মিগ-২১ অবসরে পাঠাল ভারত, আসছে স্থানীয় ‘তেজস’
প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

যুদ্ধবিমানের ইতিহাসে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে নির্মিত মিগ-২১ একটি ঐতিহ্যবাহী নাম। পুরনো হলেও এখনো ভারতসহ অনেক দেশের বিমানবহরে সমীহ জাগানো নাম এই মিগ-২১।
অবশেষে ৬০ বছর পর বহরে থাকা মিগ২১ যুদ্ধবিমানগুলোকে অবসরে পাঠাচ্ছে ভারত। গত শনিবার এই তথ্য জানিয়েছে ভারতের গণমাধ্যম দ্য হিন্দু ও স্টেটসম্যান।
আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর চণ্ডীগড়ের বিমান ঘাঁটিতে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যুদ্ধবিমানগুলোকে অবসরে পাঠানো হবে।
১৯৬৩ সালে প্রথমবারের মতো ভারতের বিমানবহরে যুক্ত হয় মিগ-২১। সেটাই ছিল ভারতের প্রথম শব্দের চেয়েও দ্রুতগতিতে চলতে সক্ষম 'সুপারসনিক যুদ্ধবিমান'।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামেও বিশেষ ভূমিকা রাখে ওই যুদ্ধবিমান।
সম্প্রতি এক প্রতীকী মিশনে শেষবারের মতো একটি মিগ-২১ আকাশে উড়েছে। রাজস্থানের বিকেনারের কাছাকাছি জায়গায় অবস্থিত নাল বিমানঘাঁটি থেকে ওই ফ্লাইট পরিচালনা করেন ভারতের বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল এ.পি. সিং।
ভারতের বিমানবাহিনীর মুখপাত্র উইং কমান্ডার জয়দীপ সিং বলেন, 'মিগ-২১ ১৯৬৫ সালে ও ১৯৭১ সালের যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ১৪ ডিসেম্বর ঢাকায় গভর্নরের বাড়িতে বিমানহামলার কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। পরের দিনই গভর্নর পদত্যাগ করেন এবং ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের ৯৩ হাজার সেনা আত্মসমর্পণ করে। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালে কারগিলে অপারেশন সফেদ সাগরেও মিগ-২১ ব্যবহার হয়। সে সময় ওই যুদ্ধবিমান ভারতের আকাশসীমায় অনুপ্রবেশকারী পাকিস্তানী আটলান্টিক উড়োজাহাজকে ভূপাতিত করে।
মিগ-২১ এর আদলেই নির্মাণ করা হয় তেজস। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত এই যুদ্ধবিমানগুলো মিগ-২১ এর স্থলাভিষিক্ত হবে।
এ.পি. সিং বলেন, 'মিগ-২১ এর বিকল্প হিসেবেই তেজস নির্মাণ করা হয়েছে। মিগ-২১ এর আদলেই এর নকশা তৈরি হয়েছে। মিরেজ যুদ্ধবিমান থেকে অনুপ্রেরণা নেওয়া হয়েছে। আমরা তেজসের উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখব। এতে নতুন নতুন অস্ত্র যুক্ত করা হবে। শুরুতে প্রশিক্ষণ বিমান হিসেবেই এগুলো মূলত ব্যবহার হবে।'
'তেজস মডেলের ৮৩টি যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি হয়েছে। পাইপলাইনে আরও আছে। আমি আশা করছি ধীরে ধীরে মিগ-২১ এর সব দায়িত্ব তেজস গ্রহণ করবে', যোগ করেন তিনি।
তেজস যুদ্ধবিমান নির্মাণের পরিকল্পনার মূলে আছে ভারতের সরকারি সংস্থা হিন্দুস্থান অ্যারোনটিকস লিমিটেড (এইচএএল)। ১৯৮৬ সালে এর নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং ২০০১ সালে প্রথম বিমানটি আকাশে ওড়ে।
আপাতত ভারতের বিমানবহরে ৩৮টি তেজস বিমান সক্রিয় আছে। তবে শিগগির সংখ্যাটি বেড়ে ২০০ হতে যাচ্ছে।
তেজসকে বলা হচ্ছে ৪.৫ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান। সার্বিকভাবে এই আধুনিক যুদ্ধবিমান মিগ২১-এর সক্ষমতাকে ছাড়িয়েছে।
এটি যুদ্ধক্ষেত্রে বিভিন্ন ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে, যেমন এয়ার টু এয়ার, এয়ার ট গ্রাউন্ড ও নজরদারি মিশন। এগুলোতে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা যায়। অপরদিকে, মিগ-২১ মূলত আকাশপথে আসা হামলা প্রতিহত করতে পারদর্শী (এয়ার টু এয়ার)।
তেজস যুদ্ধবিমানে সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৩০০ কেজি ওজনের অস্ত্র বহন করা যায়। মিগ-২১ এর ক্ষেত্রে সংখ্যাটি ছিল মাত্র ১ হাজার ৩৫০ কেজি।
তেজস নির্মাণে অত্যাধুনিক উপকরণ ও রাডার সিগনাল শোষণকারী কোটিং ব্যবহার হয়েছে। যার ফলে মিগ-২১ এর তুলনায় শত্রুর রাডার ফাঁকি দিতে এই যুদ্ধবিমান বেশি কার্যকর।
সব মিলিয়ে বলা যায়, তেজসের বহুল ব্যবহারে ভারতের বিমানবাহিনী এক নতুন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে।