চরফ্যাশনে যুবদলের সাবেক নেতার মৃত্যু নিয়ে রহস্য
প্রকাশ: ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় বশির তালুকদার (৫৫) নামের ওয়ার্ড যুবদলের সাবেক এক নেতার মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেলে উপজেলার শিবারহাট আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতার সঙ্গে কথা–কাটাকাটি ও হাতাহাতির পর চরফ্যাশন শহরে যাওয়ার পথে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
মারা যাওয়া বশির তালুকদার উপজেলার আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাবেক সভাপতি এবং একই ওয়ার্ডের বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ তালুকদারের ছেলে। তিনি পেশায় একজন পল্লিচিকিৎসক ছিলেন। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়েছে।
চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শোভন কুমার বসাক বলেন, বশির তালুকদারকে তাঁর স্বজনেরা মৃত অবস্থায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এনেছেন। ময়নাতদন্ত ছাড়া তিনি কী কারণে মারা গেছেন বলা মুশকিল।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মারা যাওয়া বশির তালুকদাররা চার ভাই। বশিরের সঙ্গে আবদুল মালেক তালুকদারের দীর্ঘদিন ধরে জমি নিয়ে বিরোধ চলছে। মালেক থানায় অভিযোগ করলে গতকাল সকালে তদন্তে যায় পুলিশ। এ সময় আমিন হিসেবে জমি মাপার জন্য স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শাহাবুদ্দিন মুইজের ভাগনে সাব্বির মাতব্বর উপস্থিত ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, ওই ঘটনার পর গতকাল বিকেলে বশির তালুকদার মোটরসাইকেলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে শিবারহাট আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে যান। তখন সেখানে আসেন সাব্বির মাতব্বর। বশির সকালে বাড়িতে পুলিশ আসার জন্য সাব্বিরকে দায়ী করেন এবং ‘গ্রামের চৌকিদার’ বলে সম্বোধন করেন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে হাতাহাতি হয়। সাব্বির মাতব্বর ক্ষুব্ধ হয়ে বশির তালুকদারের গলা চেপে ধরেন। বশির তালুকদার তখন সাব্বিরকে চড়–থাপ্পড় মারেন। পরে স্থানীয় লোকজন ছাড়িয়ে নিলে যে যাঁর মতো চলে যান। এরপর ঘটনাস্থল থেকে ১৫০ ফুট দূরে যেতেই বশির তালুকদার মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার পর অভিযুক্ত সাব্বির মাতব্বর আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় তাঁকে পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর মামা ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি শাহাবুদ্দিন মুইজ বলেন, কথা–কাটাকাটি, ধস্তাধস্তির সঙ্গে বশিরের মৃত্যুর কোনো সম্পর্ক নেই। বশিরের স্বজনদের দাবি, তিনি ২০২২ সাল থেকে হৃদ্রোগে ভুগছেন। তখন চিকিৎসক তাঁকে রিং পরানোর পরামর্শ দেন। তবে তিনি রিং বসাননি। তাঁর স্ত্রী-সন্তানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাঁকে দাফন করা হয়েছে।
ভোলার সহকারী পুলিশ সুপার (চরফ্যাশন সার্কেল) মেহেদী হাসান বলেন, বশির আগে থেকে হৃদ্রোগের রোগী ছিলেন। তাঁর পরিবার কাগজপত্র দেখিয়েছে। বশিরের স্বজনেরা সবাই এসে আবেদন করায় তাঁরা হাসপাতাল থেকে মরদেহ হস্তান্তর করেছেন। আত্মীয়স্বজনকে মরদেহ দেওয়ার আগে তাঁরা তদন্ত করে দেখেছেন, এ ঘটনার সঙ্গে হাতাহাতি-মারামারির সম্পর্ক নেই। তবে মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগে সাব্বিরের সঙ্গে তাঁর ধস্তাধস্তি হয়েছিল।