব ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, দুই ব্র্যান্ডের নামে যেমন সাদৃশ্য আছে, তেমনই সাত্তার বকশের লোগোটিও স্টারবাকস থেকে অনুপ্রাণিত।

সাত্তার বকশ পাকিস্তানে জনপ্রিয় নাম। শুধু ভালো মানের কফির জন্য নয়, অভিনব ব্র্যান্ডিং একে অন্যান্য ক্যাফে থেকে আলাদা করেছে। সাত্তার বকশের গোলাকার সবুজ লোগোতে একজন গোঁফওয়ালা মানুষ দেখা যায়। অনেকেই মত দিয়েছেন, এটি স্টারবাকসের বিখ্যাত মৎস্য কন্যা সম্বলিত সবুজ লোগোর আদলে বানানো।

স্টারবাকসের 'নকল' করে বানানো লোগো ও ব্র্যান্ডিং সাত্তার বকশের প্রতি মানুষকে আকৃষ্ট করে। জন্মলগ্ন থেকেই বিতর্কিত ও আলোচিত হয় ব্র্যান্ডটি।

সে সময় পাকিস্তানে স্টারবাকস না থাকলেও সাত্তার বকশের বিরুদ্ধে ট্রেডমার্ক আইনে তারা মামলা দেয়।

'কফি সম্রাট' স্টারবাকসের সঙ্গে ট্রেডমার্ক লড়াইয়ে জেতার পর করাচির ওই ক্যাফে এখন বিশ্ব সম্প্রদায়ের মনোযোগ কেড়েছে।

পাকিস্তানের ট্রেডমার্ক আইন সুপরিচিত ব্র্যান্ডগুলোকে বিশেষ সুরক্ষা দেয়। ওই আইনের আওতায় মামলা দেয় স্টারবাকস। তাদের যুক্তি ছিল, সাত্তার বকশের নাম ও লোগো ওই সুরক্ষা লঙ্ঘন করেছে। অনেকে সাত্তার বকশের লোগো দেখে সেটাকে স্টারবাকস ভেবে ভুল করতে পারে। অথবা, সাত্তার বকশের জনপ্রিয়তার কারণে স্টারবাকস আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বা তাদের নিজেদের ব্র্যান্ড দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।

অপরদিকে সাত্তার বকশ যুক্তি দেয়, তাদের ব্র্যান্ড ও লোগো পাকিস্তানি সংস্কৃতির সঙ্গে মিলিয়ে তৈরি করা হয়েছে এবং এটা নকল নয়, 'ব্যাঙ্গ'। তারা স্টারবাকসের মৎস কন্যা ও সাত্তার বকশের গোঁফওয়ালা মানুষকে পাশাপাশি বসিয়ে দেখিয়েছে, দুই লোগোকে এক করে দেখার বা বিভ্রান্তির সুযোগ নেই। পাশাপাশি, দুই ব্র্যান্ডের ফন্ট ও রঙও ভিন্ন এবং তাদের মেনুতে কফির পাশাপাশি অন্য ধরনের স্থানীয় ও বিদেশি খাবার আছে।

২০১৩ সালে রিজওয়ান আহমদ ও আদনান ইউসুফ করাচিতে 'সাত্তার বকশ' প্রতিষ্ঠা করেন। স্টারবাকস আপত্তি জানালে ক্যাফের প্রতিষ্ঠাতারা জানান, তাদের ক্যাফেটি 'প্যারোডি' ও স্থানীয় সংস্কৃতিকে মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে, নকল করার উদ্দেশ্যে নয়।

স্টারবাকসের লোগো থেকে অনুপ্রেরণা নিলেও শুরু থেকেই নিজস্ব পরিচয় গড়ে তোলায় মনোযোগী ছিল সাত্তার বকশ। খাবারের মেনুতে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক স্বাদের সন্নিবেশ ঘটেছে।

মেনুতে 'বেশরম বার্গার', 'লক পিজ্জার' মতো অভিনব সব আইটেম খুঁজে পান ভোক্তারা।

ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ককে ব্যঙ্গ করে তৈরি করা লক পিজ্জার একাংশ নিরামিষ টপিং আর অপর অংশে আমিষ খুঁজে পাবেন ভোক্তারা।

বেশরম বার্গারে শুধু বার্গারই পাবেন ভোক্তারা—প্রথাগত বার্গারের মতো এতে বান বা রুটি থাকে না।

সাত্তার বকশের প্রতিটি শাখার সাজসজ্জা, মেনুর আইটেম, বিজ্ঞাপন ও ব্র্যান্ডিং—সব ক্ষেত্রেই স্থানীয় সৃজনশীলতার ছাপ পাওয়া যায়।

প্রায় ১২ বছরের আইনি লড়াইয়ের পর সাত্তার বকশের পক্ষে যায় আদালতের রায়। তবে এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মূল লোগো খানিকটা বদলাতে বাধ্য হয় স্থানীয় ব্র্যান্ডটি।

এই সিদ্ধান্তকে এক বৈশ্বিক মহীরুহের বিরুদ্ধে স্থানীয় সৃজনশীলতার বিজয় হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।

Lading . . .