Advertisement

চট্টগ্রামের চান্দগাঁওয়ে কে এই মুন্না আমিন

যুগান্তর

প্রকাশ: ৯ আগস্ট, ২০২৫

24obnd

গত বছরের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পর চাঁদাবাজদের চেহারা পরিবর্তন হয়েছে। পুরোনো চাঁদাবাজরা আত্মগোপনে গেলেও নতুন নতুন চাঁদাবাজের উত্থান হয়েছে। নগরীর চান্দগাঁও এলাকায় মুন্না আমিন নামে এমনই এক চাঁদাবাজের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও সাধারণ মানুষ। জামায়াতের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে এই ব্যক্তি জেলেও গেছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জেলে যাওয়ার মাস দেড়েক পর ছাড়া পেয়ে আবারও জড়িয়ে পড়েছে চাঁদাবাজিতে।

শুধু চান্দগাঁও এলাকায় নয়; পুরো চট্টগ্রামে পুরোনো চাঁদাবাজদের জায়গায় আসছে নতুন চাঁদাবাজ। সেই সঙ্গে বদলে যাচ্ছে চাঁদাবাজির ধরনও। এখন কেউ কেউ চাঁদা নিচ্ছে নানা অভিনব কৌশলে। ফেসবুক ব্যবহার করেও চাঁদাবাজি চলছে। এরই মধ্যে নব্য চাঁদাবাজদের থাবা পড়েছে গার্মেন্টস, পরিবহণ সেক্টর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, আবাসন খাতে। এমনকি ফুটপাতেও চাঁদাবাজদের থাবা। চান্দগাঁও এলাকার লোকজন জানান, গত বছরের ৫ আগস্টের পর চান্দগাঁও এলাকার নুরুল আমিনের ছেলে মুন্না আমিনের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠে সাধারণ মানুষ। মুন্নার নেতৃত্বে একটি সংঘবদ্ধ চক্র রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে অবৈধভাবে চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, সিএন্ডবি এলাকা, কালুরঘাট শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করেছে। টং দোকান থেকে শুরু করে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান, এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে মুন্নার বিরুদ্ধে।

চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিং প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেকে চাঁদাবাজির অভিযোগে মুন্না আমিনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের হুমকি ও এই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা চাঁদা আদায়ের পর পুনরায় আরও চাঁদা দাবি করায় ২২ ফেব্রুয়ারি সাইফ পাওয়ারটেকের মো. রেজাউল করিম নামে এক ব্যক্তি মুন্না আমিনসহ দুজন ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে ডবলমুরিং থানায় মামলা করেন। এরপর ডবলমুরিং থানা পুলিশ ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে মুন্না আমিনকে গ্রেফতার করে। কয়েক মাস জেলে থাকার পর জামিনে বের হয়ে আবার চাঁদাবাজিতে নেমে পড়ে সে। সর্বশেষ গত সপ্তাহে চান্দগাঁও এলাকায় চাঁদাবাজি করতে গিয়ে গণপিটুনির শিকার হয়। তাকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

অভিযোগ আছে, এই মুন্না আমিন জামায়াতে ইসলামীর চট্টগ্রাম নগরীর সাবেক আমির শাহজাহান চৌধুরীর নাম ভাঙিয়ে এলাকায় চাঁদাবাজি করে। কাউকে মামলায় ঢুকিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে, আবার কাউকে মামলা থেকে বাঁচানোর লোভ দেখিয়ে নানা কৌশলে চাঁদাবাজি করে আসছে। চান্দগাঁও এলাকায় একটি স্কুল ও কলেজ কমিটির সভাপতির কাছেও জামায়াত নেতার নাম ভাঙিয়ে চাঁদা দাবি করে মুন্না আমিন। ওই ঘটনায় স্কুলের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে চান্দগাঁও থানায় জিডি করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম নগর জামায়াতের সাবেক আমির শাহজাহান চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, ‘এই নামে আমি কাউকে চিনি না। কোনো দিন নামও শুনিনি।’

চট্টগ্রামের কালুরঘাট শিল্প এলাকায় চলছে বেপরোয়া চাঁদাবাজি। আগে আওয়ামী লীগ নামধারী নেতাকর্মীরা এসব অপকর্মে জড়িত থাকলেও তাদের অনেকে এলাকা ছাড়া। এখন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নাম ভাঙিয়ে চলছে চাঁদাবাজি। আবার অনেকে আগে আওয়ামী লীগের নামে চাঁদাবাজি করলেও এখন তাদের কেউ কেউ জার্সি বদল করে বিএনপির নামে করছে চাঁদাবাজি। এই চাঁদাবাজি নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন গ্রুপ ও উপগ্রুপ। গ্রুপগুলোর মধ্যে প্রতিনিয়তই ঘটছে সংঘাত-সংঘর্ষ। চাঁদাবাজদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ওইসব এলাকার বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছরের সফল আন্দোলনের কারণে মূলত ‘বৈষম্যবিরোধী’ শব্দটা মানুষের মনে গেঁথে গেছে। আর এটিকে পুঁজি করে সুযোগসন্ধানী চক্র নৈরাজ্য চালাচ্ছে। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূল সংগঠনেরও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

Lading . . .