বরিশালে বিক্ষোভ ঘিরে উত্তেজনা, কর্মবিরতির হুঁশিয়ারি চিকিৎসক-কর্মচারীদের
প্রকাশ: ১৭ আগস্ট, ২০২৫

বরিশালে স্বাস্থ্যসেবা সংস্কার আন্দোলনে হামলার বিচার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভকারী ব্যক্তিরা শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে গেলে উত্তেজনা দেখা দেয়। একপর্যায়ে হাসপাতালের কর্মচারীদের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ইটপাটকেল ছোড়ার ঘটনা ঘটে। এদিকে হাসপাতালে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে চিকিৎসক-কর্মচারীরা কর্মবিরতিতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
আজ রোববার বেলা একটায় নগরের সদর অশ্বিনী কুমার হলের সামনে থেকে স্বাস্থ্যসেবা সংস্কারসহ চার দফা দাবিতে ছাত্র-জনতার ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে গেলে প্রধান ফটকে থামিয়ে দেয় পুলিশ। পরে সেখানে শিক্ষার্থীরা হামলার বিচার দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এ সময় বিক্ষোভকারী ব্যক্তিদের হাতে লাঠি দেখা যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিক্ষোভকারী ব্যক্তিরা হাসপাতালের সামনে এলে মূল ফটক আটকে দেওয়া হয়। এ সময় তাঁরা ছাত্রদের অনশনে হামলাকারী ব্যক্তিদের বিচারের জন্য আশ্বাস চেয়ে হাসপাতাল পরিচালককে এক ঘণ্টার সময়সীমা দেন। এতে হাসপাতালের কর্মচারী ও বিক্ষোভকারী ব্যক্তিদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে একজন ইন্টার্ন চিকিৎসকের হাসপাতাল ফটকে লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পায়। পরে হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মচারীরা ধর্মঘটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং কয়েকজন চিকিৎসক-কর্মকর্তা হাসপাতাল পরিচালকের কাছে গিয়ে তাঁদের সিদ্ধান্তের কথা জানান। পরিচালক এ সময় সাধারণ রোগীদের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে ধর্মঘটে না যাওয়ার অনুরোধ করেন এবং আগামীকাল সোমবার সকাল ১০টায় উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে সভা আহ্বান করেন। সেখানে সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দিলে ক্ষুব্ধ চিকিৎসক-কর্মচারীরা তাঁদের সিদ্ধান্ত আগামীকাল ১০টা পর্যন্ত স্থগিত করেন। এই উত্তেজনার মধ্যেই সেখানে উভয় পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ হস্তক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বেলা পৌনে তিনটার দিকে বিক্ষোভকারী ব্যক্তিরা বিক্ষোভ করে হাসপাতাল এলাকা ত্যাগ করে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে আসেন। সেখানে তাঁরা এক ঘণ্টা অবস্থান করে দাবির পক্ষে স্লোগান দেন। পরে আন্দোলনের সংগঠক মহিউদ্দিন রনি আগামীকাল সকালে নগরের আমতলা মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করে কর্মসূচি শেষ করেন।
বরিশাল মহানগর পুলিশের উপকমিশনার ইমদাদুল হোসেন জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মশিউল মুনীর বলেন, ‘আন্দোলনের কারণে আমাদের হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আগামীকাল সভা ডাকা হয়েছে। আমি সবাইকে ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানাচ্ছি।’
হাসপাতালের পরিচালক প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালের পরিস্থিতি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এখন একটি ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। এখানে ৯০০ নার্স ও চিকিৎসক রয়েছেন। আতঙ্কের কারণে স্বাস্থ্যসেবা বিঘ্নিত হচ্ছে।
২০ দিন ধরে আন্দোলন
ছাত্র-জনতার ব্যানারে ২০ দিন ধরে বরিশালে আন্দোলন চলছে। আন্দোলনে সংগঠক হিসেবে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি। আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত শুক্রবার (৮ আগস্ট) থেকে গত বুধবার পর্যন্ত ৬ দিনে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক সাড়ে ২৯ ঘণ্টা অবরোধ করেন আন্দোলনকারী ব্যক্তিরা।
একই সঙ্গে হাসপাতালের মূল ফটকের সামনে কয়েকজন শিক্ষার্থী তিন দফা দাবি আদায়ে তিন দিন ধরে অনশন করছিলেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার বরিশালে আসেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু জাফর। তিনি ওই দিন শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের সম্মেলনকক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, চিকিৎসক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনা করে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু আন্দোলনকারী ব্যক্তিরা স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বরিশালে না আসা পর্যন্ত আন্দোলন প্রত্যাহার করবেন না বলে জানান। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতালে অনশনকারী শিক্ষার্থীরা কয়েকজন কর্মচারীকে লাঞ্ছিত করেছেন, এমন অভিযোগে কর্মচারীরা একত্র হয়ে আন্দোলনকারী ব্যক্তিদের ধাওয়া দেন। এ সময় কয়েকজনকে মারধর করতেও দেখা যায়। পরে তাঁদের অনশন কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায়।
এরপর গতকাল শনিবার বেলা একটার দিকে বরিশাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন সংগঠক মহিউদ্দিন রনি।
আন্দোলনকারী ব্যক্তিরা প্রথমে তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। দাবিগুলো হলো শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজসহ দেশের সব সরকারি হাসপাতালে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, পর্যাপ্ত দক্ষ জনবল নিয়োগ, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করা; স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ দেশের সব হাসপাতালে দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি, দলীয় লেজুড়বৃত্তিক চিকিৎসকদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, ডিজিটাল অটোমেশন ও স্বচ্ছ জবাবদিহিমূলক টাস্কফোর্স গঠন এবং স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনকে জনগণের ভোগান্তির বিষয় শুনে তদন্ত সাপেক্ষে আবার সুপারিশ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে জোর পদক্ষেপ নেওয়া।
পরে বৃহস্পতিবার আন্দোলনকারী ব্যক্তিদের ওপর হামলার পর তিন দফার দাবির সঙ্গে অনশনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিও যুক্ত করা হয়।