আট বছর পরে সিডরম্যান জয়দেব দত্তের হত্যার বিচার চেয়ে ছেলের মামলা
প্রকাশ: ৮ আগস্ট, ২০২৫

আট বছর পরে সিডরম্যান খ্যাত জয়দেব দত্তকে হত্যার বিচার চেয়ে বৃহস্পতিবার ছেলে প্রসেনজিৎ দত্ত আমতলী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।
মামলায় নিহতের শ্যালক সঞ্জীব দাস, তালতলী উপজেলা পরিষদের সাবেক দুই চেয়ারম্যান রেজবি-উল কবির জোমাদ্দার, মনিরুজ্জামান মিন্টু ও তিন ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আদালতের বিচারক মো. ইফতি হাসান ইমরান মামলাটি আমলে নিয়ে পটুয়াখালী পিবিআই তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরে উপকূলীয় অঞ্চল লন্ডভন্ড করে দেয়। ওই ঘূর্ণিঝড়ের রাতে তালতলী উপজেলা ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির উপজেলা টিম লিটার জয়দেব দত্ত তার জীবন বাজি রেখে সারা রাত উপকূলের হাজার হাজার মানুষকে মাইকিং করে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসেন। তার এমন সাহসী ভূমিকার জন্য ইত্যাদি কর্তৃপক্ষ তাকে সিডরম্যান ঘোষণা করেন।
ওই সময় থেকেই তিনি সিডরম্যান হিসেবে সর্বস্তরের মানুষের কাছে পরিচিতি। ঘূর্ণিঝড় সিডরের ১০ বছর পরে ২০১৭ সালের ২ আগস্ট রাতে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। কিন্তু তৎকালীন এমপি বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর নগ্ন হস্তক্ষেপে পরিবার মামলা করতে পারেনি। পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়।
এ হত্যার ৮ বছর পরে তার ছেলে প্রসেনজিৎ দত্ত বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার আমতলী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
অভিযোগ রয়েছে, সিডরম্যান জয়দেব দত্ত তালতলী শহরে স্বর্ণের বড় ব্যবসায়ী ছিলেন। এছাড়াও তার তালতলী শহরে কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি ছিল। ওই সম্পত্তি দখল করতেই মামলার প্রধান আসামি সঞ্জীব দত্ত ও তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেজবি-উল কবির জোমাদ্দার, মনিরুজ্জামান মিন্টুসহ আসামিরা পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করেছে।
মামলার বাদী নিহত জয়দেব দত্তের ছেলে প্রসেনজিৎ দত্ত বলেন, বাবার হত্যার ঘটনায় মামলা করতে পারব তা কোনো দিন ভাবিনি। কিন্তু আল্লাহ সত্য ঘটনা উদঘাটন করবে বলেই আমি মামলা করার সুযোগ পেয়েছি।
তিনি আরও বলেন, প্রধান আসামি আমার মামা সঞ্জীব দাশের পরিকল্পনায় আসামিরা আমার বাবার সম্পত্তি দখল করতেই পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। তারা হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি আমার বাবা আত্মহত্যা করেছে বলে অপবাদ দিয়ে তৎকালীন সময়ে মামলা করতে দেয়নি। এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর নগ্ন হস্তক্ষেপে দ্রুত লাশের সৎকার করার নির্দেশ দেন। আমার বিশ্বাস আমি বাবার হত্যার বিচার পাব।
মামলার প্রধান আসামি সঞ্জীব দাশ বলেন, আমাকে হয়রানি করতেই মামলায় আসামি করা হয়েছে।
আমতলী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পেশকার মো. কালাম হোসেন বলেন, বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে পটুয়াখালী পিবিআইকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বলেন, এখনো আদালতের নথিপত্র পাইনি। আদালতের নির্দেশনা মতে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।