Advertisement

লরি উলটে পড়ল প্রাইভেটকারে ৪ জন নিহত

যুগান্তর

প্রকাশ: ২৩ আগস্ট, ২০২৫

ছবি: যুগান্তর
ছবি: যুগান্তর

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলায় প্রাইভেট কারের ওপর লরি উলটে পড়ে এক পরিবারের ৪ জন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড ইউটার্নে এ দুর্ঘটনা ঘটে। একই সময় লরি পড়ে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকসহ তিনজন আহত হয়েছেন। এদিকে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে প্রাইভেটকারচাপায় প্রাণ গেল মোটরসাইকেলের তিন আরোহীর। বৃহস্পতিবার রাতে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার নিমতলা চালতিপাড়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

কুমিল্লায় নিহতরা হলেন-জেলার বরুড়া উপজেলার পয়ালগাছা হোসেনপুর গ্রামের মোহাম্মদ ওমর আলী (৭২), তার স্ত্রী নুরজাহান বেগম (৬২) এবং তাদের ছেলে আবুল হাশেম স্বপন (৫২) ও আবুল কাশেম মামুন (৪২)। প্রাইভেটকারটি চালাচ্ছিলেন আবুল হাশেম।

উদ্ধারকারী পুলিশের সদস্য সাইফুল ইসলাম জানান, মহাসড়কের বিশ্বরোড ইউটার্নে ঢাকামুখী লেনে একটি যাত্রীবাহী বাস, একটি প্রাইভেটকার ও একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা উলটো পথে এসে রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় সিমেন্টবোঝাই লরিটি ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। বাসকে পাশ কাটাতে গিয়ে লরিটি উলটে যায়। এ সময় বাসের পেছনে থাকা প্রাইভেটকার ও একটি সিএনজি অটোরিকশার ওপর পড়ে লরিটি। এতে দুমড়ে-মুচড়ে যায় প্রাইভেট কারটি। ঘটনাস্থলেই মারা যান চালকসহ চার যাত্রী। এছাড়া সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক ও দুই যাত্রী গুরুতর আহত হন। তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, বিকট শব্দ শুনে দৌড়ে এসে দেখি প্রাইভেটকার লরির নিচে। একটি সিএনজিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটির চালক ও দুই যাত্রীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠাই। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে উদ্ধার তৎপরতা চালায়। তিনি বলেন, পদুয়ার বাজার বিশ্বরোডের এই ইউটার্নটি একটি মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এখানে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতের স্বজন সুমন বলেন, আমার চাচা ওমর আলী তার স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে ঢাকার শ্যামলী থেকে কুমিল্লার বাড়িতে ফিরছিলেন। চাচাতো ভাই আবুল কাশেম মামুন ব্যাংক এশিয়ার প্রিন্সিপাল অফিসার। বৃহস্পতিবার সে আমাকে ফোনে কল দিয়ে বলেছিল, দোস্ত তোর কী লাগবে, অনেকদিন পর বাড়িতে আসতেছি। আমি কল্পনাও করতে পারছি না তারা আর পৃথিবীতে নেই। আত্মীয়স্বজন সবাই শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে। ময়নামতী হাইওয়ে থানা পুলিশ শুক্রবার সন্ধ্যা পোনে ৭টায় আমাদের কাছে লাশ হস্তান্তর করেছে। রাতেই বরুড়ার হোসেনপুরে তাদের দাফন করা হবে।

ময়নামতী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল বাহার মজুমদার বলেন, পুলিশ দুর্ঘটনাকবলিত প্রাইভেটকারটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে গেছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।

মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে প্রাণ গেল মোটরসাইকেলের ৩ আরোহীর : সিরাজদিখান (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে এক্সপ্রেসওয়ের সিরাজদিখান উপজেলার নিমতলা চালতিপাড়ায় একটি প্রাইভেটকার মোটরসাইকেলকে চাপা দেয়। এতে মোটরসাইকেলের তিন আরোহী নিহত হন। তারা হলেন-আওলাদ হোসেন (২৩), হাবিল (২২) ও কাইয়ুম (২২)। একই সময় ইমন নামে আরেক আরোহী গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হতাহতরা সিরাজদিখানের রশুনিয়া ইউনিয়নের খিলাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।

স্থানীয়রা জানান, চার যুবক মোটরসাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন। বৃষ্টির কারণে সড়ক পিচ্ছিল ছিল। একপর্যায়ে মোটরসাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের সার্ভিস লেনে পড়ে যায়। একই সময় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি প্রাইভেটকার তাদের চাপা দিয়ে চলে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই আওলাদ ও হাবিল মারা যান। আহত কাইয়ুম ও ইমনকে উদ্ধার করে নিমতলা আইডিয়াল ক্লিনিকে নিলে চিকিৎসক কাইয়ুমকে মৃত ঘোষণা করেন।

শ্রীনগর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার দেওয়ান আজাদ হোসেন জানান, খবর পেয়ে তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে হতাহতদের উদ্ধার করেন।

কুমিল্লায় ৩০ কিলোমিটার যানজট : কুমিল্লায় মহাসড়ক ৪ ঘণ্টা বন্ধ থাকায় ৩০ কিলোমিটার যানজটে চরম দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন অসংখ্য যাত্রী। শুক্রবার দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার পদুয়ার বাজার এলাকায় হোটেল নুরজাহানে উলটোপথে কন্টেইনারবাহী কাভার্ডভ্যানের নিচে পড়ে প্রাইভেটকারের চালকসহ ৪ জন নিহত হয়। এ ঘটনায় মহাসড়কে প্রায় ৪ ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। এতে দেশের প্রধান এ মহাসড়কের দুই পাশে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

নোয়াখালী থেকে ঢাকা বিমানবন্দরগামী সৌদি প্রবাসী আমীর হোসেন বলেন, যানজটে আমার অনেক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। আমি হয়তো ফ্লাইট মিস করতে পারি। ময়নামতি হাইওয়ে থানার ওসি ইকবাল বাহার বলেন, হাইওয়ে পুলিশের ক্রেনগুলোর ধারণক্ষমতা কম। দুর্ঘটনাকবলিত কাভার্ডভ্যানটি বেশি ওজনের হওয়ায় উদ্ধার কাজ চালাতে বেশি ধারণক্ষমতার ক্রেন ভাড়া করে আনতে হয়। এ কারণে উদ্ধার কাজ বিলম্ব হয়েছে। আমরা মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে কাজ করছি।

এদিকে দুর্ঘটনার পর লাশ উদ্ধার এবং যানবাহনগুলোকে অপসারণ করতে যৌথ তৎপরতা শুরু করে হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস। যৌথ তৎপরতায় উদ্ধার কাজ শুরু হলেও দুটি হেভি ক্রেনের সাহায্যে ৫ ঘণ্টা পর দুর্ঘটনাকবলিত কাভার্ডভ্যানটি সরাতে সক্ষম হয়। এদিকে দুর্ঘটনার পর পর মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে কাজ শুরু করে হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যবৃন্দ।

আরও পড়ুন

Lading . . .