Advertisement

জ্বালানি সংকটে সুন্দরীতেই ভরসা সাগরপাড়ের মানুষের

যুগান্তর

প্রকাশ: ৮ আগস্ট, ২০২৫

24obnd

পটুয়াখালীর কুয়াকাটাসহ দক্ষিণ উপকূলজুড়ে দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে ম্যানগ্রোভ বন। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে স্থানীয়দের দৈনন্দিন জীবনে। রান্নার জ্বালানির তীব্র সংকটে এখন সমুদ্র থেকে ভেসে আসা সুন্দরী ফলই হয়ে উঠেছে উপকূলীয় কুয়াকাটাবাসীর প্রধান ভরসা।

এক সময় এখানকার মানুষ ম্যানগ্রোভ বন থেকে সংগ্রহ করা লাকড়ির ওপর নির্ভর করে রান্না করতো। বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় লাকড়ির সংকট এখন চরমে। উপায় না পেয়ে সৈকতে ভেসে আসা সুন্দরবনের সুন্দরী গাছের ফল সংগ্রহ করে তা শুকিয়ে রান্নায় ব্যবহার করছেন আশপাশের বহু পরিবার।

স্থানীয়রা জানান, এসব ফল সুন্দরবনের নোনা জলের স্রোতে ভেসে এসে সাগর-নদীর বিভিন্ন স্থানে জমা হয়। পরে ঢেউয়ের ধাক্কায় ছড়িয়ে পড়ে উপকূলজুড়ে। কুয়াকাটা সৈকতে ভেসে আসা এসব ফল স্থানীয় বাসিন্দারা কুড়িয়ে রোদে শুকিয়ে ভিতরের বিচি ফেলে দিয়ে রান্নার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছেন।

জেলে মনির হোসেন বলেন, ‘আগে জঙ্গলের মধ্যে গেলেই লাকড়ি পাইতাম। এখন মাইলের পর মাইল ঘুরলেও একটা শুকনা ডালও মেলে না। সাগরে ভেসে আসা সুন্দরী ফলই এখন আমাদের ভরসা। ’

গৃহবধূ মনিরা খাতুন বলেন, লাকড়ির দাম অনেক। এর জন্য প্রতিদিন সাগরপাড়ে আইসা সুন্দরী ফল টোকাইয়া নিয়ে যায়।

পরিবেশবিদ ও স্থানীয়রা বলছেন, উপকূলজুড়ে সাগরতীর ও নদী ভাঙন, অনিয়ন্ত্রিত গাছকাটা, বসতি বিস্তার ও ঘরবাড়ি নির্মাণের কারণে গত এক দশকে কুয়াকাটার আশপাশের ম্যানগ্রোভ বন প্রায় ৭০ ভাগ বিলীন হয়ে গেছে। এর ফলে শুধু জ্বালানির সংকট নয়, উপকূলীয় সুরক্ষা ব্যবস্থাও মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।

পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ে কাজ করা সংগঠন ‘ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)’ এর সদস্য কামাল হাসান রনি বলেন, দ্রুত বনায়ন কার্যক্রম জোরদার করতে হবে এবং উপকূলবাসীর জন্য পরিবেশবান্ধব ও স্বল্পমূল্যে জ্বালানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের কলাপাড়া উপজেলা কমিটির আহবায়ক মেজবাহউদ্দিন মাননু বলেন, ইতোমধ্যে কলাপাড়া উপকূলের প্রায় ৭০ শতাংশ ম্যানগ্রোভ বন হারিয়ে গেছে। এখন উপকূলবাসী জোয়ারে ভেসে আসা সুন্দরী ফলকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে। তবে, বন বিভাগকে সুন্দরী ফল সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া দরকার। নতুন জেগে ওঠা চরে এ ফল বনায়ন সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

পরিবেশবিদরা মনে করেন, উপকূলের মানুষের জীবনমান, খাদ্যনিরাপত্তা ও পরিবেশ রক্ষায় এখনই সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। অন্যথায় এ সংকট আগামীতে আরও গভীর ও বিস্তৃত হতে পারে।

Lading . . .