পরকীয়ায় সাড়া না দেওয়ায় যুবককে হত্যার দাবি পরিবারের
প্রকাশ: ১৭ আগস্ট, ২০২৫

বন্ধুর স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে সাড়া না দেওয়ায় নোয়াখালী সদর উপজেলার আন্ডারচর ইউনিয়নের কাজিরচর গ্রামের মো. মাহফুজকে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশের কাছে এমনটাই দাবি করেছেন নিহতের পরিবারের সদস্যরা।
এর আগে শনিবার উপজেলার কাজির চর গ্রামের হাসমত উল্যার বাড়ির ছায়েদুল হকের ঘর থেকে মাহফুজের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত মো. মাহফুজ (২৫) উপজেলার আন্ডারচর ইউনিয়নের কাজির চর গ্রামের মো. ছায়েদুল হকের ছেলে। তিনি পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি ছিলেন।
রোববার (১৭ আগস্ট) দুপুরে সরেজমিন গেলে নিহতের চাচা মো. মাফুউল্যা বলেন, আমার ভাতিজা মাহফুজের সঙ্গে প্রতিবেশী জয়নাল আবেদীনের ছেলে সোহাগ ও সবুজের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব ছিল। তিন বছর পূর্বে সোহাগ সৌদি যাওয়ার সময় তার স্ত্রী ও পরিবারের খোঁজখবর রাখার জন্য বন্ধু মাহফুজকে অনুরোধ করে যান। সোহাগ বিদেশ পাড়ি দেওয়ার পর মাহফুজ ও সোহাগের পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। স্বামী বিদেশ যাওয়ার পর থেকে সোহাগের স্ত্রী আছমা আক্তার টিকটক করতে শুরু করেন। এ নিয়ে তাদের পরিবারে একাধিকবার কলহ তৈরি হয়।
তিনি বলেন, সম্প্রতি সোহাগের স্ত্রী আছমা আক্তার আমার ভাতিজা মাহফুজের ইমোতে তার করা টিকটক ও বিভিন্ন ভিডিও পাঠাতে থাকেন। গত ৫ দিন আগে মাহফুজের ছোট বোন তাজিনা আক্তার মাহফুজের মোবাইল ফোনে ওই ভিডিওগুলো দেখে পরিবারের সদস্যদের জানান।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, শুক্রবার সকালে মাহফুজের বাবা ছায়েদুল হক সোহাগদের বাড়ি গিয়ে বিষয়টি সোহাগের বাবা-মাকে জানান এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ থেকে পুত্রবধূকে বিরত রাখতে বলেন। একই দিন বিকালে সোহাগের স্ত্রী আছমা আক্তার ও ভগিনীপতি শাহীন, ভাই সবুজ প্রতিবেশী আবদুর রহমানের বাড়িতে গিয়ে মাহফুজের বাবা-মাকে গালমন্দ করে তাদের ছেলে মাহফুজকে হাত-পা ভেঙে হত্যার হুমকি দেন। তখন আছমা আক্তার স্বামী সোহাগকে ভিডিও কল করে এসব কথা বলেন। পরে ভিডিও কলে স্বামী সোহাগও মাহফুজকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।
নিহতের চাচা মো. আকবর হোসেন শিপন বলেন, শনিবার রাতে আমার ভাতিজা মাহফুজ বাড়ি না ফেরায় পরিবারের লোকজন বিভিন্ন জায়গায় তাকে খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। একপর্যায়ে তার মা হাজেরা বেগম বাড়ির উত্তর দিকে রান্নাঘরের পেছনে পেয়ারা গাছের সঙ্গে মাহফুজকে বাঁধা অবস্থায় দেখে চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন গিয়ে তাকে উদ্ধার করে মৃত অবস্থায় দেখে পুলিশে খবর দেন। তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে।
মাহফুজের বাবা ছায়েদুল হক বলেন, আমার ছেলের সঙ্গে তার বন্ধু সোহাগের ভালো সম্পর্ক ছিল; কিন্তু সোহাগের স্ত্রী আছমা আমার ছেলে মাহফুজকে প্রায় কুপ্রস্তাব দিত। পরকীয়া করতে চাইত, খারাপ ভিডিও পাঠাত। এসব বিষয় মাহফুজ তার ভাবিকে একাধিকবার জানিয়েছিল। এ নিয়ে আমরা প্রতিবাদ করায় শুক্রবার রাতে সোহাগের দুলাভাই শাহীনের নেতৃত্বে তার স্ত্রী আছমা, ভাই সবুজসহ সংঘবদ্ধ দল আমার ছেলেকে হত্যা করে আমাদের বাড়ির রান্নাঘরের পেছনের একটি ছোট্ট পেয়ারা গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়ে তারা পালিয়ে যায়। মাহফুজ হত্যার সঠিক তদন্তপূর্বক বিচার দাবি করেন তার বাবা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে প্রবাসী সোহাগের স্ত্রীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
সুধারাম থানার ওসি মো. কামরুল ইসলাম বলেন, মৃত্যুর ঘটনা রহস্যজনক হওয়ায় সুরতহাল প্রতিবদেন করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে এবং পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।