প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

কিস্তির বোঝা মাথায় নিয়ে প্রতিদিন নদীতে জাল ফেলছেন পিরোজপুরের জেলেরা। কিন্তু ভরা মৌসুমেও কাঙ্ক্ষিত ইলিশ মিলছে না। হতাশা আর অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে তাঁদের। জেলেরা বলছেন, জাটকা ধরা আর অবৈধ জাল ব্যবহারের কারণে নদীগুলো ইলিশশূন্য হয়ে পড়ছে।
পিরোজপুরের প্রধান নদী কালীগঙ্গা, কচা ও বলেশ্বর। বছর কয়েক আগেও এসব নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়া যেত। তবে এখন কয়েক দিন জাল ফেলেও জেলেদের হাতে উঠছে না প্রত্যাশিত মাছ। মাঝেমধ্যে দু-একটা উঠলেও তা আকারে ছোট। তাই জীবিকা নির্বাহের চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়ছে জেলেদের।
কালীগঙ্গা ও কচা নদীর মোহনায় সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা জাল ফেলে রাখলেও কাঙ্ক্ষিত মাছ ধরা পড়ছে না। কয়েকজন জেলে বলেন, পরিবার নিয়ে তাঁদের না খেয়ে থাকতে হয়, এর ওপর আবার এনজিওর কিস্তির চাপ। তাঁদের অভিযোগ, কিছু অসাধু জেলে অবৈধভাবে জাটকা ও ইলিশ ধরায় মাছ কমে গেছে। তবে কর্তৃপক্ষ কঠোর হলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
কালীগঙ্গা নদীতে জাল ফেলতে আসা জেলে মাহতাব উদ্দিন বলেন, আগে তাঁরা অনেক মাছ পেতেন। কয়েক বছর হলো আগের মতো মাছ পান না। বাধা জাল, চরগড়া, কারেন্ট জাল—এসবের কারণেই এখন মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। সারা দিন জাল ফেলে খালি হাতে ফিরতে হয়। অনেক সময় পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হয়, তার ওপর কিস্তির বোঝা।
পিরোজপুরের বেকুটিয়া সেতুর দুই প্রান্তে বিকেল হলেই বসে ইলিশের বাজার। আগে এখানে ভিড় লেগে থাকত। খুলনা ও বরিশালগামী যাত্রীদের পাশাপাশি স্থানীয় ক্রেতারাও বাজার থেকে ইলিশ কিনতেন। এখন সে দৃশ্য নেই। ইলিশ মেলে না বললেই চলে, আর যেটুকু আছে তার দাম অনেক চড়া।
এক থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২ হাজার ৬০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায়। ৫০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকায়। দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে।
বাজারে ইলিশ কিনতে আসা ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ‘ভেবেছিলাম এ বছর ভালো ইলিশ পাব, দামও নাগালে থাকবে। কিন্তু দাম গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। গত বছর যে মাছ ১ হাজার টাকায় কিনেছি, এ বছর একই ওজনের জন্য ৬০০-৭০০ টাকা বেশি দিতে হচ্ছে। যা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।’
হাসিফ নামের একজন ক্রেতা বলেন, তিনি দুটি মাছ কিনেছেন, ওজন ১ কেজি ৬০০ গ্রাম। দাম নিয়েছে ২ হাজার ৭০০ টাকা। দাম অনেক বেশি মনে হচ্ছে।
বিক্রেতাদের দাবি, যে পরিমাণ মাছ পাওয়ার কথা, সে পরিমাণে জেলেরা পাচ্ছেন না। তাই দাম বেড়েছে। ফলে মধ্যবিত্ত ও গরিব মানুষ এখন ইলিশ কিনতে পারছেন না। বিক্রেতা আলামিন ইসলাম বলেন, ভরা মৌসুমেও ইলিশ উঠছে না। যা মিলছে, তা ছোট আকারের। গত বছরের তুলনায় এবার মাছও কম, দামও বেশি।
পিরোজপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সঞ্জীব সন্নামত বলেন, আগে নদীগুলোতে নাব্যতা–সংকট ছিল না, তাই ইলিশ মিলত। এখন ডুবোচরের কারণে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে সংকট দূর হলে আবার ইলিশ পাওয়া যাবে। জাটকা সংরক্ষণ ও অবৈধ জাল নির্মূলে অভিযান চলছে। এসব ব্যবস্থা জোরদার হলে নদীতে আবারও ইলিশ ফিরবে।