নয়ন বন্ডের পর বরগুনায় আবারও মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে কিশোর গ্যাং
প্রকাশ: ২১ আগস্ট, ২০২৫

বরগুনা শহরে কিশোর গ্যাং লিডার নয়ন বন্ডের পর আবারও মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং। এক সপ্তাহে দুই দিনের ব্যবধানে রবি ও মঙ্গলবার শহরে দুটি অপরাধের ঘটনা ঘটেছে। এতে নড়েচড়ে উঠেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
মঙ্গলবার মাটিতে থু-তু ফেলে তা জিহ্বা দিয়ে এক কিশোরকে চেটে খেতে বাধ্য করার ঘটনায় দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার হওয়া দুই কিশোর গ্যাং সদস্য হলো- বরগুনা পৌর শহরের কাঠপট্টি এলাকার হৃদয় রায় এবং লঞ্চঘাট এলাকার তাজবীদ আবেদীন। রোববার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় গেফতার কিশোর গ্যাংয়ের ৪ সদস্যের মঙ্গলবার জামিন নামঞ্জুর করে সেফহোমে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন শিশু আদালত।
বুধবার বিষয়টি নিশ্চিত করেন বরগুনা সদর থানার ওসি ইয়াকুব হোসাইন। মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি শিশুকে হামলার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এরপর পুলিশ কিশোর গ্যাংয়ের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করে । এসব ঘটনায় আতঙ্কে রয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
জানা গেছে, মঙ্গলবার বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, তাজবীদসহ কয়েকজন কিশোর গ্যাং সদস্য মাটিতে থু-তু ফেলে তা জিহ্বা দিয়ে খেতে বাধ্য করছে এক কিশোরকে। ওই কিশোরের নাম তাওহীদুল ইসলাম তোফা। একটি ভবনের পেছনে তোফাকে নিয়ে মাটিতে থু-তু ফেলে তা জিব্বা দিয়ে চেটে খেতে বলে। তোফা বারবার কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বলে আমি মাফ চাই আর ‘হা হা’ রিঅ্যাক্ট দেব না। তারপরও কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা খুনের ভয় দেখিয়ে থু-তু খেতে বলে।
তাওহীদুল ইসলাম তোফা বলে- তাজবীদের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে আমি তাতে ‘হা হা’ রিঅ্যাক্ট দিই। এরপর ওরা আমাকে সার্কিট হাউস মাঠ থেকে ধরে নিয়ে নির্জন জায়গায় কিল-ঘুসি মেরে আহত করে। পরে থু-তু ফেলে আমাকে তা খেতে বাধ্য করে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
এমন ঘটনায় বরগুনার শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। রেজাউল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, এই গ্যাং কালচার বন্ধ করতে পুলিশকে কঠোর হতে হবে। কেউ যদি তদবির করে, তাকেও আইনের আওতায় আনতে হবে।
বরগুনা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি হাসানুর রহমান ঝন্টু বলেন, কয়েক বছর আগে কিশোর গ্যাং নয়ন বন্ডের বলি হয়েছিল রিফাত শরীফ। সেই মামলায় মিন্নিসহ ৬ কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের ফাঁসির রায় হয়। এরপর কিছুদিন বরগুনা শান্ত ছিল। আবার কিশোর গ্যাং সক্রিয় হচ্ছে। এক সপ্তাহে শহরের মধ্যে দুটি ঘটনা ঘটে। নিরীহ শিশুদের স্কুলে যাওয়া নিরাপদ মনে হচ্ছে না। এ ব্যাপারে প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।
বরগুনা সদর থানার ওসি ইয়াকুব হোসাইন বলেন, ঘটনাটি আমাদের নজরে আসার পর দ্রুত অভিযান চালিয়ে হৃদয় রায় ও তাজবীদ আবেদীনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। গ্যাং সদস্যদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে রোববার আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, গগন মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী বায়জিদ শিকদারকে মারধর করছে আরেক দল কিশোর গ্যাং সদস্য। মারধরের সময় তারা ভিডিও কলের মাধ্যমে ঘটনাটি অন্য কাউকে দেখাচ্ছিল।
এ ঘটনায় করা একটি মামলায় কিশোর গ্যাংয়ের ৪ সদস্য শিশু আদালতে মঙ্গলবার হাজির হলে বিচারক ও জেলা জজ লায়লাতুল ফেরদৌস তাদের জামিন নামঞ্জুর করে সেফহোমে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
আরও পড়ুন