Advertisement

চট্টগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত পাঁচ, স্বজনদের আহাজারি

প্রথম আলো

প্রকাশ: ১৮ আগস্ট, ২০২৫

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে আহাজারি করছেন নিহতদের স্বজনেরা। আজ সকালে তোলাছবি: জুয়েল শীল
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে আহাজারি করছেন নিহতদের স্বজনেরা। আজ সকালে তোলাছবি: জুয়েল শীল

‘পরীক্ষা দিতে ছেলেটা স্কুলে গেছে, ও তো কিছু জানে না। আমার দুই বছরের মেয়েটা খালি বাবারে খোঁজে, আমি তারে কী বলব।’ আজ সোমবার সকাল ১০টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে আহাজারি করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন টকি রানি দাস। ভোরে চট্টগ্রাম নগরের সিটি গেট এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তাঁর স্বামী অজিত দাসসহ পাঁচজনের।

স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে সকালে হাসপাতালে ছুটে আসেন টকি রানি। লাশের অপেক্ষায় হাসপাতালের সামনে বসে আহাজারি করছিলেন তিনি। স্বজনদের কয়েকজন তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করলেও তাঁর আহাজারি থামছিল না।

দেড় বছর বয়সে বাবাকে হারাইছে। আমি তারে কোলে-পিঠে করে মানুষ করছি, বিয়ে করাইছি। এখন ছেলেটা আমারে ছাইড়া চলে গেল। আমি কীভাবে থাকব, তার বউটা কীভাবে বাঁচবে।
রাজবালা দাস, নিহত রনি দাসের মা

টকি রানি জানান, তাঁর তিন ছেলে-মেয়ে। বড় মেয়ে নবম শ্রেণিতে এবং ছেলেটি পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। সবার ছোট দুই বছরের মেয়েটি। তাঁর স্বামী জেলে। গতকাল রাতে স্বামী বাড়ি থেকে বের হন। কোথায় যাচ্ছেন সে বিষয়ে কিছু বলে যাননি। এরপর সকালে স্বামীর মৃত্যুর খবর শোনেন।

ছেলে-মেয়েদের প্রসঙ্গ টেনে বিলাপ করতে থাকেন টকি রানি। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়েটা বাবারে ছাড়া একটা সেকেন্ড থাকতে চায় না। সকালেও ঘুম থেকে উঠে বাবারে খুঁজতেছে। আমি তারে কিছুই বলতে পারি নাই। আমি আমার ছেলে-মেয়েদের নিয়ে এখন কই যাব, কীভাবে বাঁচব, কীভাবে চলব।’

আজ ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে নগরের সিটি গেট এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটি কাভার্ড ভ্যানের পেছনে ধাক্কা দেয় একটি পিকআপ ভ্যান। এ সময় অজিত দাসসহ পিকআপ ভ্যানে থাকা পাঁচজন নিহত হন। নিহত অন্য চারজন হলেন আকাশ দাস (২৬), রনি দাস (২৫), জুয়েল দাস (১৮) ও মো. সোহাগ (৩২)। তাঁরা সবাই চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বাসিন্দা। এর মধ্যে সোহাগ পিকআপ ভ্যানের চালক।

সকালে টকি রানি যেখানে বিলাপ করছিলেন তার অদূরেই কান্নাকাটি করতে দেখা যায় রনি দাসের মা রাজবালা দাসকে। তিনি জানান, তাঁর ছেলে সিটি করপোরেশনে অস্থায়ীভাবে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। এর বাইরে মাছ ধরেও উপার্জন করতেন। গতকাল রাতে মাছ ধরতে যাওয়ার কথা বলে ঘর থেকে বের হয়েছেন রনি দাস। এরপর সকালে সড়ক দুর্ঘটনায় ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়েছেন।

রনি দাসের স্ত্রী পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা জানিয়ে রাজবালা দাস বলেন, ‘দেড় বছর বয়সে বাবাকে হারাইছে। আমি তারে কোলে-পিঠে করে মানুষ করছি, বিয়ে করাইছি। এখন ছেলেটা আমারে ছাইড়া চলে গেল। আমি কীভাবে থাকব, তার বউটা কীভাবে বাঁচবে।’

হাসপাতালে ছেলে জুয়েল দাসের লাশের খোঁজে এসেছিলেন গোপন দাস। তিনি বলেন, মনসাপূজায় বন্ধুদের সঙ্গে বের হয়েছিল জুয়েল। বের হওয়ার সময় ১০০ টাকা নিয়ে গেছে। ছেলেকে দ্রুত ফিরতে বলেছিলেন তিনি। কিন্তু সকালে ছেলের মৃত্যুর খবর পান।

পুলিশ জানায়, পিকআপ ভ্যানটিতে আরও চারজন ছিলেন। তাঁরা গুরুতর আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পরিবারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্ঘটনার বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সরেজমিনে আজ সকাল ৮টার দিকে নগরের সিটি গেট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দুর্ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে পিকআপ ভ্যানটি। এর সামনের অংশ দুমড়েমুচড়ে গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পিকআপ ভ্যানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কাভার্ড ভ্যানের নিচে ঢুকে পড়ে। ফলে চালকসহ সামনে থাকা তিনজন ঘটনাস্থলেই মারা যান। পরে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করা হয়। এরপর ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে। ভোরে মাছ আনার জন্য পিকআপ ভ্যানটি সীতাকুণ্ড থেকে চট্টগ্রাম নগরের ফিশারিঘাটের দিকে যাচ্ছিল বলে জানায় পুলিশ।

চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘দুর্ঘটনায় পিকআপ ভ্যানটি দুমড়েমুচড়ে গেছে। আমরা ঘটনাস্থল থেকে তিনজনের লাশ উদ্ধার করেছি। বাকিরা হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা গেছেন।’

নগরের আকবর শাহ থানার উপপরিদর্শক মো. সাজ্জাদ হোসেন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, দুর্ঘটনাকবলিত পিকআপ ভ্যানটি ঘটনাস্থলের পাশে রয়েছে। এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যু মামলা করা হবে।

Lading . . .