তাজিংডং পাহাড়ের পথে পথে রোমাঞ্চের হাতছানি
প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবান জেলায় রয়েছে দেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গসহ অসংখ্য পাহাড়ের চূড়া। এর মধ্যে অন্যতম হলো তাজিংডং বা বিজয় পাহাড় চূড়া। তাজিংডং ভ্রমণ অত্যন্ত অ্যাডভেঞ্চারপূর্ণ। পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথে পথে রোমাঞ্চের হাতছানি।
স্থানীয় পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ভাষায় ‘তাজিং’ অর্থ বড় এবং ‘ডং’ অর্থ পাহাড়। এই দুটি শব্দ থেকে তাজিংডং পর্বতের নামকরণ। সরকারিভাবে এটি ‘তাজিংডং বিজয়’ নামে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ হিসাবে স্বীকৃত। তাজিংডং দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় বান্দরবানের রুমা উপজেলার রেমাক্রী পাংশা ইউনিয়নে সাইচল পর্বতসারিতে অবস্থিত। এটি রুমা সদর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে। তবে থানচি উপজেলা সদর থেকে বাকলাই সীমান্ত সড়কপথে মাত্র ২২ কিলোমিটার। খুব সহজেই থানচি থেকে যাওয়া যায়। সরকারি হিসাবে তাজিংডং পর্বতের উচ্চতা ১,২৮০ মিটার বা ৪১৯৮.৪ ফুট। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় চার হাজার ৩০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত।
স্থানীয় বাসিন্দা মংব্রাচিং মারমা বলেন, থানচি সদর থেকে সীমান্ত সড়কপথে চান্দের গাড়ি বা মোটরসাইকেলে করে ঘণ্টা দেড়েক সময় লাগে তাজিংডং বিজয় পাহাড়ের কাছাকাছি মূল সড়কে পৌঁছাতে। সীমান্ত সড়কের ২২ কিলোমিটার পয়েন্ট থেকে ৩০-৪০ মিনিটের পায়ে হাঁটা পথ। সীমান্ত সড়কটি পর্বতচূড়া তাজিংডং ভ্রমণ সহজ করে তোলায় ভ্রমণপিপাসুদের ভিড় আগের চেয়ে বেড়েছে। তবে বর্ষাকালে তাজিংডং পাহাড় ভ্রমণ বিপজ্জনক।
স্থানীয় ট্যুরিস্ট গাইড সমিতির সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ বলেন, তাজিংডং ভ্রমণে যাওয়ার পথেই দেখা মেলে বিভিন্ন পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর গ্রাম। পাহাড়ের মানুষের জীবন-জীবিকা, সংস্কৃতি ও জীববৈচিত্র্য। একটা সময় তাজিংডং বিজয় পর্বতে পৌঁছানো দুরূহ হলেও বর্তমানে যোগাযোগ সহজ হওয়ায় প্রচুর পর্যটক প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগের জন্য এখানে আসেন। শুধু তাজিংডং নয়, প্রকৃতির সৌন্দর্য ছড়িয়ে আছে আশপাশেও। তাজিংডং চূড়া থেকে সাকা হাফং পর্বত দেখা যায়। এই পর্বতের এক পাশে বাংলাদেশ, আরেক পাশে মিয়ানমার। পর্যটকের সংখ্যা থানচিতে আগের চেয়ে কয়েক গুণ বেড়েছে।
বেড়াতে আসা পর্যটক হুমায়রা মিম ও সাব্বির সজিব বলেন, ‘চিম্বুকের পর থেকে সীমান্ত সড়কের তাজিংডং পাহাড় চূড়া ভ্রমণের ২২ কিলো. পয়েন্ট পর্যন্ত সড়কপথের ভ্রমণটি অ্যাডভেঞ্চারপূর্ণ। দারুণ রোমাঞ্চকর। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ বেয়ে উপরের দিকে যতই উঠা যায়, ততই মুগ্ধতা ছড়িয়ে পড়ে। কখনো আকাশের দিকে উঠতে থাকে, আবার কখনো নিচে নামতে থাকে। মাঝেমধ্যে পাহাড়ের বাঁকে খুব সামনের পথও দেখা যায় না। মনে হয়, এই বুঝি পাহাড়ের খাদে পড়ে যাচ্ছি। পাহাড় কেটে বানানো রাস্তা, নিচের দিকে তাকালে গা ছমছম করে। এতটা নিচে যে কিছুদূর পর আর দেখা যায় না মেঘের কারণে। শুধু পাহাড় আর পাহাড়। পাহাড়গুলো মেঘের চাদরে ঢাকা। মেঘ পাহাড়ের সে-কি আলিঙ্গন! ১১ জনের একটি টিম আমরা ঢাকা থেকে ঘুরতে এসেছি। রোমাঞ্চে ভরপুর ভ্রমণটি সারাজীবন মনে থাকবে সবার।’
থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ-আল-ফয়সাল বলেন, থানচিতে পর্যটকদের আরামদায়ক ও নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সম্মিলিতভাবেই কাজ করছে। এখানে পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে। তাজিংডং পাহাড় চূড়া দর্শনের পথটি বর্তমানে অনেক সহজ হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত নদীপথে রেমাক্রী তিন্দু ও সড়কপথে তমাতঙ্গী পর্যন্ত ভ্রমণের অনুমতি রয়েছে সরকারিভাবে। খুব শিগগিরই অনন্য দর্শনীয় স্থানগুলোও ভ্রমণের জন্য খুলে দেওয়া হবে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছি।