লকার থেকে ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়াই প্রশ্নপত্র খুলে নেওয়ার অভিযোগ
প্রকাশ: ৮ আগস্ট, ২০২৫

পটুয়াখালীর বাউফলে থানার লকার থেকে ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়াই পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র খুলে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তা-ই নয়, নিয়মানুযায়ী প্রশ্নপত্র খামবন্দি অবস্থায় কেন্দ্রে নিয়ে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রেরিত এসএমএস পাওয়ার পর নির্ধারিত সেটকোডের প্রশ্নপত্র খোলার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। থানা থেকেই খামের সিলগালা খুলে কেন্দ্র সচিবদের হাতে প্রশ্নপত্র বিতরণ করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে প্রতিটি বিষয়ের পরীক্ষার জন্য থানার লকার থেকে পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বিতরণের নিয়ম রয়েছে। অথচ বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসের দুজন স্টাফ শাহাবুদ্দিন মুন্সি ও ইয়াকুব আলী থানা থেকেই সরসারি প্রশ্নপত্র খুলে কেন্দ্র সচিবদের হাতে বিতরণ করছেন। আর এই সুযোগে কয়েকটি কেন্দ্রের সচিব তাদের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের শতভাগ পাশ করানোর জন্য বিশেষ সুবিধা লুফে নিচ্ছেন। বিনিময়ে মোটা অঙ্কের অর্থ লেনদেনের গুঞ্জনও রয়েছে। শাহাবুদ্দিন মুন্সি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহকারী থেকে সদ্য পদোন্নতি পাওয়া উপ-প্রশাসনিক কর্মকর্তা আর ইয়াকুব আলীও একইভাবে কম্পিউটার অপারেটর থেকে পদোন্নতি পাওয়া প্রশাসনিক কর্মকর্তা। এই দুই কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে কয়েকটি কেন্দ্রে নকলের মহোৎসব চলছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
চলমান আলিম পরীক্ষায় শাহাবুদ্দিন মুন্সি ধানদি কামিল মাদ্রাসা ও ইয়াকুব আলী নওমালা আলিম পরীক্ষাকেন্দ্রে ট্যাগ অফিসারের দায়িত্ব পালন করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই দুই কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা কয়েকজন কক্ষ পরিদর্শক বলেন, এখানে পরীক্ষার সময় নির্ধারণ করা নেই। যে যতক্ষণ পারে ততক্ষণ লিখতে থাকে। দুটি কেন্দ্রেই দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ট্যাগ অফিসার) নির্ধারিত অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অধ্যক্ষের অফিস কক্ষে বসে থাকেন। আর পরীক্ষা শুরুর আগেই প্রশ্নপত্র পৌঁছে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের হাতে। অনেক পরীক্ষার্থী বই নিয়ে টেবিলের ওপর রেখে নির্বিঘ্নে লিখে যাচ্ছে। পরীক্ষাকেন্দ্র সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের দাখিল পরীক্ষায় কারাখানা আলিম মাদ্রাসা থেকে ২১ জন অংশ নিয়ে মাত্র ১ জন পাশ করেছে। ২০২৫ সালে একই মাদ্রাসা থেকে ৩৯ জন পরীক্ষা দিয়ে সবাই পাশ করেছে। ২০২৪ সালে পশ্চিম কালিশুরী বালিকা দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় ১১ জন অংশ নিয়ে সবাই ফেল করেছে। ২০২৫ সালে একই মাদ্রাসা থেকে ২০ জন অংশ নিয়ে সবাই পাশ করেছে। ২০২৪ সালে ধানদি কামিল মাদ্রাসা থেকে ৫৯ জন অংশ নিয়ে মাত্র ১৫ জন পাশ করেছে।
অথচ ২০২৫ সালে একই মাদ্রাসা থেকে ১০২ জন অংশ নিয়ে ৯৫ জন পাশ করেছে। এর মধ্যে ১৬ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে উপ-প্রশাসনিক কর্মকর্তা শাহাবুদ্দিন মুন্সি বলেন, এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমি শুধু ইউএনও স্যারের নির্দেশ পালন করছি। আর ইউএনও স্যারের নির্দেশে প্রশ্নপত্র থানার লকার থেকে সরবরাহ করছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইয়াকুব আলী। প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইয়াকুব আলী বলেন, ইউএনও স্যারের নির্দেশে খুবই সুন্দরভাবে আমার কেন্দ্রে নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। তিনি বলেন, ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে থানার লকার থেকে প্রশ্নপত্র সরবরাহ করার নিয়ম সম্পর্কে আমার জানা নেই। ইউএনও স্যার আমাকে যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, সেভাবেই করছি। বিষয়টি জানার জন্য বাউফলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর কামরুল আহসান সাংবাদিকদের বলেন, আমি বাউফলের ইউএনওর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে এখনই কথা বলে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
আরও পড়ুন